চাঁদাবাজ-দুর্নীতিবাজ সিস্টেম পরিবর্তনের ঘোষণা নাহিদ ইসলামের
চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘‘এই চাঁদাবাজ-দুর্নীতিবাজ সিস্টেমের পরিবর্তন আমরা করব, শহীদদের প্রতি সেটাই আমাদের অঙ্গীকার।’’
শনিবার (১২ জুলাই) রাতে বাগেরহাটের রেল রোড এলাকায় আয়োজিত পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এটি ছিল এনসিপির ১২তম দিনের কর্মসূচি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা কোনো দলের বিরুদ্ধে নই, আমরা কথা বলি সেই পুরোনো বন্দোবস্ত, দুর্নীতি ও মাফিয়া সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। জনগণ আর সেই চাঁদাবাজদের মেনে নেবে না। যারা এই সিস্টেমকে টিকিয়ে রাখতে চায়, তারা জনগণের রোষানল থেকে বাঁচতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “এই তরুণ প্রজন্ম কোনো ভাগাভাগির নির্বাচনী রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা বলেছি, রাষ্ট্র সংস্কার ও দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যেই আমাদের দরজা খোলা। কিন্তু যারা এখনো সংস্কারের বিরোধিতা করছেন, তারা সতর্ক থাকুন—জনগণ রাজপথে নেমে পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও সক্রিয় হচ্ছে।”
পথসভায় নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “আমরা অতীতে গণঅভ্যুত্থান করেছিলাম মাফিয়া, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। দুর্ভাগ্যবশত, এখনো তাদের বিতাড়িত করতে পারিনি। তাই আবার এসেছি। জনগণের আস্থা নিয়ে এগোতে চাই। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে—এটা হবে জুলাই বা আগস্টের মধ্যেই।”
পুলিশ প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “জনগণের পক্ষে দাঁড়ান, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিন। যদি দলবাজ প্রশাসনের ভূমিকা পালন করেন, তাহলে ফ্যাসিবাদের সময় যারা সেই পথ ধরেছিল, তাদের মতো পরিণতি আপনাদেরও হবে।”
পথসভায় আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সচিব ডা. তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আবিদ এবং বাগেরহাট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়াদ মোরশেদ আনোয়ার।
এছাড়াও এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাহিদা সারওয়ার নিভা, ডা. মাহমুদা মিতু, মোল্যা রহমাতুল্লাহ, তাজনুভা জাবিনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
পথসভা শুরুর আগে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা বাগেরহাটের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন।
কালের সমাজ//হ.র
সংশ্লিষ্ট
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ভোটের প্রতীক শাপলা নিয়ে বৈঠকে বসেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি প্রতিনিধি দল।রোববার (১৩ জুলাই) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ৫ সদস্যর প্রতিনিধি দল।প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ১১টার দিকে এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ ৫ সদস্যর প্রতিনিধি বৈঠকে বসেন।গত বুধবার (৯ জুলাই) জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধনের লক্ষ্যে প্রতীকের তফসিলে ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি, যা ওইদিনই আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়। তবে শাপলা প্রতীক তালিকায় রাখা হয়নি। এর আগে গত ২২ জুন নিবন্ধন আবেদন দাখিলের সময় শাপলা প্রতীক চায় এনসিপি। গত ১৭ এপ্রিল মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য একই প্রতীক চায়। এছাড়া দুটি দলই শাপলা নিয়ে একাধিকবার ইসির সঙ্গে বৈঠক করে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বোমাবাজি করে, কয়েকজনকে আহত করে যারা বিএনপিকে দমানোর চেষ্টা করছে তারা শেখ হাসিনার পথেই হাঁটছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ককটেল মেরে কিংবা বোমাবাজি করে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে দমন করা যাবে না।শনিবার (১২ জুলাই) রাত সোয়া ১০টার দিকে এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।দুষ্কৃতকারীদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, আপনারা যে পথে হাঁটছেন, এটা শেখ হাসিনার পথ। তারা শেখ হাসিনার পথে হাঁটছে আর ভাবছে এই পথ সাকসেস। এই পথ যদি সাকসেস হতো, তাহলে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে কখনও দমন করা যায়নি। শত শত মামলা, বোমা মেরে কিংবা ককটেল মেরে বিএনপির নেতাকর্মীদের দমানো যায়নি। বিএনপিকে কেউ দমন করতে পারবেও না।