কেক না কাটার নির্দেশ বিএনপির
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫ ০২:৪৫ পিএম
ফাইল ছবি
তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন আজ। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ ঢাকাসহ সারা দেশে দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
বিএনপির উদ্যোগে বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর যুবদল নেতাকর্মীরা উক্ত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়াও জেলা ও মহানগর এবং জেলা ও মহানগরের অধীন ইউনিটসমূহ স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে স্ব স্ব ইউনিটে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে যুবদল ও ছাত্রদল। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ছাত্রদলের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে। একইদিন সারাদেশে সকল বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা ও মহানগরে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও রোববার সারাদেশে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
খালেদা জিয়ার জন্মদিনে কেক না কাটার নির্দেশ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিনে কেক কাটা বা অন্য কোনো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন না করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে দলটি।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ নির্দেশনা দেন। তিনি জানান ১৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে তার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় এবং একই সঙ্গে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী শহীদ, ৯০ এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় বিএনপির উদ্যোগে সারাদেশে দলীয় কার্যালয় অথবা মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
রিজভী জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ছাড়া কেক কাটা কিংবা অন্য কোনো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান না করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে খালেদা জিয়া জন্মগ্রহণ করেন। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে খালেদা জিয়া চতুর্থ। বাবা এস্কান্দর মজুমদার, মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। পৈত্রিক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখেন গৃহবধূ বেগম খালেদা জিয়া। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে তিন দফা বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া।
বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী। তার আগে কেবল বেনজির ভুট্টোই মুসলিম কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি তিনবার গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।
এতেই বোঝা যায়, দেশপ্রেমিক খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদতের পরে তিনি জনগণ ও দলের স্বার্থে রাজনীতিতে আসেন। অথচ রাজনীতির প্রতি তার কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু দেশ তার কাছে ছিল পরিবারের চেয়েও বড় কিছু।
টানা ২৯ বছর তিনি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এ পর্যন্ত যতগুলো আসনে নির্বাচন করেছেন তার সব কয়টাতেই বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। পরাজয় তার ইতিহাসে নেই। দেশের জন্যে ত্যাগ কাকে বলে সেটা জানা যায় জীবনী থেকে।
একাত্তরে স্বামী গেছেন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে আর তিনি ছিলেন পাক হানাদারদের হাতে বন্দি। কিন্তু কখনো বীরাঙ্গনা হিসেবে বাড়তি কোনো শ্রদ্ধা বা সুযোগ-সুবিধা তিনি দাবি করেননি। তার সময়ে যত রাস্তা, ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট তৈরি হয়েছে বাকি সরকারের সময় যোগ করেও এতগুলো তৈরি হয়নি। তিনি দেশের সবচেয়ে বড় সেতু যমুনা সেতু তৈরি করে উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি স্বামীর মতই দক্ষভাবে পাকিস্থানসহ মুসলিম বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করেন। যার ফলে কোটি কোটি মানুষ আজ আরব বিশ্বে চাকরি করে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। এটা তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা আর বিচক্ষণতার ফলেই সম্ভব হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন দক্ষ কূটনীতিক এবং দার্শনিক বটে। তার সময়ে দ্রব্যমূল্য মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে রেখেছিলেন। তিলে তিলে কষ্ট করে তিনি দেশটাকে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দারিদ্র্যমুক্ত করেছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে সে অনেক উদার ও বড় মনের মানুষ। যদিও ছাত্রজীবনে সে বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি তবু সে ছিলেন অনেক মেধাবী ছাত্রী। দিনাজপুর সরকারি স্কুল ও কলেজ থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক, আইএ ও বিএ পাস করেন।
সরকার পরিচালনায়ও তিনি মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি দুই পুত্র সন্তানের গর্বিত জননী। তার বড় পুত্র তারুণ্যের অহংকার দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপির নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান। ছোট পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে তার রয়েছে বিপুল অবদান। বেগম খালেদা জিয়া দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং নিয়মিত রোজা রাখেন। তিনি বহুবার পবিত্র হজ পালন করেছেন।
ভোরের আকাশ/মো.আ.