নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫ ১২:৪৯ এএম
বিএনপিতে ২০০ আসনে দেড় হাজার মনোনয়নপ্রত্যাশী: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ৩০০টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর মধ্যে প্রায় ১০০ আসনে প্রার্থী নির্ধারণের কাজ অনেকটাই চূড়ান্ত হওয়ায় বাকি ২০০ আসনের জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি রয়েছে। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনায় এবার প্রার্থী বাছাইতে ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৩০০ আসনে প্রতিটি আসনে কমপক্ষে তিনজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী রাখা হয়। এখন নতুন করে যাচাই-বাছাই করে সবার মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য প্রার্থী বেছে নেওয়া হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করা হবে এবং সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হলে কিছু আসন ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি, নয়তো এককভাবে সব আসনে লড়াই করবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “দল ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরা সক্রিয়ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবার আমরা সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের প্রার্থী করব।” তিনি আরও জানান, বিগত নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি, তাই এবার ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রায় আড়াই হাজার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিল বিএনপির। এবার দলের সুবিধাজনক পরিস্থিতির কারণে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা আরও বেড়েছে। লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এই ঘোষণার পর থেকে দেশে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সরাসরি এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ এবং দলীয় হাইকমান্ডের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
তারেক রহমান লন্ডন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন এবং তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন। যেসব প্রার্থী ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তাদেরকেও মনোনয়ন প্রসঙ্গে নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা কয়েক মাসের মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের খসড়া তালিকা তৈরি করে তারেক রহমানের কাছে পাঠাবেন। তিনি তালিকাভুক্ত নেতাদের ব্যাপক খোঁজখবর নেবেন এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেবেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম এবং চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মতামত গ্রহণ করে।
বিএনপি হাইকমান্ড প্রার্থী করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে গত দেড় দশকের আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ত্যাগী নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া, সুশিক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের নির্বাচন করা। যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, দুর্নীতি বা চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে, তাদের প্রার্থী করা হবে না।
সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পেতে ন্যায়নিষ্ঠা ও জনপ্রিয়তা সম্পন্ন নারী নেত্রীদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, “ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সব সময় বিএনপির সঙ্গে রাজপথে ছিলাম। দলের শীর্ষ নেতারা শরিকদের যথাযথ মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়েছেন এবং আশা করছি সম্মানজনক আসন পাবে শরিকরা।”
এভাবে বিএনপি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি আরও জোরদার করছে এবং আগামী নির্বাচনে মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।
ভোরের আকাশ//হ.র