মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে আটক তিনজন দেশে ফিরেছেন : আসিফ নজরুল
মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে দেশে ফিরেছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
শুক্রবার (৫ জুলাই) রাতে গণমাধ্যমকে তিনি জানান, “যারা মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসছেন, তাঁদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যদি জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে, তবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
এর আগে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেট (আইএস) মতাদর্শ প্রচার ও অর্থ সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত একটি বাংলাদেশি শ্রমিকচক্র ভেঙে দিয়েছে মালয়েশীয় পুলিশ। চক্রটির সদস্যরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে আইএস-এর কাছে অর্থ পাঠাত বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, “চক্রটি অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের টার্গেট করে সদস্য সংগ্রহ করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উগ্রবাদ ছড়াত।” গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হওয়ায় মামলা হয়েছে। আরও ১৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। বাকি ১৬ জন এখনো মালয়েশিয়ান পুলিশের হেফাজতে আছেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
পুলিশপ্রধানের ধারণা, এই চক্রে ১০০ থেকে ১৫০ জন সদস্য থাকতে পারে। যাদের সংশ্লিষ্টতার মাত্রা কম, তাদের ফেরত পাঠানো হবে, আর যেসব ব্যক্তি গভীরভাবে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “মালয়েশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। সেখানে কয়েক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এ ধরনের ঘটনা খুবই বিব্রতকর এবং আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।”
তিনি আরও বলেন, “বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আমরা মালয়েশিয়ার উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং যৌথভাবে কাজ করবো। দেশের ভেতরে বা বাইরে—কোনো অবস্থায় জঙ্গিবাদকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কঠোর।”
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার কারখানা, কৃষি ও নির্মাণ খাতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে দেশটিতে পাড়ি জমান। ২০১৬ সালে কুয়ালালামপুরে আইএস সংশ্লিষ্ট এক হামলার পর থেকে দেশটিতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়, যার ধারাবাহিকতায় বহু ব্যক্তি আটক হন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রেপ্তার তুলনামূলকভাবে কম হলেও, নিরাপত্তা বাহিনী এখনো সক্রিয় রয়েছে।
ভোরের আকাশ//হ.র
সংশ্লিষ্ট
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে উদ্দেশ্য করে সাবেক এমপি ও রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ইউনূস সরকারকে ডুবানোর জন্য বাইরের কারও দরকার নেই, এই লোকটিই যথেষ্ট।শুক্রবার (০৪ জুলাই) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।পোস্টে প্রেস সচিবের ছবি যুক্ত করে গোলাম মাওলা রনি বলেন, ছবির ভদ্রলোকের একটি নাম আছে। কিন্তু তার নামের সঙ্গে হাল আমলে এমন এক উপাধি যুক্ত হয়েছে, যা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মানুষের মন মস্তিষ্কে কিয়ামত পর্যন্ত ঘুরপাক খাবে। এই ধরনের লোকদের সম্পর্কে আমি সাধারণত কথা বলি না। কিন্ত রাষ্ট্রের হয়ে তিনি এমন কিছু করছেন এবং এমন কিছু বলছেন; যার প্রতিবাদ করা নাগরিকদের জন্য ফরজে আইন। আর তাই একটি টেলিভিশন টকশোতে বলেছিলাম - ইউনুস সরকারকে ডুবানোর জন্য বাইরের কারো দরকার নেই, এই লোকটিই যথেষ্ট!সাবেক এই এমপি আরও বলেন, মব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমি বলেছি- নূর হোসেন এরশাদ জমানায় মবের শিকার হয়ে শহীদ হয়েছেন। মব যার ইংরেজি নাম ‘জঙ্গল জাস্টিস’- তা কেবল জনগণ করে না, রাষ্ট্রীয় বাহিনীও করে।ভোরের আকাশ/জাআ
মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে দেশে ফিরেছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।শুক্রবার (৫ জুলাই) রাতে গণমাধ্যমকে তিনি জানান, “যারা মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসছেন, তাঁদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যদি জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে, তবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”এর আগে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেট (আইএস) মতাদর্শ প্রচার ও অর্থ সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত একটি বাংলাদেশি শ্রমিকচক্র ভেঙে দিয়েছে মালয়েশীয় পুলিশ। চক্রটির সদস্যরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে আইএস-এর কাছে অর্থ পাঠাত বলে অভিযোগ রয়েছে।পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, “চক্রটি অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের টার্গেট করে সদস্য সংগ্রহ করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উগ্রবাদ ছড়াত।” গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।আটক ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হওয়ায় মামলা হয়েছে। আরও ১৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। বাকি ১৬ জন এখনো মালয়েশিয়ান পুলিশের হেফাজতে আছেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।পুলিশপ্রধানের ধারণা, এই চক্রে ১০০ থেকে ১৫০ জন সদস্য থাকতে পারে। যাদের সংশ্লিষ্টতার মাত্রা কম, তাদের ফেরত পাঠানো হবে, আর যেসব ব্যক্তি গভীরভাবে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “মালয়েশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। সেখানে কয়েক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এ ধরনের ঘটনা খুবই বিব্রতকর এবং আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।”তিনি আরও বলেন, “বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আমরা মালয়েশিয়ার উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং যৌথভাবে কাজ করবো। দেশের ভেতরে বা বাইরে—কোনো অবস্থায় জঙ্গিবাদকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কঠোর।”উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার কারখানা, কৃষি ও নির্মাণ খাতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে দেশটিতে পাড়ি জমান। ২০১৬ সালে কুয়ালালামপুরে আইএস সংশ্লিষ্ট এক হামলার পর থেকে দেশটিতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়, যার ধারাবাহিকতায় বহু ব্যক্তি আটক হন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রেপ্তার তুলনামূলকভাবে কম হলেও, নিরাপত্তা বাহিনী এখনো সক্রিয় রয়েছে।ভোরের আকাশ//হ.র
যুব, ক্রীড়া ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, জুলাই মাসে শহীদ হতে না পারা তাঁর জন্য এক ধরনের আফসোসের বিষয়। শুক্রবার (৫ জুলাই) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এমন মন্তব্য করেন।স্ট্যাটাসে আসিফ মাহমুদ লেখেন, “গত বছর জুলাইতেও আমাদের হত্যার সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিল একজন। এ দেশের জনগণ তার পরিণতি কী করেছে, তা সবারই জানা।”তিনি স্মরণ করেন, “৩৬ জুলাই শহীদ হওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলাম। শাহাদাতের সুযোগ এলে কখনো পিছপা হবো না।”জুলাই মাসকে প্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ আরও লেখেন, “জুলাই এদেশে লক্ষ-কোটি বিপ্লবীর জন্ম দিয়েছে।”তিনি বলেন, “আমি বা আমরা না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ, আমাদের ভিশন ক্ষণস্থায়ী জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের জন্য যেসব বিপ্লবী প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত, তাদের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে—যতদিন না দেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।”স্ট্যাটাসের শেষদিকে অতীতের হামলার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি লেখেন, “একটারে মারি, একটাই যায়; বাকিডি যায় না স্যার। ভুলে গেছেন?”তাঁর এই স্ট্যাটাস ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।ভোরের আকাশ//হ.র
