ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৪:৩৩ পিএম
সংগৃহীত ছবি
দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের শিকার দেশনেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন তিনি। আবার গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। একদিনের জন্যও মাথা নত করেননি। তারেক রহমানকে ভবিষ্যতের নেতৃত্বদাতা হিসেবে আখ্যায়িত করে ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ আজ তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার নেতৃত্বেই আগামী দিনে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা হবে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। এ সময় সম্মেলন থেকে দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে টেকসই গণতন্ত্র নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিও দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থায় যে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে সেগুলো শক্তিশালী করবে বিএনপি। এজন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট শাসনে’ দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই সময়ে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর হাজারো নেতাকর্মী মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২৪ জুলাই ঢাকার রাজপথে হাজারো তরুণ, যুবক, নারী ও শিশু তাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়েই গত ১৫ বছরে আমাদের ১২ জন সহকর্মী শহীদ হয়েছেন। জুলাই মাসেই প্রাণ দিয়েছেন চারজন। এই ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ ৭৫টি মামলা দিয়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার নেতাকর্মীকে হয়রানি করেছে। অনেককে পালিয়ে থাকতে হয়েছে, ধানক্ষেতে আশ্রয় নিতে হয়েছে, আবার কারাভোগও করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকের এই সম্মেলন আমাদের কাছে যেমন আনন্দের, তেমনি দুঃখেরও। আনন্দের কারণ— আমরা মুক্ত পরিবেশে গণতান্ত্রিক দলীয় কার্যক্রম চালাতে পারছি। আর দুঃখের কারণ— আমরা অনেক প্রিয় সহযোদ্ধাকে হারিয়েছি।’
বিএনপি মহাসচিব স্বাধীনতার ঘোষক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, জিয়াউর রহমান একটি দল গড়ে দিয়েছিলেন, যে দল গণতন্ত্র রক্ষার জন্য লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, প্রাণ দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছে, মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা দিয়েছে। এখন ৩১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনীতি, রাজনৈতিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ভেঙে যাওয়া প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে দলটি।
তিনি বলেন, মুক্ত পরিবেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এই সম্মেলন। বিএনপি হলো সেই রাজনৈতিক দল যে আমাদের মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ২১ দফাকে কেন্দ্র করে বেগম জিয়া নতুন বাংলাদেশের রূপকল্প দিয়েছিলেন। ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থায় বাংলাদেশ তছনছ হয়ে গেছে, ভেঙে গেছে। সেগুলোকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার জন্য, দেশের সব রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য, নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য ৩১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে বিএনপি।
নেতাকর্মীদের কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আজকে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এ জেলায় নতুন একটি বিএনপি গঠন হবে, যে বিএনপি একদিকে নতুন পথ দেখাবে অন্যদিকে গণতান্ত্রিক ঠাকুরগাঁও প্রতিষ্ঠিত করবে।
দলের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব কিংবা গ্রুপিং করা যাবে না: এর আগে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলকে শক্তিশালী করতে হবে। এজন্য নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কিংবা গ্রুপিং করা যাবে না। এ সময় সৈয়দপুর জেলা বিএনপির রাজনৈতিক কাজের বিষয়ে খোঁজ খবর নেন তিনি। দলকে শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন দলের মহাসচিব।
বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহীন আকতার শাহীন, বিএনপির অন্যতম নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান কার্জন, সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুজাল হক সাজু, জেলা মহিলা দলের সাধারন সম্পাদক রুপা হোসেন ও ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির নেতারা।
এর আগে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান দুদু ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু উপস্থিত ছিলেন। সাত বছর আটমাস পর দলীয় সম্মেলন ঘিরে সকাল থেকে উৎসবমুখর ঠাকুরগাঁও জেলার নেতাকর্মীরা। পাঁচ উপজেলা ও তিনটি পৌরসভার আটশ আটজন কাউন্সিলর ভোট দিয়ে জেলার নেতৃত্ব নির্বাচিত হবেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