মাজাহারুল ইসলাম
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫ ০৯:০০ এএম
ছবি: সংগৃহীত
জুলাই সনদ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে রাজনৈতিক মাঠ, জনগণের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে পিআর পদ্ধতি। কারণ, জুলাই সনদ ও পিআর নিয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এমনটাই ভাবছেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) তোড়জোড় করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্নের দিকে এগুচ্ছে। পাশাপাশি বিএনপিসহ দেশের সিংহভাগ রাজনৈতিক দল স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচনের দিকে হাঁটছে। ইসির ঘোষিত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ৪২টি রাজনৈতিক দল বৈঠক করেছেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ আমলে নির্বাচন বর্জন করা আরও ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শিগগিরই বৈঠক করার কথা রয়েছে তারেক রহমানের। গোটা দেশ যখন নির্বাচন মুখী। অপরদিকে, জামায়াত ইসলামী ও নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নীরব রয়েছে। দল দুটির নীরবতায় জনমনে প্রশ্ন জেগেছে- কি হচ্ছে, কি হতে যাচ্ছে? জামায়াত ও এনসিপির সূত্রে জানা গেছে, দল দুটি জুলাই সনদের দিকেই কড়া নজর রাখছে জামায়াত ইসলামী ও এনসিপি।
জুলাই সনদ ঘোষণা এবং তা ঘিরে প্রতিক্রিয়ার মাত্রা ও ধরনের ওপরই দেশের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির চিত্র নির্ভর করছে- এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, পিআর, সংবিধান সংস্কারসহ বেশ কিছু মৌলিক ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে মতানক্য রয়েছে জামায়াত ও এনসিপির। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে আন্দোলনে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে জামায়াত ইসলামীর। পাশাপাশি মৌলিক সংস্কার, নতুন সংবিধান আর হাসিনার বিচার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না এনসিপি। অর্থাৎ জুলাই সনদে জামায়াত-এনসিপির প্রস্তাবসমূহ প্রতিফলিত না হলে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে রাজনৈতিক মাঠ।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দুই পর্বের আলোচনায় ৮২টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা আছে।
জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার দুই বছরের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি একমত। তবে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ আরও কিছু দলের এ ক্ষেত্রে আপত্তি আছে। তারা মনে করে, শুধু অঙ্গীকার থাকলে হবে না; জুলাই সনদকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে হবে।
গত রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ডা. তাহের সাংবাদিকদের বলেছেন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে আনুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামারও হুমকি দেন।
ডা. তাহের আরও বলেন, সংসদে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে ভোটের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে পিআর হতে হবে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে। সেই ইস্যুতে আমরা আন্দোলন করবো। কারণ হচ্ছে, ৫৪ বছরের নির্বাচনের পদ্ধতিতে আমরা দেখেছি এখানে ফেয়ার ইলেকশন কখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
ফেব্রুয়ারির ফার্স্ট উইকে নির্বাচনে আপত্তি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূলে তৈরি হয়নি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আহ্বান জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার পরিপূর্ণ করার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য তো সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি সেটা হচ্ছে একটা ক্রেডিবল ফেয়ার ফ্রি পার্টিসিপেটরি ইলেকশন। এটাই গণতন্ত্রের দাবি। এদেশের মানুষের দাবি। গত তিনটি পরপর নির্বাচনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মানুষের ভেতরে এখনও সে শঙ্কাটা কাটেনি যে নির্বাচন ফেয়ার হবে কি না।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না এনসিপি। নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, এখন যে সংবিধান রয়েছে, সেটি আওয়ামী সংবিধান। এটি সংস্কার করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, মৌলিক সংস্কার, নতুন সংবিধান আর হাসিনার বিচার ছাড়া নির্বাচন হলে এনসিপি অংশ নেবে না। আর সেই নির্বাচন দেশের মানুষও মেনে নেবে না।
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, এত মানুষের রক্ত, এত মানুষের আত্মত্যাগের জুলাই আন্দোলন কেবলমাত্র ক্ষমতার পালাবদলের জন্য, তা আমরা মেনে নেব না।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বলতে চাই, যতগুলো অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন, তার একটি হলো নির্বাচন। শুধু নির্বাচন দেওয়া আপনাদের অ্যাসাইনমেন্ট নয়। সংস্কার, নতুন সংবিধান আর হাসিনার বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়।
ভোরের আকাশ/এসএইচ