× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিএনপি ও জামায়াতের তৃণমূলে ইতিবাচক বার্তা

এম. সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৪৪ পিএম

বিএনপি ও জামায়াতের তৃণমূলে ইতিবাচক বার্তা

বিএনপি ও জামায়াতের তৃণমূলে ইতিবাচক বার্তা

গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নানা ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের খবরে দল দুটির তৃণমূলে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছেছে। লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বৈঠকের পর দল দুটির মধ্যে সৃষ্ট টানাপোড়েনও কমবে বলেও মনে করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ওই বৈঠকের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও দুই দলের শীর্ষ নেতারা কাছাকাছি বক্তব্য দিয়েছেন। ফলে নিজের মধ্যে বিভেদ ঘুচানোর পাশাপাশি ফের দুই দলের মধ্যে ঐক্যেও জোর দিচ্ছেন অনেকে।

আওয়ামী লীগের পতনের পর নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টির কথা স্বীকার করে এই ঐক্যের কথা বলছেন দল দুটির নেতারা। তাদের চাওয়া দল দুটির মধ্যে জাতীয় ঐক্য। ঐক্য ধরে না রাখতে না পারলে ফের স্বৈরাচার মাথাচাড়া দেয়ার পাশাপাশি দেশে ভারতীয় আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ পাবে বলেও মনে করছেন তারা।নিজেদের মধ্যে ঐক্য অটুট রেখে একটি জাতীয় নির্বাচন আদায় করে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাই নিজেদের জন্যে চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করছেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারাই মাঠে ছিল তাদের নিয়ে বিএনপি ঐক্য চাইছে। জোটবদ্ধ না থাকলেও কিন্তু আমরা অনেক দল মিলে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করেছি। এখনো আমরা ঐক্য চাইছি। জামায়াতের ইস্যুতেও আমাদের একই অবস্থান, যা আমি জামায়াতের অনুষ্ঠানে গিয়েও বলেছি।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আগামীতেও দেশ ও জাতির স্বার্থে বিএনপি ও জামায়াত এক থাকবে ইনশাআল্লাহ। মাঠের কথাবার্তা যাই হোক না কেন, দুই দলের মৌলিক চাওয়া এক।

দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছে বিএনপি ও জামায়াত। মাঝে মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হলেও তা বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়েনি দল দুটির সম্পর্ক বা জাতীয় কোনো ইস্যুতে অবস্থান নেয়ার ক্ষেত্রে। যদিও ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর কয়েকটি বিষয় নিয়ে দল দুটিতে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। কার্যত জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচির প্রশ্ন, আগে সংস্কার নাকি নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র-এসব ইস্যুতেই দুই দলের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে।

এসব ইস্যুতে শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত দ্বিধাবিভক্ত বক্তব্য দিচ্ছেন দল দুটির নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দল দুটির নেতাকর্মীদের বাকযুদ্ধ এখন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রভাব সৃষ্টি করা থেকে শুরু করে নানা ইস্যুতে দেশের বিভিন্ন  স্থানে দল দুটির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ নিয়েও দল দুটির মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের পর বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব দেশের সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমতাবস্থায় যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের বাসায় তাদের এ বৈঠক হয়। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এ বৈঠকের কথা স্বীকার না করলেও জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খবর নিতেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের কথা হয়েছে।

এর আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেস সচিব মারুক কামাল খান সোহেল তার ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট করেন। তাতে তিনি লেখেন, সম্প্রতি ইউরোপ সফর শেষে লন্ডন পৌঁছে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশে ফিরেছেন। জিয়া দম্পতির বড় ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় গিয়ে তারা দেখা করেন।

দীর্ঘ এ সাক্ষাৎপর্বে তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন। তিনি আরো লিখেছেন, বেগম জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের দুই শীর্ষনেতার সাক্ষাতে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। এই সাক্ষাৎ রাজনীতির রসায়নে নতুন কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, নাকি নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েই থাকবে, তা বুঝতে হলে আমাদের চোখ রাখতে হবে সামনের দিকে। দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের প্রতিফলন দেখা গেছে জামায়াত আমিরের বক্তব্যে।

গত বুধবার ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জামায়াত আমির নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আগামী রমজানের আগেই তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচন চান কারণ, জুন মাসের দিকে প্রচণ্ড গরম ও পরবর্তীতে বর্ষাকাল চলে আসায় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আগেই নির্বাচন চান তিনি।