এর আগে রাজধানীর নয়াপল্টনে শনিবার (১২ জুলাই) রাত ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলে যায়। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে এ ঘটনায় পরিবহন যাত্রী ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, দেশে সন্দেহভাজন বিদেশিদের আগমন বেড়েছে। বিভিন্ন মিশন চালু হচ্ছে। সব অপকর্ম ইচ্ছাকৃতভাবে করছে সরকার, সরকার কারো উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে, এটি দেশপ্রেমিক সরকার নয়।শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দীন পিন্টুর স্মরণে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। প্রশাসনে বিএনপি নিধন করে আওয়ামী-জামায়াতপন্থিদের স্থলাভিষিক্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘অনেক উপদেষ্টা যারা দেশের নাগরিক না, তারাই দেশ পরিচালনা করছেন। মনে হচ্ছে ঔপনিবেশিক শাসন চলছে দেশে। করিডর নিয়ে জামায়াত-এনসিপি কেউ কথা বলছে না।’‘সেন্টমার্টিন, সাজেক নিয়ে এনসিপি কেন কথা বলছে না’- দলটির কাছে এমন প্রশ্ন রেখে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিশ্বের ডিকশনারিতে মানবিক করিডর বলে কিছু নেই। প্রয়োজনে একেকটা নাম দিয়ে এসব বানানো হচ্ছে। আমরা কেন সেন্টমার্টিন যেতে পারব না, আমি এনসিপির ভাইদের বলতে চাই আপনারা এই বিষয় নিয়ে কথা বলেন না কেন। দেশ ভালো অবস্থানে নেই। আবার আমরা শুনতে পাচ্ছি, মানবিক করিডর দেওয়া হবে। কেন, কার স্বার্থের জন্য করিডোর? জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোনো করিডর দেওয়ার অধিকার এই সরকারের নেই।’মানবিক করিডর নিয়ে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নীরবতা তুলে ধরে বিস্ময় প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। বিএনপি ছাড়া করিডর নিয়ে কেউ কথা বলছে না। জামায়াত, চরমোনাই কেউ কথা বলছে না। বিএনপিকে শেষ করতে পারলেই আওয়ামী লীগের মতো দেশ লুটেপুটে খাওয়া যাবে।’‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের আড়ালে দেশে সাজানো নাটক চলছে’ মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ভিআইপি ট্রিটমেন্ট নিতে দেশ ছাড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। অথচ সরকার কিছু জানে না, তারা কী জানে তাহলে? আওয়ামী লীগ নেতাদের দেশ ছাড়ার ঘটনা আড়াল করতেই শাহবাগে নাটক সাজানো হয়েছে।’নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে সংগঠনের আহ্বায়ক সাইদ হাসান মিন্টুর সভাপতিত্বে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ওলামা দলের মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক প্রমুখ।ভোরের আকাশ/এসএইচ
একের পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটছে। হামলা, দখল, চাঁদাবাজি, থানায় প্রভাব বিস্তারসহ নানা ধরনের অভিযোগ প্রতিনিয়তই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব নিয়ে প্রতিবাদ উঠছে। গত বুধবার ঢাকায় এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়েছে। রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় চাঁদাদাবি, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে লাল চাঁদ মিয়া ওরফে মো. সোহাগ নামে ওই ভাঙারি ব্যবসায়ীকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা মধ্যযুগীয় বর্ববরতাকেও হার মানায়। সোহাগ ও তাকে হত্যাকারী পক্ষ সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে।দেশে সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু অপরাধমূলক ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর প্রশ্ন উঠছে; দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলটির নেতাকর্মীরা ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠছে কি-না অথবা দলটি মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কি-না।গত বছর পাঁচই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে নানা অপরাধমূলক ঘটনায় নাম আসার পর দলটির বিভিন্ন স্তরের বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। এরপরও হামলা, দখল, চাঁদাবাজি, থানায় প্রভাব বিস্তারসহ নানা ধরনের অভিযোগ প্রতিনিয়তই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে মাঠ পর্যায়ে অনেকে শুরুতে ক্ষোভ থেকে হামলা, চাঁদাবাজি ও হাঙ্গামায় জড়িয়েছেন। এখন আবার বহু বছর পর মাঠ পর্যায়ে অনেকটা ‘সরকারি দলের’ আমেজে থাকলেও বিএনপি এখনো ক্ষমতায় আসেনি, যার ফলে কর্মী সমর্থকরা কেউ অপরাধে জড়ালে কার্যত দলটির আর কিছু করার নেইÑ এ সুযোগেই অনেকে অপরাধে জড়াচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।