এক সময় যাকে বলা হতো ‘শহুরে রোগ’, সেই ডেঙ্গু এখন শহরের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। চলতি ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই ঢাকার বাইরের অর্থাৎ গ্রাম ও মফস্বল এলাকায়। অথচ প্রতিরোধ পরিকল্পনা, জরিপ, ও নজরদারি- সবই সীমাবদ্ধ রাজধানী ও কিছু নগর ঘিরে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার পাঁচগুণ বেড়েছে। তবে এটি এবার গ্রামে বেশি আতঙ্ক ছড়ালেও প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এখনও মূলত নগরকেন্দ্রিক, বিশেষ করে ঢাকা শহর ঘিরে। ফলে একদিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও অন্যদিকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে ডেঙ্গু রোগীর ভৌগোলিক বিস্তারে পরিবর্তন ঘটেছে। ২০২১ সালেও যেখানে ডেঙ্গু ছিল মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক- সেবার রোগীর ৮৩.০৭ শতাংশই রাজধানীতে ছিল। সেই চিত্র এখন সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। ২০২২ সালে ঢাকার রোগীর হার কমে দাঁড়ায় ৬২.৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ঢাকার বাইরের রোগী বেড়ে হয় ৩৭.১৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো রাজধানীর বাইরে রোগীর সংখ্যা ঢাকাকে ছাড়িয়ে যায়। সেবার ঢাকায় ছিল ৩৩.৮৫ শতাংশ, আর ঢাকার বাইরে ছিল ৬৬.১৫ শতাংশ। ২০২৪ সালে এ পার্থক্য আরও বেড়ে দাঁড়ায় ঢাকায় ৩৯.৩০ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে ৬০.৭০ শতাংশ। এমনকি চলতি বছরের (২০২৫ সাল) ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত (৩০ জুন) দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১০ হাজার ২৯৬ জন। এর মধ্যে আট হাজার ৬২ জন (৭৮.৩ শতাংশ) রোগীই রাজধানী ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ থেকে শনাক্ত হয়। অন্যদিকে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শনাক্ত হন দুই হাজার ২৩০ জন (২১.৭ শতাংশ) রোগী। পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছরে ডেঙ্গু রোগী ঢাকার বাইরে পাঁচগুণ বেড়েছে। অথচ ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি পরিকল্পনা ও মনোযোগ এখনও ঢাকাকেন্দ্রিক রয়ে গেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি গ্রামীণ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেওয়া না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছর ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের সর্বাধিক সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগের সিটি কর্পোরেশনের বাইরের এলাকাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চার হাজার ৫৯১ জন রোগী, যা দেশের সব বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ।এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের সিটি কর্পোরেশনের বাইরের এলাকা থেকে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৫২৬ জন। ঢাকা বিভাগের বাইরের অংশেও এক হাজার ৮ জন রোগী পাওয়া গেছে। রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনেও রোগীর সংখ্যা কম নয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এক হাজার ৪০৩ জন, আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮৩১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। খুলনা বিভাগের বাইরে ৩৪৩ জন, রাজশাহীতে ৪০১ জন, ময়মনসিংহে ১৩৬ জন, সিলেটে ৩০ জন এবং রংপুর বিভাগে মাত্র ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায়, গত ২৪ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে যথাক্রমে ১৫৭, ১১৮, ৭৪, ১০৭, ১৪১, ১৩৬ ও ১৪৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে গত এক সপ্তাহে যথাক্রমে ৫৮, ৪৩, ৮, ১১, ৪০, ৫৫ ও ৫৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহীতে গত এক সপ্তাহে যথাক্রমে ৪৪, ২৯, ১৮, ৬, ৩৩ ও ৫৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।এছাড়া খুলনা বিভাগে ৮, ১৬, ৬, ৪১ ও ২১ জনের; ময়মনসিংহ বিভাগে ৫, ২, ৬ ও জনের; সিলেট বিভাগে ১, ৩, ২ ও ৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) যথাক্রমে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৩৫, ৪৩, ৩০, ১২, ১৮, ৪৮ ও ৬১ জনের। সেইসঙ্গে এই সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫০, ৪৫, ৩২, ৬, ৪০, ২৮ ও ৪৫ জনের এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে যথাক্রমে ৪২, ২৬, ২৪, ১৫, ৮, ৩২ ও ৪২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।