সংগৃহীত ছবি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যতদিন যাচ্ছে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় বিশ্বাস করে না- তারা আবার সক্রিয় হচ্ছে। শনিবার (১৯ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, অযথা বিলম্ব না করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অনতিবিলম্বে নির্বাচন দিয়ে পরিস্থিতি ঠিক করার আহ্বান জানাচ্ছি। এই দায়িত্ব এখন অন্তর্বর্তী সরকারের।
তিনি বলেন, সংস্কার বিএনপিই করেছে, প্রস্তাবও বিএনপিই দিয়েছে, তাই অযথা বিলম্ব না করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অনতিবিলম্বে নির্বাচন দিয়ে পরিস্থিতি ঠিক করার আহ্বান জানাই। এই দায়িত্ব এখন অন্তর্বর্তী সরকারের, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।
তিনি আরও বলেন, সরকারের প্রতিটি পর্যায়ের যারা আছেন, তারা সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি বন্দোবস্ত দেবেন। সবাই যেন একটি বিষয়ে একমত হই, যেন কেউ ফ্যাসিবাদের কাছে দেশকে ছেড়ে না দেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিপ্লব করে ক্ষমতায় যাওয়ার সামর্থ্য নেই, ইচ্ছেও নেই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সমর্থনে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন করতে চায় বিএনপি। কোনো বাধাই থামাতে পারবে না। একাত্তরের স্বাধীনতা মূল কথা, সেখানে কোনো ছাড় নেই। গণতন্ত্রের দিকে যেতে হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন, “কক্সবাজারে আমাদের নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সত্য উন্মোচন করেছেন বলেই আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।” তিনি জানান, বাঁশখালীতে এনসিপির এক সংগঠকের ওপর হামলা চালানো হয়েছে এবং ব্যানারে আগুন দেওয়া হয়েছে।রবিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সন্ধ্যা ৬টায় নগরের বহদ্দারহাট থেকে শুরু হয় এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। পথিমধ্যে সাধারণ জনগণ তাদের অভিবাদন জানান।সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা বিপ্লব উদ্যানে পৌঁছান। সেখানে নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাধা দিয়ে তারুণ্যের শক্তিকে থামানো যাবে না। বাধা যদি আসে, তবে লড়াই হবেই—এ লড়াইয়ে জয় আমাদের হতেই হবে।”তিনি আরও বলেন, “চট্টগ্রাম ঐতিহাসিক সংগ্রামের শহর। এখান থেকেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই শহরের মানুষ বারবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে—হাবিলদার রজব আলী, মাস্টার দা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারদের মতো বীরেরা এখানে জন্ম নিয়েছেন।”নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর শুধু অর্থনীতির লাইফলাইন নয়, ইসলামী দাওয়াতের প্রাচীন কেন্দ্রও বটে। সুফি-সাধকেরা এখান দিয়েই এসেছেন এবং সাম্য-মানবিকতা ও সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়েছেন। আজ সেই চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা বলতে চাই, চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র হলে তা দেশের প্রতিটি কোণে প্রতিরোধের আগুন ছড়িয়ে পড়বে।”তিনি চট্টগ্রামের ভাষায় স্লোগান দেন—“বউত দিন হাইয়ো, আর না হাইয়ো!”—যা নেতাকর্মীদের মধ্য উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে দেয়।সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষকে বছরের পর বছর নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। পাসপোর্ট অফিস, শিক্ষাবোর্ড, থানা কিংবা সচিবালয়—সব জায়গায় হয়রানির শিকার হতে হয়।”তিনি আরও বলেন, “আমাদের মাঝে বাঙালি-অবাঙালি, সুন্নি-অসুন্নি বিভাজন করা হয়েছে—এখন এসব বিভেদ চলবে না। চট্টগ্রামের মানুষ ধর্মপ্রাণ, অতীতে ধর্মচর্চার জন্য তারা নিপীড়িত হয়েছেন—এখন সেটা আর চলবে না।”এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “চট্টগ্রাম প্রতিরোধের শহর। ঢাকায় ১৬ জুলাই অভ্যুত্থান হলেও, চট্টগ্রাম তার আগেই প্রতিরোধ গড়েছে। স্বৈরাচারকে হটিয়েছি, এখন প্রয়োজন একটি সফল রাষ্ট্র গঠন। অতীতে যারা বাংলাদেশ শাসন করেছে তারা কেউ দিল্লিকে, কেউ লন্ডনকে সেকেন্ড হোম বানিয়েছে। কিন্তু এখনকার তরুণ প্রজন্মকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না—হাসিনাও পারেননি। এই প্রজন্মই নতুন বাংলাদেশ গড়বে।”সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা।এর আগে কক্সবাজার ও বান্দরবান সফর শেষে শনিবার রাতেই এনসিপি নেতারা চট্টগ্রামের হোটেল সৈকতে অবস্থান নেন। রবিবার সকালে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে তারা চট্টগ্রামের ‘জুলাই শহীদ’ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।ভোরের আকাশ//হ.র
