ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৫ ০৭:৪৯ পিএম
সংগৃহীত ছবি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খুব শিগগিরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে এবং সংস্কারের মধ্য দিয়ে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, শত নির্যাতনের পরও বিএনপির নেতাকর্মীরা দমে যায়নি, কখনো মাথা নত করেনি। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে স্বপ্ন ছিল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আসুন আজকে আমরা সেই শপথ গ্রহণ করি যে আমরা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। এ সময় দেশে ফ্যাসিবাদের পতন ও নির্বাচনের সময় ঘোষণা অর্জনে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানান বিএনপির মহাসচিব।
বুধবার (৬ আগস্ট) নায়াপল্টনস্থ বিএনপির কার্যালয়ের সামনে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিজয় র্যালির পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাদের সহযোগিতায় আমরা বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বের মধ্যে দিয়ে যে গণতন্ত্রকে আমরা রক্ষা করেছিলাম। আজকে আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সেই গণতন্ত্রকে উদ্ধার করব। আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করব। সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও মর্যাদার একটি রাষ্ট্র আমরা তৈরি করব। বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো।
বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আসুন আজকে আমাদের সবার পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আমাদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। আমি ধন্যবাদ জানাবো দেশের সমস্ত মানুষকে, রাজনৈতিক দলগুলোকে, ছাত্রদেরকে এবং এটি না বললেই নয় আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকেও আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাবো। তাদের সহযোগিতায় আমরা বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।
এর আগে আজ সকালে রাজধানীর গুলশানস্থ চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি জুলাই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানায়। বিএনপি বিশ্বাস করে, এই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক দলগুলো যে অঙ্গীকার করেছে তা পালনের মধ্য দিয়ে এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরের কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় হিসেবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিকে নির্ধারণের ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। বিএনপি মনে করে, এই ঐতিহাসিক ঘোষণায় বাংলাদেশ রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠবে এবং গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ সুগম হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, মানুষের সংঘবদ্ধ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে। ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ফ্যাসিস্ট হাসিনা। এই অভ্যুত্থানের ফলে মানুষের মনে নতুন আশা আবারও সৃষ্টি হয়, এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজনৈতিক কাঠামো ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে নতুন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করেন।
মহাসচিব বলেন, বিএনপি এই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানায়। বিএনপি বিশ্বাস করে, এই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক দলগুলো যে অঙ্গীকার করেছে তা পালনের মধ্য দিয়ে এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরের কাজ শুরু হবে।
তিনি আশা করেন, এর মাধ্যমে সুযোগ সৃষ্টি হবে একটি সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে সত্যিকারের প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের। বিএনপি সেসব রাজনৈতিক দল, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ সকল স্তরের জনগণ যারা এই সংগ্রামে অংশ নিয়েছে, শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে- তাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসের বৈঠক অনুযায়ী নির্বাচনের সময় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্ধারণের ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি মনে করে, এই ঐতিহাসিক ঘোষণায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠবে এবং গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ সুগম হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিএনপি এই নির্বাচনকে সফল করে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার এবং একটি কার্যকর জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিগত এক বছরে অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গণতন্ত্রের পথকে সুগম করার উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. ইউনূস, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সব সদস্য, যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছে এবং প্রত্যাশা করছে, অতিদ্রুত রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের বাকি কাজগুলো সম্পন্ন হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর এই দেশের মানুষ এক ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, প্রাণ দিয়েছে, শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে, গুম হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পরিকল্পিতভাবে এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে তিনটি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।
তিনি বলেন, অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, গুম, খুনের মধ্য দিয়ে সেই সংগ্রাম ও আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছে। বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার, সাজা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে সাজানো মিথ্যা মামলায় ১০ বছর সাজা দিয়ে ৬ বছর কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিল। তিনি ৫ আগস্ট মুক্তি পেয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতাকে আজীবন কারাদণ্ড প্রদান করে বিরোধী নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেছে। কারাগারেই অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল তারা। নির্যাতিত, শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে প্রতিটি নেতাকর্মী লড়াই করেছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