শেখ হাসিনা জাতির কলঙ্ক, তাকে ক্ষমা নয়: মির্জা ফখরুল
শেখ হাসিনা জাতির কলঙ্ক, তাকে ক্ষমা নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে কখনো ক্ষমা করা যাবে না। বাংলার মাটিতে তার বিচার হবেই। স্বৈরচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ হত্যা করছে, পুড়িয়ে মারছে, কি নির্মম নৃশংস অমানবিক। আমাদের প্রথম কাজ হবে এদের বিচার করা।জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ও আমরা বিএনপি পরিবারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত রোববার (২০ জুলাই) রাজধানীর শেরে বাংলানগরের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল ও আমরা বিএনপি পরিবার যৌথ ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সবুজ পল্লবে স্মৃতি অম্লান কার্যক্রম শীর্ষক উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।এ সময় মাজার প্রাঙ্গণে একটি করে নিম গাছ লাগানো হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি করছে এটি তারই অংশ। কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সঞ্চালনায়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলসহ চার শহিদ পরিবারের স্বজনরা। অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম শামসুল ইসলাম শামস, বাদলুর রহমান বাদল, সাইফ আলী খান, মোকছেদুল মোমিন মিথুন, জাহিদুল ইসলাম রনি, শফিকুল হক সাজু ও হাসনাইন নাহিয়ান সজীবসহ কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের রাজনীতিটা অত সহজ পথ নয়, গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো থাকে না, এখানেও সমস্যা থাকবে, সেটাই রাজনীতি। কিন্তু এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ভিন্নমত থাকবে, বহুমাত্রিক পথ থাকবে, কেউ গণতন্ত্রের বিশ্বাস করবে, কেউ সমাজতন্ত্রের বিশ্বাস করবে, কেউ আপনার ওয়েলফেয়ার স্টেটে বিশ্বাস করবে। সব গুলোকে মিলিয়ে সেই রকম একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করা হবে, অনেক আগেই আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন।রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছেন, সেই দফার মধ্যে আজকে যে সংস্কারের প্রশ্নটা ওঠেছে, সংস্কারের যে প্রস্তাবগুলো আসছে তার প্রত্যেকটি প্রস্তাব আমরা ২০২২ সালে দিয়েছি।জুলাই আন্দোলনে এক শহীদের মায়ের আহাজারি কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, যে ছেলেটাকে দেখে স্বপ্ন দেখেছি আমার পরিবার স্বপ্ন দেখেছে আমার ভবিষ্যতের, সে ছেলেটাকে কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে এক মর্মান্তিক ও নিদারুণভাবে। তাকে গুলি করে মেরেছে। পড়ে গিয়েছে তারপর একটি ভ্যানের মধ্য উঠিয়েছে। বেঁচে আছে নাকি মরে গিয়েছে সেটা না দেখে আরও কয়েকটি লাশ উঠিয়েছে। পরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। চিন্তা করেন একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক আমরা। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ করেছি একটা স্বাধীন দেশের জন্য। সেই দেশের পুলিশ প্রশাসন রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে, যাদের বেতন আমার আপনার ট্যাক্সের টাকায় হয়। তারা আজকে আমার লেকে আমার সন্তানকে পুড়িয়ে মারছে, হত্যা করছে। কি নির্মম পাশবিক!এমন নিষ্ঠুর ও অমানবিকতার জন্য হাসিনাকে কখনো ক্ষমা করা যাবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, হাসিনাকে কোনদিন ক্ষমা করা যাবে না। হাসিনা মানবজাতির কলঙ্ক। হাসিনা মায়েরদের কলঙ্ক। আমাদের প্রথম কাজ হবে এদের বিচার করা। দ্বিতীয় কাজ হবে শহীদ পরিবারদের পুনর্বাসন করা। যারা আহত হয়েছে তাদের উন্নত চিকিৎসা দিয়ে পুনর্বাসন করা। এটা না হলে ভবিষ্যত জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না।জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবারদের জন্য ফান্ড তৈরি করবে বিএনপি’র উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বার বার বলেছি নির্বাচন হবেই নির্বাচনে কে দায়িত্ব পাবে বা না পাবে সেটা পরের কথা। আজকেই আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বলবো দলের পক্ষ থেকে একটা ফান্ড করবো। যাতে আহত ও শহীদ পরিবারদের পুনর্বাসন করা যায়। ইতোমধ্যে আমাদের ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ থেকে জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবারের পাশে তারা দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিতে যে সংকট প্রকাশ্যে এসেছে তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। উদ্ভূত সমস্ত সংকট এড়াতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ক্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ দেবে এ প্রত্যাশা করছেন বিএনপির মহাসচিব।মির্জা ফখরুল বলেন, জুলাই আন্দোলনে শহিদের সংখ্যা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতে চাই না। আমার কতজন শহীদ হয়েছেন, আমার কতজন নিহত হয়েছেন, আমরা কত ত্যাগ স্বীকার করেছি, কারা কী কাজ করেছি এই বিতর্কে আমি যেতে চাই না। কারণ ওটা আমার কাছে মনে হয় স্বার্থপরতার একটা ব্যাপার আছে। আমার দায়িত্ব হচ্ছে এই জাতিকে আমাকে উপরে তুলতে হবে, যে প্রাণগুলো গেছে, যারা জীবন দিয়েছে তারা কিন্তু জীবন দিয়েছে ঘোষণা করেই দিয়েছে যে, আমরা ফ্যাসিস্টকে সরাবো, জাতিকে একটা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই। সত্যিকার অর্থে একটি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি কাজ করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মানুষ যেন সুস্থ ভাবে স্বাধীনভাবে কমফোর্টেবল ওয়েতে স্বস্তির সঙ্গে যেন চলাফেরা করতে পারে সেই ধরনের একটা রাষ্ট্র চাই।ভোরের আকাশ/এসএইচ