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে একই ব্যক্তির দায়িত্ব পালনে কোনো আপত্তি দেখছে না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলের মতে, এটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব গণতান্ত্রিক অধিকার, ফলে এতে কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা উচিত নয়।শনিবার (২০ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১৫তম দিনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।তিনি বলেন, “একই ব্যক্তি তিনটি পদে থাকতে পারবেন কি না—এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, এতে কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা উচিত নয়। এটা একান্তই দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং গণতান্ত্রিক অধিকার।”কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, একজন ব্যক্তি একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না। এসব পদে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।তবে বিএনপির অবস্থান ভিন্ন। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হিসেবে একই ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করলে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু দলীয় প্রধানও একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কি না, সেটা বিতর্কের বিষয়। আমাদের দল ইতোমধ্যে লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে এবং আগের আলোচনাতেও আমরা একই যুক্তি দিয়েছি।”তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “যুক্তরাজ্যেও দেখা যায়, দলীয় প্রধানরাই প্রধানমন্ত্রী হন। তবে সেটি নির্বাচন নয়, বরং সংসদীয় দলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হয়। ফলে কেউ যদি দলের প্রধান হন, তাকে প্রধানমন্ত্রী হতে বাধা দেওয়ার যুক্তি নেই।”বিএনপির মতে, দলীয় প্রধানের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্বের পথ খোলা রাখা গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ। সালাহউদ্দিন বলেন, “সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তে যদি কেউ মনোনয়ন পান, তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। আবার অন্য কেউ মনোনয়ন পেলে তিনিও হতে পারেন। কিন্তু সেই সুযোগটা খোলা রাখা জরুরি।”তিনি আরও বলেন, “শুধু দলীয় প্রধান হওয়ার কারণে কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না—এমন বিধান গণতন্ত্রবিরোধী। এটি সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিপন্থী।”বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গও উঠে আসে। বিএনপি জানায়, এ বিষয়টি এখনো আদালতের আপিল বিভাগে রিভিউ পর্যায়ে বিচারাধীন। দলটির বিশ্বাস, আদালতের রায়ের মাধ্যমেই এ ব্যবস্থা আবার চালু হবে। তবে আদালতের রায়ে ফিরে না আসলেও, জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে বলেও মত দেন বিএনপি নেতা।সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় হুইপ এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি থাকবেন।তিনি বলেন, “কমিটি বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে প্রস্তাবিত নাম আহ্বান করতে পারবে। এরপর শর্টলিস্ট করে প্রয়োজনে র্যাংকড চয়েস ভোটিংয়ের মাধ্যমে একজন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করার প্রক্রিয়া তৈরি করা হচ্ছে।”নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের মেয়াদ আগের মতো ৯০ দিন থাকছে। জরুরি পরিস্থিতিতে আরও ৩০ দিন সময় বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পূর্ণ ক্ষমতা নয়, বরং রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন।বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, “বাংলাদেশের বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক প্রথার আলোকে আমরা বিশ্বাস করি, সবাই যৌক্তিক চিন্তা করে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে পৌঁছাতে পারবেন।”ভোরের আকাশ//হ.র
