মাজাহারুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫ ০৯:২৩ এএম
ফাইল ছবি
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রমজানের আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উল্লিখিত সময়ে ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সিইসির এই ঘোষণার পরপরই দেশের রাজনীতির মাঠের চিত্র পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের দিনক্ষণ ঠিক করে ডিসেম্বরে তফশিল দেওয়া হবে সিইসির এই ঘোষণার পরই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনগণের মাঝে ব্যস্ত সময় পার করার পাশাপাশি দলীয় হাইকমান্ড ও কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যস্ত রয়েছে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। প্রতিটি আসনের বিপরীতে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকায় বেকায়দায় পড়েছে তারা। কে পাচ্ছেন, কে ছিটকে পড়ছেন এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, এখন দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দলীয় শৃঙ্খলা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা, শিক্ষাগতসহ বিভিন্ন যোগ্যতার বিচার করেই প্রার্থী মূল্যায়ন করা হবে। সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে গণমানুষ ও তরুণদের সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সম্পর্ক, এ ছাড়া তার নেতৃত্ব, দক্ষতা, দলের জন্য ত্যাগ, সততার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখছেন দলের হাইকমান্ড।
মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজে, জনপ্রিয়তা ও ধর্ম, বর্ণ, দল ও মত নির্বিশেষে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতার পাশাপাশি বিগত দিনে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে কার কতটুকু ভূমিকা ছিল, সেটিও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ডে। বিগত দিনে রাজনীতির মাঠে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে দেশ ও দলের জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকারকারী, সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং স্থানীয় জনগণের কাছে ভালো মানুষ হিসেবে সুপরিচিত ব্যক্তি, নির্বাচনী এলাকায় ভোটের রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা রয়েছে, তারাই এবার বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে দলটির সূত্রে জানা যায়।
এদিকে, বিএনপি সূত্রে আরও জানা গেছে, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দেশের রাজনীতিতে নতুনমাত্রা যুক্ত করবেন, নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে জাতিকে একটি নতুন বাংলাদেশ উপহার দিবেন। সেই প্রত্যাশা মতে, নবীন ও প্রবীণ নেতাদের সমন্বয়ে একটি প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া, মিত্র দলগুলোর জন্য কিছু আসন ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশেষ করে যারা বিগত ১৫ বছরের শাসনকালে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। দলটি ইতোমধ্য অতি কৌশল ও গোপনীয় জরিপের মধ্যদিয়ে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। বিএনপির হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী অসংখ্য প্রার্থী ইতোমধ্যে গণসংযোগে নেমেছেন। যদিও দলটির হাইকমান্ড উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ে ইতোমধ্যে কয়েক দফা জরিপ চালিয়েছে। যেসব প্রার্থী ইতোমধ্যে দলের আস্থা অর্জন করে ফেলেছেন, তারা মাঠে নেমে পড়েছেন পুরোদমে। অন্যদিকে অনেকে এখনো প্রার্থিতার সবুজ সংকেত পাওয়ার অপেক্ষায়।
যে সব প্রার্থী এখনও সবুজ সংকেত পাননি, তারা দলীয় হাইকমান্ড ও কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিচ্ছে বলেও জানা গেছে। দলীয় হাইকমান্ডে মনোযোগ আকর্ষণে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন দলটির অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা।
বিএনপির মনোনয়ন এবার চাইলেই পাবেন না। তার কারণ আসনপ্রতি তিন প্রার্থী প্রস্তুত বিএনপির। সেজন্যই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপের প্রতিযোগিতা চলছে বলেও দলটির সূত্রে জানা যায়। চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই যোগ্যপ্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩০০ সংসদীয় আসনের দুই শতাধিক আসনে জয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে বিএনপি হাইকমান্ড কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবার বিএনপি প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনেক চমক থাকবে। কিছু আসনে এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী দেওয়া হবে, যার কথা অনেকের চিন্তার মধ্যেও থাকবে না। আবার অনেক সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতাও শেষপর্যন্ত মনোনয়ন টিকিট নাও পেতে পারেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্যাগী, সৎ, যোগ্য ও সর্বোপরি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নিতে পারেন। যার বিরুদ্ধে অপকর্মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং মাঠে গ্রহণযোগ্যতা নেই, তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। এমন কি কারও সঙ্গে যদি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বা কর্মীর ছবি থাকে, সে যত বড় নেতাই হোক না কেন, তিনিও মনোনয়ন পাবেন না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, যে ত্যাগী, সৎ এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অপকর্মে জড়িত বা জনপ্রিয়তাহীন ব্যক্তিরা মনোনয়ন পাবেন না।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দলের প্রতি কার কতটুকু ত্যাগ রয়েছে, নিঃস্বার্থভাবে দলকে সেবা করেছেন এবং দুর্দিনে যারা দলের সঙ্গে ছিলেন তাদের আমরা নিশ্চয়ই সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেব। তারেক রহমান কয়েকটি জরিপ করেছেন, আরও করবেন। নিশ্চয়ই যোগ্য ব্যক্তি উঠে আসবে এবং তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, বিএনপি সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক, ত্যাগ ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রার্থী মূল্যায়ন করা হবে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.