আবার অনেকের মতে, দলটির শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে চেইন অব কমান্ড কাজ করছে না বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া অনেকেই ভাবছেন নির্বাচন কবে হবে ঠিক নেই- এই সুযোগে আগেই যা করার করে নেই, এমন মানুষিকতা থেকে দলটির অনেকে অপরাধে জড়ানোর এটিও একটি কারণ।তবে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ইতোমধ্যেই তারা বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রশাসনকেও আহ্বান জানিয়েছেন যে কেউ অন্যায় করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। বিএনপি বড় দল। কোনো ঘটনার জন্য ঢালাওভাবে দলকে দোষারোপের সুযোগ নেই তবে একটি পক্ষ কিছু ঘটলেও বিএনপির বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা শুরু করে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি যেই অপরাধ করুক ব্যবস্থা নিক তারা। আমরাও প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।দলটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র বলছে, সারাদেশে বিভিন্ন ঘটনায় গত বছর আগস্ট মাস থেকে শুরু করে চলতি মাস পর্যন্ত চার হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিয়েছে দলটি। এর মধ্যে ময়মনসিংহের একজন নেতার বিরুদ্ধে দল বাদী হয়ে মামলাও করেছে।সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাগত বুধবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) জনসমক্ষে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে বুক ও মাথা থেঁতলে দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।ভিডিওতে হত্যাকাণ্ডে যাদের দেখা যায়, তাদের মধ্যে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী শনাক্ত হয়েছে। ফলে এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিএনপির ব্যাপক সমালোচনা চলছে। অনেকে এ ঘটনাকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সময়ের ঘটনাগুলোর সঙ্গে তুলনা করছেন।এই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, কোনো দুষ্কৃতকারীর অপরাধের দায় দল নেবে না। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ঘটনার ভিডিও ফুটেজে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের যাদের দেখা গেছে, তাদের এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাদের সংগঠন থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। দল থেকে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিএনপির ওপর দায় চাপানো নোংরা রাজনীতির চর্চা বলে মনে করেন তিনি।জানা গেছে, সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় বিব্রত বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরেন। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামে পাটগ্রাম থানায় হামলার ঘটনা ঘটে।এ সময় একটি ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক মাসের সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে থানা থেকে জোর করে ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। পরে এ ঘটনা হওয়া মামলায় সরকারি কাজে বাধা, হত্যার উদ্দেশে সরকারি কর্মচারীকে মারধর, সরকারি সম্পদ ধ্বংস ও চুরি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় দুই জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। রাতেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাবের সহযোগিতায় পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে কয়েকজন বিএনপির ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের পদধারী নেতা। পরে ওই মামলায় আরও তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ যারা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতা।উপকূলীয় জেলা ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় বিএনপির অঙ্গসংগঠন শ্রমিক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের কর্মীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন ওই নারীর স্বামী। এ ঘটনাতেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। ওই একই এলাকায় ভিজিএফ চাল বণ্টন নিয়ে বিরোধ ও মহিলা দলের একজন নেত্রীকে মারধরের ঘটনায় দলীয় পদ হারিয়েছেন ভোলার তজুমদ্দিনের চাচড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হাওরাদার। এ ঘটনায় মহিলা দল নেত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।