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, নির্বাচন ঠেকানোর যতই চেষ্টা করা হোক না কেন। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। ভারত বা অন্য কোনো কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করে এই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না।রোববার (২০ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রজন্ম দলের উদ্যোগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার, অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। প্রজন্ম দলের সভাপতি জনি হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল, কৃষকদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এস কে সাদী, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, চালক দলের সভাপতি জসিম উদ্দিন কবির, মৎস্যজীদলের সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ।বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দেশে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। স্বৈরতন্ত্রের পতনের পর গণতন্ত্রেও যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, গণতন্ত্রকে উত্তরণের জন্য যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বিলম্বিত করার অর্থ হচ্ছে সময়কে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া। নির্বাচন বিলম্বিত হলে পার্শ্ববর্তী দেশ যাদের আশ্রয় দিয়েছে, সেই কুচক্রী মহল, ষড়যন্ত্রকারী, গণহত্যাকারী এবং লুটপাটকারীদের সময় দেওয়া। যাতে তারা বাংলাদেশে অস্থিতিশীল করতে পারে।তিনি বলেন, বড় একটি দেশ গতবছর থেকে গণঅভ্যুত্থানের পর তাদের আশীর্বাদপুষ্ট শেখ হাসিনা তাদের দেশে পালিয়ে যাওয়ার পর এই গোষ্ঠী অনবরতভাবে মিথ্যা কথা সারা দেশে প্রচার করছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নেতারা আপত্তিকর কথাবার্তা বলেছেন।তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূসকে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে। গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য আমাদেও নেতা তারেক রহমান তার (ড. ইউনূস) সঙ্গে যখন বৈঠক করেছে তখনই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসা শুরু হয়েছে। এই স্থিতিশীলতাকে কোনো কোনো মহল-রাজনৈতিক দল, কোনো কোনো ব্যক্তি হীনমন্যতার পরিচয় দিচ্ছে। যার উদাহরণ আমরা কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে দেখেছি।বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান দুদু বলেন, সালাহউদ্দিন সাহেব এখন একটি পার্টিও মুখপাত্র। তার সমালোচনা করা যাবে না, সেটি নয়। কিন্তু কোনো আপত্তিকর বক্তব্য কোনো স্বাধীনতার পর্যায়ে পড়ে না। সেটি একটি উস্কানিমূলক বক্তব্য। উস্কানি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে স্বৈরতন্ত্রকে আমন্ত্রণ জানাবেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।তিনি আরও বলেন, ৭১ সালে এ জাতি সরাসরি রণাঙ্গনে থেকে যুদ্ধ করেছে। ৭১ নিয়ে কোনো আপস নেই। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের ব্যাপারেও কোনো আপস নেই। এগুলোর ব্যাপারে যতই উস্কানি দেন না কেন আমরা সেটির প্রতিশোধ নেব আগামী নির্বাচনে। আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করব বাংলাদেশের জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে।দুুদু বলেন, গণতন্ত্রে মত প্রকাশের সুযোগ আছে, বিএনপি সেটা ধারণ করে। ধারণ করে বলেই অশ্লীল এবং ঘৃণ্য বক্তব্য দেওয়ার পরেও বিএনপি প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু, কোনো জায়গায় কোনো বক্তাকে আক্রমণ করেছে এমন কোনো ঘটনা নেই। বিএনপির নেতাকর্মীরা অত্যন্ত ধৈর্যশীল। বিএনপির নেতাকর্মীরা গণতন্ত্রের অনুসারী। স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রকে যারা বিশ্বাস করে তারা ধৈর্যশীল।ভোরের আকাশ/এসএইচ
শেখ হাসিনা জাতির কলঙ্ক, তাকে ক্ষমা নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে কখনো ক্ষমা করা যাবে না। বাংলার মাটিতে তার বিচার হবেই। স্বৈরচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ হত্যা করছে, পুড়িয়ে মারছে, কি নির্মম নৃশংস অমানবিক। আমাদের প্রথম কাজ হবে এদের বিচার করা।জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ও আমরা বিএনপি পরিবারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত রোববার (২০ জুলাই) রাজধানীর শেরে বাংলানগরের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল ও আমরা বিএনপি পরিবার যৌথ ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সবুজ পল্লবে স্মৃতি অম্লান কার্যক্রম শীর্ষক উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।