নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫ ১১:৪৭ পিএম
“সত্য বলায় হামলা” অভিযোগ এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন, “কক্সবাজারে আমাদের নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সত্য উন্মোচন করেছেন বলেই আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।” তিনি জানান, বাঁশখালীতে এনসিপির এক সংগঠকের ওপর হামলা চালানো হয়েছে এবং ব্যানারে আগুন দেওয়া হয়েছে।
রবিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সন্ধ্যা ৬টায় নগরের বহদ্দারহাট থেকে শুরু হয় এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। পথিমধ্যে সাধারণ জনগণ তাদের অভিবাদন জানান।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা বিপ্লব উদ্যানে পৌঁছান। সেখানে নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাধা দিয়ে তারুণ্যের শক্তিকে থামানো যাবে না। বাধা যদি আসে, তবে লড়াই হবেই—এ লড়াইয়ে জয় আমাদের হতেই হবে।”
তিনি আরও বলেন, “চট্টগ্রাম ঐতিহাসিক সংগ্রামের শহর। এখান থেকেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই শহরের মানুষ বারবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে—হাবিলদার রজব আলী, মাস্টার দা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারদের মতো বীরেরা এখানে জন্ম নিয়েছেন।”
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর শুধু অর্থনীতির লাইফলাইন নয়, ইসলামী দাওয়াতের প্রাচীন কেন্দ্রও বটে। সুফি-সাধকেরা এখান দিয়েই এসেছেন এবং সাম্য-মানবিকতা ও সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়েছেন। আজ সেই চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা বলতে চাই, চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র হলে তা দেশের প্রতিটি কোণে প্রতিরোধের আগুন ছড়িয়ে পড়বে।”
তিনি চট্টগ্রামের ভাষায় স্লোগান দেন—“বউত দিন হাইয়ো, আর না হাইয়ো!”—যা নেতাকর্মীদের মধ্য উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে দেয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষকে বছরের পর বছর নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। পাসপোর্ট অফিস, শিক্ষাবোর্ড, থানা কিংবা সচিবালয়—সব জায়গায় হয়রানির শিকার হতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের মাঝে বাঙালি-অবাঙালি, সুন্নি-অসুন্নি বিভাজন করা হয়েছে—এখন এসব বিভেদ চলবে না। চট্টগ্রামের মানুষ ধর্মপ্রাণ, অতীতে ধর্মচর্চার জন্য তারা নিপীড়িত হয়েছেন—এখন সেটা আর চলবে না।”
এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “চট্টগ্রাম প্রতিরোধের শহর। ঢাকায় ১৬ জুলাই অভ্যুত্থান হলেও, চট্টগ্রাম তার আগেই প্রতিরোধ গড়েছে। স্বৈরাচারকে হটিয়েছি, এখন প্রয়োজন একটি সফল রাষ্ট্র গঠন। অতীতে যারা বাংলাদেশ শাসন করেছে তারা কেউ দিল্লিকে, কেউ লন্ডনকে সেকেন্ড হোম বানিয়েছে। কিন্তু এখনকার তরুণ প্রজন্মকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না—হাসিনাও পারেননি। এই প্রজন্মই নতুন বাংলাদেশ গড়বে।”
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা।
এর আগে কক্সবাজার ও বান্দরবান সফর শেষে শনিবার রাতেই এনসিপি নেতারা চট্টগ্রামের হোটেল সৈকতে অবস্থান নেন। রবিবার সকালে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে তারা চট্টগ্রামের ‘জুলাই শহীদ’ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
ভোরের আকাশ//হ.র