ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫ ০৫:০৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
জনগণের অর্থ শেখ হাসিনা নিজের স্বার্থে খরচ করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘৩৬-জুলাই’ এর প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, গণ অধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নূর, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আব্দুল্লাহ, আরটিভির বার্তা প্রধান ইলিয়াস হোসেন, কবি রেজা উদ্দিন স্টালিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)’র সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, শিক্ষক মতিনুর রহমান প্রমুখ।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সব দ্রোহের সমষ্টিগত বহিঃপ্রকাশ হলো জুলাই আন্দোলন। ক্ষমতায় থাকাকালে জনগণের অর্থ নিজের স্বার্থে খরচ করেছিলেন শেখ হাসিনা। এতে মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল। জুলাই বিপ্লব একটি মহাকাব্যিক ঘটনা এবং নিহত, আহত ও অংশগ্রহণকারীরা সবাই ঐতিহাসিক চরিত্র।
অনুভূতিহীন কবি-সাহিত্যিক-অভিনয় শিল্পীদের ১৫ আগস্টে শোক প্রকাশ: তিনি বলেন, একটি দলের প্রতিষ্ঠাতার বই লেখার কারণে পুরস্কার হিসেবে সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তার পদ দিয়েছিল বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার। একই কায়দায় রানওয়ের পাশে ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছিল শিল্প-সংস্কৃতি জগতের তারকাদেরও। অনুভূতি শূন্য হয়ে যাওয়া তথাকথিত কবি, সাহিত্যিক ও অভিনয়শিল্পীরা ১৫ আগস্টে শোক জানিয়েছেন। আমার মনে হয়, বস্তুগত প্রাপ্তির লোভে তারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশের একাংশের কবি, সাহিত্যিক ও অভিনয়শিল্পী ১৫ আগস্ট উপলক্ষে শোক প্রকাশ করে নিজেদের অনুভূতিকে বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁর দাবি, বস্তুগত সুবিধা পাওয়ার আশায় এঁরা ফ্যাসিবাদী শক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। একটি দলের প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে বই লেখার পুরস্কারস্বরূপ বিগত সরকার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সর্বোচ্চ পদে পদোন্নতি দিয়েছে। একইভাবে শিল্প–সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেক তারকাকেও রানওয়ের পাশে ফ্ল্যাট ও মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়া হয়েছিল।
১৫ আগস্ট নিয়ে সেলিব্রেটিদের পোস্ট দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, অভিনয়শিল্পী ও মিডিয়ায় যুক্ত মানুষদের তো সবচেয়ে সংবেদনশীল হওয়ার কথা। অথচ যারা ‘পানি লাগবে পানি’ বলে গুলিবিদ্ধ বন্ধুর জন্য ছুটে গিয়েছিল, সেই দৃশ্য তাঁদের মনকে একটুও নাড়া দিল না। অথচ তাঁরা শোকের নামে পোস্ট দিচ্ছেন, নানা প্রশংসা করছেন। আসলে তাঁরা তাঁদের সেই অনুভূতির জায়গাটা বিসর্জন দিয়েছেন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও তৎকালীন ছাত্রনেতা ও বর্তমান বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর উদাহরণ টেনে বিএনপি নেতা বলেন, আন্দোলনের সময় তাঁদের ওপরও নির্যাতন চালানো হয়েছে। ডাকসুর ভিপির গায়ে হাত দিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারএটাই প্রমাণ করে তাদের মানসিকতা কতটা দমনমূলক। টুকু ছাত্রদলের সভাপতি ছিল। তার গায়েও হাত দেওয়া হয়েছে। সরকার দমন-পীড়ন থেকে কেউ রেহাই পায়নি।
জুলাই আন্দোলনকে “সব দ্রোহের সমষ্টিগত বহিঃপ্রকাশ” আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, গত ১৬ বছরের গুম, হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তরুণসমাজে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছিল, যার বিস্ফোরণ ঘটেছে জুলাইয়ে।
শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত একটি বইয়ের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, আমিও বিশ্বাস করতাম বইটি মুজিব সাহেব নিজে লিখেছেন। পরে দেখা গেল, এক পুলিশ কর্মকর্তা ও তাঁর সহকর্মীরা দায়িত্ব পেয়ে সেটি তৈরি করেছেন।
এর বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা, ফ্ল্যাট, প্লট। তিনি অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রের অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ কোটি টাকা। জনগণের টাকাকে শেখ হাসিনা দলের ও পরিবারের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। সেই বঞ্চনারই বহিঃপ্রকাশ হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থান।
ভোরের আকাশ/এসএইচ