গতকালও তিনি নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, তিনটি শর্ত পূরণ হলে নির্বাচন দ্রুত সম্ভব। প্রথমত দৃশ্যমান মৌলিক সংস্কার, দ্বিতীয়ত গণহত্যাকারীদের দৃশ্যমান বিচার ও তৃতীয়ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধের মাধ্যমে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে চলমান বিভাজনের মধ্যেই দল দুটির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর নেতাকর্মীদের মাঝে কোনো প্রভাব পড়েছে কিনা- তা জানতে দৈনিক ভোরের আকাশের পক্ষ থেকে দলটি দুটির বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবসময় বলে আসছেন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা ছিল তাদের নিয়ে তিনি আগামী একসঙ্গে চলবেন। এমনকি নির্বাচিত হলে সবাই নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের কথাও তিনি বারবার বলছেন।

তিনি বলেন, দেশে যে অদৃশ্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেখান থেকে উত্তরণে একটি জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। দেশ তথা নির্বাচন প্রশ্নে জামায়াতসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সবার সঙ্গে ঐক্য থাকাটাই মঙ্গল বলেও মনে করেন তিনি। দুই দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের বিষয়টি তিনি ইতিবাচকভাবে দেখছেন।

যশোর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, দেশে ফ্যাসিবাদ এবং ভারতীয় আধিপত্য ঠেকাতে আসলেই ঐক্যের বিকল্প নেই। একটি বিশেষ গোষ্ঠী ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই বিএনপি ও জামায়াতকে আলাদা করতে চায়। দুই দলের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়। মূলত ওই চক্রটিই জামায়াতের নামে কথিত কিছু ‘তকমা’ লাগিয়ে অপপ্রচার করে।

তিনি বলেন, আসলে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের খবর আমরা গণমাধ্যমে শুনেছি। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে আমরা জানি না। তারপরও বিষয়টি পজিটিভ। দলের একজন কর্মী হিসেবে বলতে চাই, জামায়াত কোনো সময় অনৈক্য চায়নি। এছাড়া বিএনপি ও জামায়াতের উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত কথা বলে জানা গেছে, শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের বিষয়টি তৃণমূলে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে আন্দোলন করে জামায়াত। পরে ক্ষমতায় এসে জামায়াতকে নিধনে নামে আওয়ামী লীগ। পরে ফের আওয়ামী লীগ ঠেকাতে ১৯৯৯ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট হয়। ২০০১ সালে জোটবদ্ধ নির্বাচন করে সরকার গঠন করে দল দুটি। সম্পর্কে উত্থান-পতন হলেও জোট ভাঙেনি।

২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ আন্দোলন করে বিএনপি ও জামায়াত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিবন্ধন হারানো জামায়াতের নেতারা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হন। ২০২২ সালে দু’দল আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ভেঙে দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নামে। প্রথম দিকে জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনে থাকলেও মাঝে কিছু সময় নানা অভিযোগ এন জামায়াত সেখান থেকে সরে দাঁড়ায়।

পরবর্তীতে ফের ২০২৪ এর নির্বাচনে আগে ও পরে বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করে জামায়াত। গত বছর জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার গণহত্যা চালায়। বিএনপি ও জামায়াতকে আন্দোলনের জন্য দায়ী করে ঢালাও মামলা এবং গ্রেপ্তার করে। ২৬ জুলাই জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয় বিএনপি।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 গাইবান্ধায় ১০ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারাবারি গ্রেফতার

গাইবান্ধায় ১০ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারাবারি গ্রেফতার

 শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

 সেনাবাহিনীর অভিযানে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ সন্ত্রাসী গ্রেফতার

সেনাবাহিনীর অভিযানে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ সন্ত্রাসী গ্রেফতার

 জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ

জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ

 তারেক রহমান-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি চলছে

তারেক রহমান-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি চলছে

সংশ্লিষ্ট

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র নিয়ে চলছে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা: এনসিপি

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র নিয়ে চলছে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা: এনসিপি

জামায়াত আমিরের হার্টে ৩ ব্লক, জরুরি সার্জারির সিদ্ধান্ত

জামায়াত আমিরের হার্টে ৩ ব্লক, জরুরি সার্জারির সিদ্ধান্ত

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেই আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হবে : ড. মঈন

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেই আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হবে : ড. মঈন

নির্বাচনে বাধা সৃষ্টিকারীর অবস্থান স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে: শামসুজ্জামান দুদু

নির্বাচনে বাধা সৃষ্টিকারীর অবস্থান স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে: শামসুজ্জামান দুদু