চলতি বছর ঢাকার বাইরে তিন সিটি করপোরেশন এলাকা এবং ছয় জেলায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপস্থিতি জানতে জরিপ করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। জরিপে একটি মাত্র জেলা বরগুনার গ্রামাঞ্চলেও এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অন্য জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায়ও জরিপ হয়। বরগুনা জেলার জরিপে পৌর এলাকায় ৩১ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭৬ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়।এর বাইরে মাগুরার পৌর এলাকায় ৩৫.৫৬ শতাংশ, ঝিনাইদহে ৩২.৯৬ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ১৮.১৫ শতাংশ, পিরোজপুরে ১৪.৪৪ শতাংশ এবং কুষ্টিয়ার পৌর এলাকার ৭.২৯ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। লার্ভা পাওয়ার শতকরা হার বা হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়।সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ধারণা করা হয়, আগামী ৩০-৪০ বছর ডেঙ্গু হতে থাকবে। কারণ, নিয়ন্ত্রণে সীমিত আকারে কিছু উদ্যোগ রয়েছে। ঢাকার বাইরে মশার নিয়ন্ত্রণ বা অন্য কোনো ধরনের উদ্যোগ নেই বললেই চলে।এর মধ্যে আবার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিনিধি না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। এরপর গত ২৫ বছরে আমরা ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আরও যে কত বছর লাগবে সেটাও জানা নেই। ঢাকার বাইরে পাঁচগুণ মানুষ বসবাস করেন। সুতরাং, মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে রোগটি আগামী ৩০ বছর থাকবে, এটা খুব সহজে অনুমান করা যায়।শহর ছেড়ে কেন গ্রামে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার বলেন, এডিস ইজিপ্টি ও অ্যালবোপিকটাস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। ইজিপ্টি শহর এবং অ্যালবোপিকটাস গ্রামাঞ্চলের মশা। অ্যালবোপিকটাস মশা বনজঙ্গল, বাঁশের ঝাড়, গাছের বাকলের মতো স্থানে থাকে। এ মশা আগে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল না। এখন তারাও ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করছে। আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীকে কামড় দিয়ে তারাও ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে নগরে ডেঙ্গু ছড়ানো ইজিপ্টি মশা যে কোনোভাবে গ্রামাঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এখন দুই প্রজাতির মশাই সমান তালে ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করছে।এছাড়া বিরূপ পরিবেশেও টিকে থাকার (অভিযোজন) সক্ষমতা তৈরি করছে এসব মশা। ড. গোলাম ছারোয়ারের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সঠিক ‘কন্টাক ট্রেসিং’ (রোগী ও তার অবস্থান শনাক্ত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা) অতি জরুরি। কিন্তু এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে মশা নির্মূলের উদ্যোগ নেই। সে কারণে অন্য কোনো অঞ্চল থেকে আক্রান্ত হয়ে এলেও রোগী যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছেন, সেই জায়গার তালিকা করা হচ্ছে। এতে আক্রান্ত মশাকে আড়াল করে তাদের বংশবিস্তারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন জানান, সুপেয় পানির সংকটের কারণে বরগুনা জেলায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার প্রচলন আছে। আর এডিস মশার লার্ভা তৈরি হয় জমিয়ে রাখা পরিষ্কার পানিতে। এসব পানির আধারই হলো এডিসের বিস্তারের বড় ক্ষেত্র। বাড়িতে রাখা প্লাস্টিকের ড্রামের পানি ঢেকে রাখা হয় কাপড় দিয়ে। এটার চর্চা গ্রামে বেশি। এসব কাপড়ে ব্যাপক মাত্রায় লার্ভা পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ঢাকার বাইরে বরগুনার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। এ পরিস্থিতি যে শুধু বরগুনার গ্রামে, তা এখন বলা যায় না। দেশের অন্যত্রও যদি জরিপ করা হয়, তবে এমন বা এর কাছাকাছি চিত্র পাওয়া যেতে পারে।ভোরের আকাশ/এসএইচ