ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৫ ০৫:১৪ পিএম
সংগৃহীত ছবি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) বলেছেন, ৭১-এ বিরোধিতা করা রাজনৈতিক দল এখন বিএনপিকে ঠেকাতে চায়। যারা সংবিধান পরিবর্তনের কথা বলে তারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। তিনি বলেন, সংবিধান পরিবর্তনের অধিকার শুধু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের। কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে সংবিধানের ওপর প্রভাব বিস্তার করা গ্রহণযোগ্য নয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার একটি ‘জুলাই সনদ’ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতে যে সনদ গৃহীত হবে, সেটি নাকি সংবিধানের ওপরে স্থান পাবে। এটি তো কখনো হতে পারে না। সারা পৃথিবীতে সংবিধান প্রণয়ন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশেও তাই হয়েছে, ভবিষ্যতেও ইনশাআল্লাহ তাই হবে।
তিনি বলেন, দেশবাসী একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশায় আছে। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের অধীনে সেই নির্বাচন হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ভবিষ্যতের সংবিধান নির্ধারণ করবেন।
নিজের মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা টেনে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালে আমি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ছিলাম। আমার অধীনে ৮০০ সৈনিক ছিল, যাদের অনেকেই ছাত্র। দেড় মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েই তারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে ১০০ জন শহীদ হয়েছে। আজও তাঁদের মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অথচ এ আত্মত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন এই রাষ্ট্রে হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। শেখ হাসিনা তার ফ্যাসিবাদী শাসন দিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।
জামায়াতে ইসলামী ও নতুন গড়ে ওঠা কয়েকটি দলের সমালোচনা করেন হাফিজ উদ্দিন বলেন, একটি দল স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, আরেকটি ১৯৪৭-এর বিরোধিতা করেছে। এরা আজ জনগণের মালিক সাজতে চায়। তারা জানে নির্বাচনে তাদের কোনো সুযোগ নেই, তাই শুধু বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতেই ব্যস্ত।
তিনি বলেন, আমরা এত বছর জামায়াতকে আশ্রয় দিয়েছি, এমনকি তাঁদের মন্ত্রী বানিয়েছি। অথচ এখন তারাই বিএনপিকে আক্রমণ করছে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে আমরা এত বছর আশ্রয় দিয়েছি, আমাদের প্রতীক নিয়ে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তাদেরকে মন্ত্রী সাহেব স্থান দিয়েছি। আমাদের এখানে ফারুক আছে, আলাল আছে, সরোয়ার আছে। এরকম মন্ত্রী হতে পারতো। এদের জায়গা নিয়েছি আমরা, দিয়েছি জামাতকে। ঠিক আছে, বন্ধু প্রতির দেশ। আজকে তারা আমাদের প্রতি কি বলছে? দুই সাপের একই বিষ। নৌকায় শীষ। এইজন্য এদেরকে মন্ত্রী বানিয়েছিলাম।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, পিআর পদ্ধতির কথা বাংলাদেশের মানুষ চিনেই না। বিদেশি কনসেপ্ট। পাকিস্তানে নাই, ভারতে নাই, যুক্তরাজ্যে নাই, যুক্তরাষ্ট্রে নাই, কোথাও নাই। দুই একটা দেশে থাকতে পারে, আরো অনেক দেশে থাকতে পারে, যেখানে গণতন্ত্র অন্যরকম, শিক্ষা ব্যবস্থা অন্যরকম, কালচার অন্যরকম, তাদের শিক্ষাগত ব্যবস্থা অন্যরকম। ইসরাইলে আছে এ ধরনের।
তিরি বলেন, মবাংলাদেশের জনগণ একজন নেতাকে খুঁজে বেড়ায়, যার কাছে তারা আশ্রয় নিতে পারে, যিনি তাদেরকে আপদ বিপদে রক্ষা করবেন, এলাকার উন্নয়ন করবেন। সেজন্য একজন ব্যক্তিকে তারা খোঁজে। কিন্তু যদি পিআর পদ্ধতিতে এমপি হয়, তাহলে সে ব্যক্তিকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমন হতে পারে যে এলাকা নির্বাচন এলাকা, সেখানকার কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য হতে পারবেন না। এইসব কথা বলে তিনটি দল-একটি হলো জামায়াতে ইসলামী। অপরটি হলো এখনো রেজিস্ট্রেশন পায় নাই, সদ্য সাবালকের দল এনসিপি। অপরটি হলো চরমোনাই পীরের দল। স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় কোথায় ছিল? এনসিপি তো এখনো জন্ম হয় নাই, তখনও জন্ম হয় নাই।
সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে যে সেনাবাহিনী দেখেছি, সেই সেনাবাহিনী চাই। হাসতে হাসতে জীবন দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। শুধু সেতু বানানো বা রাস্তা করার সেনাবাহিনী দিয়ে সার্বভৌমত্ব রক্ষা সম্ভব নয়। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে পুরো জাতিকে মুক্তিযোদ্ধা চেতনায় উজ্জীবিত করা হবে, ছাত্রসমাজকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের হুমকি ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ টেনে সেনাবাহিনীকে আক্রমণাত্মক মনোভাবে প্রস্তুত করতে হবে, যাতে কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের দিকে রক্তচক্ষু দেখাতে না পারে।
বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে হাফিজ উদ্দিন বলেন, কয়েকজন বিদেশফেরত লোকের মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান পরিবর্তন হতে পারে না। বাংলাদেশের মালিক জনগণ, জনগণই নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে দেশ কেমন চলবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে ঘিরে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র রোহিঙ্গা চাপিয়ে দিয়েছে, সীমান্তে হুমকি দিচ্ছে। আমরা যদি ক্ষমতায় আসি, ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পুরো জাতিকে মুক্তিযোদ্ধা জাতিতে রূপান্তর করব। সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের মানসিকতায় প্রস্তুত করব, শুধু ব্রিজ–কালভার্ট বানানোর কাজে সীমাবদ্ধ রাখব না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ যা করেছে, আমরা যদি একই কাজ করি তবে আমাদেরও একই পরিণতি হবে। তাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে যারা একসঙ্গে লড়াই করেছি, তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। রাষ্ট্রক্ষমতার লোভে জাতীয়তাবাদকে বিসর্জন দেওয়া যাবে না। এইটা উপলব্ধি করে আগামী দিনগুলোতে আমাদের পথ চলতে হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, সেখানে অফিস খুলেছে এবং এই মাফিয়া নেত্রী সেখানে পলায়ন করে সেখানে ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেব।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
ভোরের আকাশ/এসএইচ