এ সময় মাজার প্রাঙ্গণে একটি করে নিম গাছ লাগানো হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি করছে এটি তারই অংশ। কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সঞ্চালনায়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলসহ চার শহিদ পরিবারের স্বজনরা। অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম শামসুল ইসলাম শামস, বাদলুর রহমান বাদল, সাইফ আলী খান, মোকছেদুল মোমিন মিথুন, জাহিদুল ইসলাম রনি, শফিকুল হক সাজু ও হাসনাইন নাহিয়ান সজীবসহ কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের রাজনীতিটা অত সহজ পথ নয়, গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো থাকে না, এখানেও সমস্যা থাকবে, সেটাই রাজনীতি। কিন্তু এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ভিন্নমত থাকবে, বহুমাত্রিক পথ থাকবে, কেউ গণতন্ত্রের বিশ্বাস করবে, কেউ সমাজতন্ত্রের বিশ্বাস করবে, কেউ আপনার ওয়েলফেয়ার স্টেটে বিশ্বাস করবে। সব গুলোকে মিলিয়ে সেই রকম একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করা হবে, অনেক আগেই আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন।রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছেন, সেই দফার মধ্যে আজকে যে সংস্কারের প্রশ্নটা ওঠেছে, সংস্কারের যে প্রস্তাবগুলো আসছে তার প্রত্যেকটি প্রস্তাব আমরা ২০২২ সালে দিয়েছি।জুলাই আন্দোলনে এক শহীদের মায়ের আহাজারি কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, যে ছেলেটাকে দেখে স্বপ্ন দেখেছি আমার পরিবার স্বপ্ন দেখেছে আমার ভবিষ্যতের, সে ছেলেটাকে কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে এক মর্মান্তিক ও নিদারুণভাবে। তাকে গুলি করে মেরেছে। পড়ে গিয়েছে তারপর একটি ভ্যানের মধ্য উঠিয়েছে। বেঁচে আছে নাকি মরে গিয়েছে সেটা না দেখে আরও কয়েকটি লাশ উঠিয়েছে। পরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। চিন্তা করেন একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক আমরা। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ করেছি একটা স্বাধীন দেশের জন্য। সেই দেশের পুলিশ প্রশাসন রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে, যাদের বেতন আমার আপনার ট্যাক্সের টাকায় হয়। তারা আজকে আমার লেকে আমার সন্তানকে পুড়িয়ে মারছে, হত্যা করছে। কি নির্মম পাশবিক!এমন নিষ্ঠুর ও অমানবিকতার জন্য হাসিনাকে কখনো ক্ষমা করা যাবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, হাসিনাকে কোনদিন ক্ষমা করা যাবে না। হাসিনা মানবজাতির কলঙ্ক। হাসিনা মায়েরদের কলঙ্ক। আমাদের প্রথম কাজ হবে এদের বিচার করা। দ্বিতীয় কাজ হবে শহীদ পরিবারদের পুনর্বাসন করা। যারা আহত হয়েছে তাদের উন্নত চিকিৎসা দিয়ে পুনর্বাসন করা। এটা না হলে ভবিষ্যত জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না।জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবারদের জন্য ফান্ড তৈরি করবে বিএনপি’র উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বার বার বলেছি নির্বাচন হবেই নির্বাচনে কে দায়িত্ব পাবে বা না পাবে সেটা পরের কথা। আজকেই আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বলবো দলের পক্ষ থেকে একটা ফান্ড করবো। যাতে আহত ও শহীদ পরিবারদের পুনর্বাসন করা যায়। ইতোমধ্যে আমাদের ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ থেকে জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবারের পাশে তারা দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিতে যে সংকট প্রকাশ্যে এসেছে তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। উদ্ভূত সমস্ত সংকট এড়াতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ক্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ দেবে এ প্রত্যাশা করছেন বিএনপির মহাসচিব।মির্জা ফখরুল বলেন, জুলাই আন্দোলনে শহিদের সংখ্যা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতে চাই না। আমার কতজন শহীদ হয়েছেন, আমার কতজন নিহত হয়েছেন, আমরা কত ত্যাগ স্বীকার করেছি, কারা কী কাজ করেছি এই বিতর্কে আমি যেতে চাই না। কারণ ওটা আমার কাছে মনে হয় স্বার্থপরতার একটা ব্যাপার আছে। আমার দায়িত্ব হচ্ছে এই জাতিকে আমাকে উপরে তুলতে হবে, যে প্রাণগুলো গেছে, যারা জীবন দিয়েছে তারা কিন্তু জীবন দিয়েছে ঘোষণা করেই দিয়েছে যে, আমরা ফ্যাসিস্টকে সরাবো, জাতিকে একটা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই। সত্যিকার অর্থে একটি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি কাজ করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মানুষ যেন সুস্থ ভাবে স্বাধীনভাবে কমফোর্টেবল ওয়েতে স্বস্তির সঙ্গে যেন চলাফেরা করতে পারে সেই ধরনের একটা রাষ্ট্র চাই।ভোরের আকাশ/এসএইচ