সকল সেবা কার্যক্রম বন্ধ
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৫ ০৭:১৮ পিএম
থমথমে নগর ভবন
ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসির মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবির আন্দোলনে বন্ধ হয়ে গেছে সব সেবা কার্যক্রম। নগর ভবন এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে থমথমে পরিবেশ। আন্দোলনের মধ্যে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নগর ভবনে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছে। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। এতে নগর ভবন থেকে সেবাসংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে নগর ভবনে প্রবেশের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে না বসানোর প্রতিবাদে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তার সমর্থক ও অনুসারীরা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন বলেন, তারা নগর ভবনে মোট ৬৫টি তালা লাগিয়েছেন। সরেজমিন তালা লাগানোর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তাদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কার্যত অঘোষিত ছুটি পালন করছেন। তাদের কেউ নগর ভবনে ঢুকতে পারছেন না। নগর ভবনে স্থানীয় সরকার বিভাগেরও অফিস রয়েছে। এখানেই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অফিস করেন। তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার কারণে এই অফিসেরও সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তি বলেন, কর্মসূচি পালনের দ্বিতীয় দিনে গত বৃহস্পতিবারও নগর ভবনের সব ফটকে তাল ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন থেকেই কার্যত নগর ভবন থেকে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৯টার দিকে নগর ভবনের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। তারা বেলা ১১টা পর্যন্ত নগর ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যান তারা। সচিবালয়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গেলেও চারদিকে পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে ইশরাকের সমর্থকেরা সচিবালয়ের সামনে যেতে পারেননি। বেলা দেড়টার দিকে নগর ভবনের সামনে আজ রোববারের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা।
এ সময় অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মশিউর রহমান বলেন, রোববারও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে ‘ঢাকাবাসী’।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শাহবাগ এলাকার খলিল শাহীন নামে একজন বলেন, ইশরাকের শপথ নিয়ে সরকার টালবাহানা করছে, বিএনপির নেতারা যেন ভালো কোনো অবস্থানে যেতে না পারে।
ধানমন্ডির শাহাদাত হোসেন সৈকত বলেন, ইশরাক হোসেন জনতার মেয়র। স্বৈরাচার সরকারের আমলে জনগণের রায় কেড়ে নিয়ে আরেকজনকে মেয়র পদে বসানো হয়েছিল। এখন আদালত রায় দিয়েছেন উনাকে মেয়র স্বীকৃতি দিয়ে। কিন্তু সরকার শপথ নেয়ার ব্যবস্থা করছে না।
নগর ভবনের প্রধান ফটকে দেওয়া বক্তব্যে সাবেক সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে নগর ভবনে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আসিফ মাহমুদকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হল। তাকে যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিহত করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের ১৪ ও ১৫ তলায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অফিস। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের পর স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রম সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা সেখানেই বসেন। তবে গত বুধবার থেকে তিনি নগর ভবনে আসছেন না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, স্যার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টা। সে কারণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনের ওনার অফিস আছে। আপাতত সেখানে বসছেন তিনি।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন ইশরাক সমর্থকেরা। এতে নগর ভবনের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় নগর ভবনের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ছোট গেট দিয়ে ভেতরে যাওয়া যাচ্ছিল। এ সময় বিক্ষুব্ধরা নগর ভবনের বিভিন্ন কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে আসতে পারেননি।
ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের আজ অফিস খোলা ছিল। তবে অফিসে তালা দেওয়ায় সেখানে যেতে পারছি না। বাইরে ঘুরে চলে আসছি। কেবল নগর ভবন নয়, সংস্থাটির ১০টি আঞ্চলিক অফিসেও সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা।
একটি অঞ্চলের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইশরাকের সমর্থকেরা আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতেও বিক্ষোভ করেছেন। তারা সেখানে কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে প্রবেশ করতে দেননি। বেলা দুইটার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সামনে মেয়ে ও ভাইকে নিয়ে জুরাইন এলাকা থেকে বাবার মৃত্যুসনদ নিতে এসেছিলেন নাসরিন বেগম। নগর ভবনে তালা লাগিয়ে দেওয়ার কারণে তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এর আগে গত বৃহস্পতিবারও তিনি বাবার মৃত্যুসনদ নিতে এসেছিলেন। আন্দোলনের কারণে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। গতকাল এসে দেখছেন সব ফটকে তালা ঝুলছে। এখন তিনি কী করবেন বুঝতে পারছেন না। একই সময়ে মোটরসাইকেলে করে গুলশান এলাকা থেকে এক আত্মীয়র জন্মনিবন্ধনের তথ্য জানতে নগর ভবনে এসেছিলেন শাওন আহমেদ। মূল ফটক তালাবদ্ধ থাকায় তিনি ভেতরে ঢুকতে পারেননি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দাবির শহর ঢাকায় তাঁদের মতো সাধারণ মানুষেরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন। এসব ভোগান্তির দ্রুত অবসান চান তারা।
আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ১৮ দিন পর গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২০২০ সালের মেয়র নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের দায়েরকৃত নির্বাচনী মামলার রায় ও নির্বাচন কমিশনের আপিল দায়ের না করা বিষয়ে কোনো আইনি জটিলতা আছে কি না, সে বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত ‘মতামত প্রদানসংক্রান্ত’ শিরোনামে চিঠিটি গত বৃহস্পতিবার আইন ও বিচার বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নগরের বাসিন্দারা। সেদিন নগর ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি চলে। সেই কর্মসূচিতে নগরবাসীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকালও তারা এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ ও মিছিলে অংশ নেন।
নগর ভবনের সামনে অবস্থানকারী বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, এখন পর্যন্ত ইশরাকের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই তারা ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