মাজাহারুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫ ০৭:৩৪ এএম
ছবি: সংগৃহীত
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণার মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পথ সুগম হচ্ছে বলে মনে করছেন দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। তবে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হচ্ছে দেশবিরোধী কুচক্রী মহল ও জুলাই অভ্যুত্থানে পরাজিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা। তাই ভোট বিরোধী চক্রের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি।
দলটির মতে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভোটের সময় উল্লেখ করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশে বিদ্যমান সব রাজনেতিক দল ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও সর্বগ্রহণযোগ্য ভোট অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও সরকার। গোটা জাতি এখন নির্বাচনমুখী। এমন সময়ই দেশে অস্থিরতা তৈরির মধ্যদিয়ে নির্বাচন বাধাগ্রস্থ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে কয়েকটি চক্র। তাই নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী বড় ধরনের কোন পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথে যাতে বড় কোন বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রেখে নেতাকর্মীদের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বজায় রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য প্রতিটি সভা-সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, নির্বাচনের ঘোষণা ইতিবাচক হলেও মাঠের রাজনীতিতে নির্বাচন ঘিরে সংশয় এখনো কাটেনি। বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন কঠিন হবে। এছাড়া পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসরা দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। সুযোগ পেলেই তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরা প্রতিনিয়ত দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছে। একটা অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ যেন সঠিকমতো না হয় সেজন্য ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে বলেও উল্লেখ করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। কেন্দ্রের নিদের্শে বিএনপির ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, জেলা ও বিভাগীয় কমিটিগুলোর মধ্য যেগুলোর কমিটি এখন হয়নি, সেগুলো সম্মেলনের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন করার পাশাপাশি সদস্য নবায়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। একইসঙ্গে তৃর্ণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সকল নেতাকর্মীরা দেশবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ দৃষ্টি রেখে চলছেন বলেও দলীয় সূত্রে জানা যায়।
লণ্ঠন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সম্প্রতি কয়েকটি জনসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষণা করেছেন রোজার আগেই, ফেব্রুয়ারির প্রধমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার যাত্রা পথে বর্তমানে আমরা ইতিহাসের যে সন্ধিক্ষণ পার করছি।
তিনি আরও বলেন, দেশে যদি গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন না থাকে তাহলে নারী কিংবা পুরুষ সংখ্যা লোক কিংবা সংখ্যা আমরা কেউই নিরাপদ নই। একমাত্র গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনেই আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে।
যেকোনো মূল্যে বিএনপির সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশবিরোধী চক্র, গণতন্ত্রে শত্রুদের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীসহ প্রতিটি নাগরিকের সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ তাড়ানোর প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা রুখতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির স্যাক্রিফাইসটা অনেক বেশি। গণতন্ত্র যখনই হুমকির মুখে পড়েছে, তখনই বিএনপি রাজপথে নেমেছে।
তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে দেশের জনগণের সামনে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অপার সম্ভাবনা এবং সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা যদি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের জনগণের রাজনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পাবে না।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের চলতে হবে। তাই সবাইকে বলব, সর্বাত্মকভাবে জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে পাশে রাখুন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারই শ্রেষ্ঠ সরকার। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সকল কার্যক্রম দ্রুত প্রক্রিয়ায় মধ্যদিয়ে চলছে। তবে দেশে কেমন একটা অস্থিরতাও চলছে।
তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আমাদের সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ হয়নি। আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকার ও সংসদ পাইনি। ফলে দলকে আরও সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করতে হবে। দেশের প্রতিটি এলাকায়, যেমন; পাড়া-মহল্লায়, ওয়ার্ড-ইউনিয়ন, থানা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিগত সরকার ছিল ‘দানব সরকার’। বুকে চেপে থাকা দানব সরে গেছে। কিন্তু বিপদ এখনো শেষ হয়নি। নতুন করে বিপদ আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে। এখন দলগুলোর যাদের নির্বাচন করার ইচ্ছা, যারা মনে করে তাদের প্রতি জনগণের সমর্থন আছে, তাদের উচিৎ মাঠে নেমে নির্বাচনমুখী রাজনীতি করা।
দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের রক্তে ভেজা বিপ্লবকে সফল বলা যাবে না। এজন্য জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের সতর্ক, সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