ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০১:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ইসলামে শুক্রবার অর্থাৎ জুমার দিনটি মুসলমানদের জন্য বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এই দিনকে ‘সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত এক হাদীসে তিনি বলেন, ‘সূর্য যেদিন উদিত হয়েছে, তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো শুক্রবার।’[সহীহ মুসলিম: ৮৫৪]
এই দিন মুসলিম জীবনে আনে অফুরন্ত বরকত ও রহমতের বারতা। রয়েছে জুমার নামাজ, দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত, এবং নেক আমলের বহুবিধ সুযোগ। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সূরা কাহাফ তিলাওয়াত, যা নবীজি (সা.) বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন।
জুমার ফজিলত ও সূরা কাহাফের মর্যাদা
সূরা কাহাফ কোরআনের ১৮ নম্বর সূরা। এতে রয়েছে ১১০ আয়াত এবং এটি মক্কায় অবতীর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত একটি নূর (আলোকরশ্মি) বিকিরণ করবে। [বায়হাকী, সহীহ আল-জামি: ৬৪৭০]’
সূরা কাহাফের চারটি গুরুত্বপূর্ণ কাহিনি ও শিক্ষা
সূরাটিতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও শিক্ষণীয় বার্তা তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো- গুহাবাসী যুবকদের কাহিনি, হযরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা, ন্যায়পরায়ণ শাসক যুলকারনাইনের নেতৃত্ব এবং দাজ্জালের ফিতনার সতর্কতা।
আশহাবে কাহাফ
আশহাবে কাহাফের কাহিনিতে ঈমান রক্ষায় আত্মত্যাগ, ধৈর্য এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসার শিক্ষা রয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “তুমি কি ভেবেছ, গুহাবাসী ও আর-রাকীম আমাদের নিদর্শনসমূহের মধ্যে আশ্চর্য এক নিদর্শন?” [সূরা কাহাফ: ৯] একদল যুবক অত্যাচারী শাসকের ভয়ে ঈমান রক্ষার্থে গুহায় আশ্রয় নেয় এবং আল্লাহ তাদের ৩০০ বছর ঘুম পাড়িয়ে রাখেন। এরপর তাদের জাগ্রত করে আল্লাহ তাঁর কুদরতের নিদর্শন মানুষের সামনে তুলে ধরেন।
মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)
হযরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে, আল্লাহর হিকমত মানুষের সীমিত বোধের বাইরে। মুসা (আ.) এমন কিছু ঘটনার সাক্ষী হন, যা তার কাছে তাৎক্ষণিকভাবে অন্যায় মনে হলেও পরে বোঝা যায়, তা ছিল আল্লাহর মহান পরিকল্পনার অংশ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি তার কাছে আমার পক্ষ থেকে দয়া দান করেছি এবং তাকে আমার কাছ থেকে জ্ঞান শিখিয়েছি।’ [সূরা কাহাফ: ৬৫]
যুলকারনাইনের ন্যায়পরায়ণ শাসন
যুলকারনাইনের কাহিনিতে উঠে এসেছে ন্যায়পরায়ণ নেতৃত্বের মূর্ত প্রতিচ্ছবি। তিনি পূর্ব-পশ্চিমে ভ্রমণ করে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে ইয়াজুজ-মাজুজের উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং তাকে সবকিছুর জন্য উপায় দিয়েছিলাম।’ [সূরা কাহাফ: ৮৪] এই শিক্ষা দেয় যে নেতৃত্ব মানে কেবল ক্ষমতা নয়, বরং জনগণের কল্যাণ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা।
দাজ্জালের ফিতনা থেকে সতর্কতা
সূরা কাহাফে সরাসরি দাজ্জালের নাম উল্লেখ না থাকলেও, হাদীসের আলোকে জানা যায় যে, এই সূরা দাজ্জালের ফিতনা থেকে সুরক্ষার মাধ্যম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৮০৯) অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘যে সূরা কাহাফের শেষ দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সেও দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (সহীহ মুসলিম)
সূরা কাহাফ শুধু একটি সূরাই নয়, বরং মুমিনের জন্য একটি আধ্যাত্মিক ঢাল, যা ফিতনা ও বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করে। প্রতিটি জুমার দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত, নূর ও হেফাজতের আশ্রয় নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ অভ্যাস আমাদের ঈমানকে করবে দৃঢ়, অন্তরকে করবে প্রজ্ঞাময়, আর জীবনকে পরিচালিত করবে সত্য ও ন্যায়ের পথে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.