ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫ ০৭:৪৩ পিএম
সংগৃহীত ছবি
প্রশাসনের মধ্যে ফ্যাসিবাদী শক্তি নানাভাবে ঘাপটি মেরে বসে আছে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জুলাই সনদে যে সুপারিশ আসবে, সেখানে যদি আইন বা সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়, সেটা নির্বাচিত সংসদ করবে।
রোববার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সামনে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে রিকশা ও ভ্যানচালকদের রেইনকোট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আজকে নানাভাবে আমাদের সমাজের একেবারে মাটির গভীরে ফ্যাসিবাদ অবস্থান করছে অবৈধ টাকা ও অস্ত্র নিয়ে। সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। তাই অবিলম্বে নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী বলেন, এই প্রশাসনের মধ্যে ফ্যাসিবাদী শক্তি নানাভাবে ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা সুযোগ পেলেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করবে। যারা রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন, তারা প্রত্যেকেই দেখছেন- আজকে সচিবালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় তারা নিজেদের উদ্দেশ্য নিয়ে বসে আছে এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টির কাজ করছে।
মানুষ বেকার থাকলে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুর্ভিক্ষের আলামত তৈরি হলে ‘দু-একজন উপদেষ্টা হয়তো হাঁসের মাংস খেতে পারবেন যেকোনো জায়গায়। কিন্তু জনগণ আর হাঁসের মাংস খেতে পাবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব।
তিনি বলেন, একের পর এক কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যদি মানুষের কর্মসংস্থান না থাকে, তাহলে দুর্ভিক্ষের আলামত তৈরি হবে। আপনাদের দু–একজন উপদেষ্টা হয়তো হাঁসের মাংস খেতে পারবেন, কিন্তু জনগণ তো আর তা খেতে পারবে না। তাই এমন পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নজর দিতে হবে। গার্মেন্টস সেক্টর থেকে এক লাখ শ্রমিকের চাকরি চলে গেছে। কারণ অনেক ফ্যাসিবাদের দোসর মিল-কারখানার মালিক। আমাদের দল থেকে বারবার বলা হয়েছে, মিল-কারখানা যেন বন্ধ না হয়, প্রয়োজনে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
জুলাই সনদের ব্যাপারে আইন সংশোধন বা সংবিধান সংশোধনের প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, আপনারা জুলাই সনদের বিষয়ে কথা বলছেন। জুলাই সনদে যে সুপারিশ আসবে, সেখানে যদি আইন বা সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়, সেটা নির্বাচিত সংসদ করবে। একটি রাজনৈতিক দল বলছে আগে গণভোট দিতে হবে। কিন্তু কেন? মূলনীতিতে যদি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, সংবিধানের বিধান অনুযায়ী তা সংশোধন করা যাবে। কিন্তু সেটা করবে জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্ট। শেখ হাসিনা যেমন গায়ের জোরে চালিয়েছে- প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তার মতের মিল হয়নি, তাই গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের দিয়ে পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। সেই নিয়ম আমরা তো চালু করতে পারি না। আগে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার তৈরি করুন, তারা গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করবে। সেটা তাদের দায়িত্ব।
রিজভী বলেন, পাঁচই আগস্টের পর আমরা যে অর্জন পেয়েছি, সেই অর্জন আমাদের ধরে রাখতে হবে। কারণ ১৫-১৬ বছর এক নিষ্ঠুর ও দানবীয় সরকারের রোশানালে মানুষ নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্যে দিন-রাত কাটিয়েছে। সেই দুর্বিষহ দুঃস্বপ্ন যাতে আর ফিরে না আসে, তার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি করে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার পথ যাতে সুগম না হয়। কারণ এই ১৫-১৬ বছরে জাতিকে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, সুখরঞ্জন বালি বলেছিলেন দেলোয়ার হোসেন সাঈদী কোনো অপরাধী নন। কিন্তু শেখ হাসিনা জোর করে সুখরঞ্জনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে, তাকে দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছে।
তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জ্বালাও-পোড়াও করেছে শেখ হাসিনা। কিন্তু ক্ষমতায় এসে নিজেই তা বাতিল করেছে। এটি দ্বিচারিতার স্পষ্ট উদাহরণ।
জিয়া পরিষদের সহ-সভাপতি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ।
ভোরের আকাশ/এসএইচ