তারেক রহমান দেশে ফিরবে, সবধোঁয়াশা কেটে যাবে : ডা. এ জেড এম জাহিদ
খুব অল্প সময়ে মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশে আসবেন। সব ধোঁয়াশা কেটে একটি সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হবে। কালো মেঘ দূর হবে, ঘাতকের বিচার হবে, দেশের পাচার হওয়া টাকাগুলো ফেরত আসবে। আমরা মনে করি শুক্রবার (১৩ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যে আলোচনা হবে সেখান থেকেই এই বার্তাটুক বাংলাদেশের মানুষ পাবে। আমরা বলবো এটি শীর্ষ নেতাদের একটি বৈঠক।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা এলাকার আরএস রেস্টুরেন্টে ‘জুলাই আগস্ট’ আন্দোলনে শহীদ এবং আহত পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহয়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এসব কথা বলেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় বিএনপি সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে। আপনারা কখনও নিজেদের দুর্বল ভাববেন না। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশে হারিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। গুম হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। আমাদের পক্ষে ঢাকায় বসে সবার খোঁজ খবর নেয়া সম্ভব না। আপনার স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আপনাদের দুঃখ কষ্টের কথা বলবেন। তাদের মাধ্যমে আপনাদের কথাগুলো আমাদের সামনে আসবে।
যারা আন্দোলনে শহীদ হয়েছে, যারা আহত হয়েছে তাদের হয়তো আমরা ফিরিয়ে দিতে পারবো না। কিন্তু আমরা তো তাদের পাশে দাঁড়াতে পারবো। সে নির্দেশনা সবসময় আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিয়ে রেখেছেন। তাদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আমাদের আছে।
লন্ডন সফররত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে যে ধোয়াশা তৈরী হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় তৈরী হয়েছে যে কালো মেঘ দেখা দিয়েছে এ বৈঠকের মাধ্যমে তা কেটে যাবে। এর মাধ্যমে ঘাতকের বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন, পাচারকৃত অর্থ ফেরত এনে দেশ পূনর্গঠনে ব্যায় করার পথ খুলবে। এসময় দ্রুত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরবেন বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
শ্রীপুর পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বেপারীর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন শ্রীপুর ইউসিসিএর চেয়ারম্যান এসএম মাহফুল হাসান হান্নান, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের নেতা মাসুদ রানা, সদর বিএনপি নেতা তাহের মুসুল্লী, তেলিহাটি ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আবু জাফর সরকার প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে প্রয়াত শ্রীপুর পৌর বিএনপি'র সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী খান ও প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ্ শহিদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নেন অধ্যাপক ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন। পরে উপজেলার ধামলই গ্রামে আওয়ামীলীগের আমলে কারাগারে নিহত বিএনপি নেতা হীরা খানের বাসায় গিয়ে তার পরিবারের খোঁজ খবর নেন ও কবর জিয়ারত করেন।
বিকালে ডা. জাহিদ কাওরাইদ কাীল নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে গন সম্বর্ধনা ও ৭৫ ব্যাচের পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ।
ভোরের আকাশ/আজাসা
সংশ্লিষ্ট
ইরানের সামরিক ও বৈজ্ঞানিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার শুক্রবার (১৩ জুন) এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানান।বিবৃতিতে তিনি জানান, ইরানের স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ইসরায়েল ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়। এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন কেন্দ্র।এই হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি, সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, খতম-আল আনবিয়া সদর দফতরের কমান্ডার ঘোলামালি রশিদ এবং বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। নিহতদের মধ্যে আরও রয়েছেন ফেরেদুন আব্বাসি, মুহাম্মাদ মেহেদি তেহরানচি, আবদুল হামিদ মিনুচেহর, আহমেদ রেজা জোলফাগারি, সাইয়্যেদ আমির হোসেইন ফাকি, মোতলাবিজাদেহ এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা শামখানি।মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আমরা ইসরায়েলের এই বর্বরোচিত হামলার কঠোর প্রতিবাদ জানাই। একইসঙ্গে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং আল্লাহর কাছে তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করার দোয়া করছি। মহান আল্লাহ যেন তাদের জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও সহকর্মীদের ধৈর্য ধারণের শক্তি দেন।”তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইরান সরকার ও জনগণ দ্রুত এই বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে। ভোরের আকাশ/হ.র
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠককে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মত প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।শুক্রবার (১৩ জুন) রাত ১০টায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও বিএনপি নেতার মধ্যে এই বৈঠককে আমরা উৎসাহব্যঞ্জক হিসেবেই দেখি। জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের গঠনমূলক সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ।”তবে এ প্রসঙ্গে হতাশাও প্রকাশ করেন তিনি। তার ভাষায়, “যেভাবে এই বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য মাস ও তারিখ আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে, সেই তুলনায় বিচার ও কাঠামোগত সংস্কারের প্রশ্নটি প্রায় উপেক্ষিত থেকেছে। অথচ এই অন্তর্বর্তী সরকার কেবল একটি নির্বাচনের আয়োজনের জন্য নয়— এটি একটি গণঅভ্যুত্থান থেকে উদ্ভূত, জনগণের আত্মত্যাগ ও প্রত্যাশার ভিত্তিতে গঠিত।”