খুলনায় সুকান্ত দাস নামের পুলিশের এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় একদল নেতাকর্মী। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকার মহাখালী ওয়ারলেস গেট এলাকার হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বারে একজন যুবদল নেতার অনুসারীদের হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ওই যুবদল নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়ার পর রাজশাহী মহানগরের অধীন রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রবিউল আলমকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মনির ও পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য মাসুম বিল্লাহকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দলীয় কার্যালয়েই হামলা ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।পাটগ্রাম ও ভোলার ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার দুই দিন দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, বিএনপির এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ৪-৫ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তারা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। যারা দলের নামে, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নামে, সহযোগী সংগঠনের নামে দুর্বৃত্ত চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে অথবা দুর্বৃত্ত চক্র গড়ে তুলেছিল, অনৈতিক কাজের মধ্যে ছিল, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা চলমান থাকবে।ওদিকে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে প্রথম ছয় দিনেই সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় ৬৭ জনকে বহিষ্কার করেছিল বিএনপি। এরপর বিভিন্ন জায়গায় যখনই যা ঘটেছে সেগুলোর বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছিলেন লন্ডনে থাকা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সে অনুযায়ী দলের দপ্তর শাখা ব্যবস্থাও নিয়েছে।দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে যে ধারণা পাওয়া গেছে তা হলো, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপি নেতাদের অটোমেটিক একটি কর্তৃত্ব তৈরি হয়েছে। ফলে দলটির অনেকে তখনই স্থানীয় পর্যায়ে হামলা, দখল কিংবা চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের পতনের পর অনেকে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে নানা ঘটনায় জড়িয়েছেন, যা পরে দলের হাইকমান্ড নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে। আবার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পর অনেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব স্থাপনে উদ্যোগী হওয়ার কারণেও নতুন করে কিছু ঘটনা ঘটছে। তবে অপরাধমূলক ঘটনাগুলো নিতান্ত ব্যক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ বলেই মনে করেন তারা। পরবর্তীতে এসব নিয়েই প্রায় সব জায়গাতেই দলের মধ্যেই গ্রুপিং ও কোন্দল বেড়েছে কিন্তু দলীয় নেতা তারেক রহমান দেশে না আসায় দলটির সাংগঠনিক চেইন অব কমান্ড ততটা কার্যকর হয়ে ওঠেনি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মোস্তফা আল মামুন বলেন, বিএনপির মতো এমন বড় দলগুলোতে এটি একটি ‘মজ্জাগত সংকট’ যে তারা তাদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলায় রাখতে পারে না। এটা সহজ কাজও নয়। কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের। সেটি নিশ্চিত হলে কোনো দলের নেতাকর্মীদের অপরাধে জড়ানো সহজ হতো না। এবার শুরু থেকেই বিএনপির অনেকে মাঠপর্যায়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ, কর্তৃত্ব ও সুবিধা নিশ্চিত করতে নানা ঘটনায় জড়িয়েছে। আবার এমন ঘটনাও আছে যে, বিভিন্ন পক্ষ যেখানেই যাই ঘটুক শুরুতেই বিএনপিকে জড়িয়ে একটি প্রচার শুরু করে। কিছু ক্ষেত্রে বিএনপির লোকজন জড়িত এটা যেমন ঠিক, তেমনি দলটিকে বিতর্কিত করার একটি চেষ্টাও অন্য দু একটি দলের নেতাদের দিক থেকে দেখা যাচ্ছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