বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মন্তব্য
মাজাহারুল ইসলাম
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৩৯ এএম
প্রতীকী ছবি
জুলাই সনদ সংবিধানের চেয়ে বড় নয় তাই জুলাই সনদের ভিত্তিতে নয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ভোট বর্তমান সংবিধান মতেই অনুষ্ঠিত হবে-এমনটাই বলছেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত নয়। সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদা এই তিনটি বিষয়ের ওপর ৭২ এর সংবিধান রচিত হয়। সুতরাং সংবিধান মেনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মতামত দলটির।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও এই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন চাওয়া জামায়াত-এনসিপিসহ কয়েকটি দলের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি বলছে, কিভাবে সংবিধান অনুযায়ী সঠিকভাবে নির্বাচন করা যায়, সেই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে আসা দরকার। বিএনপির বিশ্বাস করে যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, সেই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ইসিকে সরকার থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেও আগ্রহী বলে জানিয়েছেন সরকার।
বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্বাচনের আগে সাংবিধানিক সংস্কার করা যাবে না। সাংবিধানিক সংস্কার পরবর্তী সরকারই করবে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন প্রশ্নে নানা নিত্য-নতুন ধারণা, পন্থার কথা বলছে। এসব ধারণা সুচিন্তিত ও বাস্তবসম্মত নয় বলেও ধারনা করছে বিএনপি।
দলটি নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার একাধিক ভাষণে বলেছিলেন, যেসব সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হবে, শুধু সেগুলোই জুলাই সনদে থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকার তা বাস্তবায়ন শুরু করবে। অবশিষ্ট কাজ নির্বাচিত সরকার করবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে পিআর বলতে কোনো শব্দ নেই। গণতন্ত্রের স্বার্থে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে কেউ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করবেন না। সারাদেশে নির্বাচনী আমেজের সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমরা এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না।
তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ বলছেন, সংবিধানে নির্বাচন কীভাবে হবে তা লেখা নেই। সংবিধানে ৬৫ অনুচ্ছেদের ২ উপধারায় কীভাবে নির্বাচন করতে হবে তা স্পষ্টভাবে লেখা আছে। ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় নির্বাচন হবে। প্রতিটি ভোটার তার পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিবে।
সালাহউদ্দিন বলেন, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি। আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছি। ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছি। কিন্তু কিছু শক্তি সেই ভোটের অধিকারকে বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেউ এই নির্বাচনকে ঠেকাতে পারবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সংসদের বাইরে সংবিধান সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান সংশোধন করতে হলে তা সংসদেই করতে হবে।
তিনি বলেন, সংবিধানের সংশোধনের জন্য ম্যান্ডেট জনগণের থেকে নিতে হবে প্রত্যেকটি দলকে। সেটি হতে হবে নির্বাচনের মধ্যে। তাই বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ভোট হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা বাংলাদেশের আগামীর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে, নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা সংসদীয় পদ্ধতিতেও বিশ্বাস করে না। তারা কোন পদ্ধতিতে যাবে নিজেরাও জানে না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ মানেই ৭১। তাই ৭১ নিয়ে কোনো বিতর্ক করা যাবে না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। কোনো ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই, বর্তমান সংবিধান মতেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আমাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে, তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সংবিধান নিয়ে আর কোনো ছিনিমিনি খেলা চলবে না। নির্বাচন হবে সংবিধান মেনে।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মিলে দাবি করছে জুলাই সনদের ওপর নির্বাচন হতে হবে। ৭২ এর সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। এ জাতীয় কথা সম্পূর্ণ অবাস্তব। কারণ জুলাই সনদ সংবিধান থেকে বড় নয়। সংবিধান আওয়ামী লীগের নয়, মুক্তিযুদ্ধের সংবিধান। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছি। সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদা এই তিনটি বিষয়ের ওপর ৭২ এর সংবিধান রচনা করা হয়। সুতরাং সংবিধান মেনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সাবেক চিফ হুইপ বলেন, যারা পিআরের কথা বলছেন, যারা বলছেন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, তাদের বলব, এটা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের জনগণ এখন ড. ইউনূসকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচিত সরকার গঠনের দায়িত্ব দিয়েছে। এই নির্বাচনে জনগণ তার পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। তাই আমি বলছি, জনগণের আকাক্সক্ষাকে উপেক্ষা করে কোনো লাভ নেই।
তিনি বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষ জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যাত্রা শুরু করেছে। তারেক রহমানের অকুণ্ঠ সমর্থনেই গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হচ্ছে দেশ। সেই পথ রুদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, তবে তা সফল হবে না।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের মধ্যে বিভেদ নেই। সবাই সবার মতামত দেবে- এটাই গণতন্ত্র। নতুন বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে হবে, সহনশীল হতে হবে এবং মন মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