হাসনাতের মতে, জুলাই মাসের মধ্যে “জুলাই ঘোষণাপত্র” ও “জুলাই সনদ” প্রকাশ এবং মৌলিক সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিশ্চিত করাই হবে নির্বাচনের বাস্তব ভিত্তি। তার ভাষায়, “জুলাই সনদের আগে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে আলোচনা করা হলে তা এই সরকারের মূল দায়িত্ব থেকে সরে আসার শামিল।”তিনি আরও মন্তব্য করেন, “এখনই স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজি, প্রভাব খাটানো, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অপসংস্কৃতি দৃশ্যমান হচ্ছে। তাই নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে হলে একটি সমতাভিত্তিক পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরি করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”পোস্টের শেষ অংশে তিনি বলেন, “নির্বাচন ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিল— তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, নির্বাচনের আগে সংস্কার, বিচার ও সনদের বাস্তব অগ্রগতি কতটুকু হচ্ছে।” ভোরের আকাশ/হ.র
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করে, সংসদ নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা শুরু হওয়ার আগে ‘জুলাই সনদ’ কার্যকর এবং বিচার কার্যক্রমের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রকাশ জরুরি।শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই অবস্থান জানানো হয়।বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংলাপকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটিকে নির্বাচন নিয়ে আস্থার পরিবেশ তৈরির একটি ধাপ হিসেবে বিবেচনা করছে দলটি।তবে এনসিপি মনে করে, ওই আলোচনায় নির্বাচনের সময়সূচি যতটা গুরুত্ব পেয়েছে, ততটা গুরুত্ব পায়নি অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—বিচার এবং কাঠামোগত সংস্কার। একক রাজনৈতিক মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনের আয়োজন হলে তা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাবে না বলেও তারা মনে করে।এনসিপির বক্তব্য, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রণয়ন, ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন এবং বিচার প্রক্রিয়ার একটি স্বচ্ছ রূপরেখা ছাড়া জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের যে কোনো উদ্যোগ গণ-আন্দোলনের মূল চেতনাকে দুর্বল করবে। এতে রাষ্ট্র সংস্কারের আন্দোলন শুধুই ক্ষমতার বদল হিসেবে দেখা দেবে।বিবৃতির শেষ অংশে বলা হয়, আসন্ন জুলাই মাসকে অর্থবহ করে তুলতে হলে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি, এবং সেই ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে সরকারকে অনতিবিলম্বে এগিয়ে আসতে হবে। ভোরের আকাশ/হ.র
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফলপ্রসূ বৈঠকে সকল মহলে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এ বৈঠক শুধু দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতারই অবসান করেনি বরং আগামী দিনের বাংলাদেশের গতিপথ নির্ধারণে মাইল ফলক হিসেবে দেখছেন অভিজ্ঞমহল। বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিং থেকে জানা যায়, তারেক রহমান রমজান শুরুর আগেই ফেব্রুয়ারিতে ভোট সম্পন্নের প্রস্তাব দিলে প্রধান উপদেষ্টা তাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সব প্রস্তুতি সম্পান্ন করা গেলে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।লন্ডনে ডরচেস্টার হোটেলে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান। ইসি শিগগিরই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেই হবে সংস্কার ও জুলাই সনদ।এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণাসহ নানা ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে সরকারের যে টানাপোড়েন চলছিল সেটির অবসান হয়েছে। বিশ্লেষকদের পাশাপাশি আজ বিকেলে ঢাকায় বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সস্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনেও বলেছেন, ফলপ্রসূ এ বৈঠক দেশের জন্যে স্বস্তির খবর ও রাজনীতির টার্নিং পয়েন্টে।শুক্রবার (১৩ জুন) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের আগে তারেক রহমান হোটেল পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ অন্যরা।তারেক রহমানের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসন ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। মিটিং কক্ষে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা তারেক রহমানের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। তারেক রহমান তার মা দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সালাম পৌঁছে দেন প্রধান উপদেষ্টাকে।এ সময় প্রধান উপদেষ্টাও বেগম খালেদা জিয়ার ইতিবাচক গুণ তুলে ধরেন। পরস্পর অত্যন্ত সৌহার্দ পূর্ণ ও আন্তরিকভাবে কুশলাদি শেষ করার পর বৈঠকটি শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা চলে বৈঠকটি। বৈঠক শেষে তারেক রহমানও বিএনপি নেতারা বেশ হাসিমুখে বের হন। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সময় বিকাল চারটার দিকে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন।সংবাদ সম্মেলনে সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বিএনপির নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন।সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে বৈঠকে আগামী রমজানের শুরুর আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন শিগগিরই তারিখ ঘোষণা করবে।জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আমরা কোনো সমস্যা দেখি না। কেউ দেখলে তা ভুল দেখছেন। নির্বাচন নিয়ে আমরা দুপক্ষই যৌথ বিবৃতিতে বলে দিয়েছি। আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন শিগগিরই তারিখ ঘোষণা করবে। শেখ হাসিনার হত্যাযজ্ঞ ও তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নির্বাচনী রূপরেখার সঙ্গে এটা প্রভাব ফেলবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, সংস্কার ও বিচার নিয়েও যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে। আমরা মোটামুটি কনফিডেন্ট, নির্বাচনের আগেই আমরা এর অগ্রগতি দেখতে পাব।তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান লন্ডন সফররত প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন।মিটিংয়ে তারেক রহমান বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতিসম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।এদিকে, ওই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্র সংস্কার ও জুলাই সনদ- দুটিই করা হবে।তিনি বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে দেশে আলোচনা চলছে। আমাদের সিদ্ধান্ত হলো ঐকমত্যেরভিত্তিতে জুলাই সনদ হবে। রাষ্ট্র সংস্কারও হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হবে সেগুলো বাস্তাবায়ন করা হবে।আমির খসরু বলেন, বৈঠকে নির্বাচন, রাজনীতিসহ সব বিষয়ে আলোচনা হবে এটা স্বাভাবিক। আমরা তো নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। আমরা সবাই চাই, দেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়েছি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটা করব। শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ঐকমত্য হয়েছি তা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়ে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সংস্কারের যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে সেগুলোই সংস্কার হবে। সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। এমন নয় যে, এখনই সব সংস্কার শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগে ঐকমত্যেরভিত্তিতে কিছু সংস্কার হবে। নির্বাচনের পরও সংস্কার অব্যাহত থাকবে। কারণ আমার যে দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি সেখানে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সবাই অনুভব করছে। সুতরাং আগে-পরে সংস্কার চলতে থাকবে।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমির খসরু বলেন, এ ব্যাপারে আলোচনার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি না। তারেক রহমান যখন ইচ্ছা তখন তিনি দেশে ফিরতে পারবেন। সুতরাং সিদ্ধান্ত উনি (তারেক রহমান) নেবেন, সময়ও নির্ধারণ করবেন।আমির খসরু বলেন, প্রথমে দুইটি বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমান ‘ওয়ান টু ওয়ান’ দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছেন। বৈঠকের ব্যাপারে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা বলেছি, শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও দেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব।এদিকে, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পর বিকালে দলের গুলমান অফিসে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের ইতিবাচক বার্তা ‘দেশের গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ’।মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আজকে জাতির অনেক প্রতীক্ষিত একটি সুসংবাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। প্রায় দুই ঘণ্টার এই বৈঠক নিয়ে গোটা জাতি উৎকণ্ঠা সঙ্গে অপেক্ষা করছিল এবং সবাই অপেক্ষা করছিলেন যে, এই বৈঠকটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, সত্যিকার অর্থেই এই বৈঠকটি একটা টানিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করলাম বৈঠকের পরেই একটা যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে ঘোষণায় বলা হয়েছে, আমাদের দুই নেতার বৈঠকটি ছিল অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। যে বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে প্রধান ছিল নির্বাচন ইস্যু। সেই নির্বাচন ইস্যুতে তারেক রহমানের যে প্রস্তাব, এপ্রিলের যে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে সেটা উপযুক্ত সময় নয় বিধায় সেটি রোজার আগে নিয়ে আসা। সেক্ষেত্রে গোটা জাতি আনন্দের সঙ্গে লক্ষ্য করল যে, প্রধান উপদেষ্টা এটাতে সম্মত হয়েছেন তারা ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর মাধ্যমে তারেক রহমান আবার প্রমাণ করলেন তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক যে দলগুলো রয়েছে সেই দলগুলোর নেতৃত্ব যারা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে নিসন্দেহে রাষ্ট্রনায়কোচিত যে গুণগুলো তার মধ্যে রয়েছে সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন।প্রথম একটি বৈঠকে যেটা গোটা জাতি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল, সেই বৈঠকটিতে তিনি আল্লাহর রহমতে সফল হয়েছেন। আমি আমার দলের পক্ষ থেকে সকল নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।এদিকে, এ বৈঠকের ইতিবাচক খবর মুহূর্তেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে এখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা। এককথায় এটিই ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে বৃহৎ রাজনীতিক দল বিএনপির সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েনের অবসান হওয়ায় স্বস্তি বিরাজ করছে সর্বত্র। তারা বলছেন, সরকার এখন বাকি দিনগুলোতে সুন্দরভাবে সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন করতে পারবে।বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যাালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রহুল আমিন রোকন দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, নিঃসন্দেহে প্রধান উপদেষ্টা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের ইতিবাচক বার্তাটি স্বস্তির। এ বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিলো গোটা জাতি।তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে সরকারের একপ্রকার টানাপোড়েনের অবসানের রাজনীতিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে। এছাড়া সংস্কারসহ নানা ইস্যুতে এ বৈঠকে স্বস্তিদায়ক সমঝোতাও হয়েছে বলে মনে করেন এ বিশ্লেষক।ভোরের আকাশ/এসএইচ