ছবি: সংগৃহীত
হজ শেষে দুদিনে ২২টি ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন আট হাজার ৬০৬ জন হাজি। তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার ৮৩৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ফিরেছেন ৭ হাজার ৭৬৯ জন। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালে হজ পোর্টালের ‘পবিত্র হজ-২০২৫’ প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এবছর হজ পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবে মোট ২৩ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী মারা গেছেন। তাদের মধ্যে মক্কায় ১৫ জন, মদিনায় ৭ জন ও আরাফার ময়দানে একজন বাংলাদেশি হজযাত্রী মারা গেছেন বলে হজ পোর্টাল থেকে জানা গেছে। গত ৫ জুন সৌদি আরবে হজ অনুষ্ঠিত হয়। হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (১০ জুন)।
বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪টি ফ্লাইটে এক হাজার ৪০৯ জন, সৌদি এয়ারলাইন্সের ৮টি ফ্লাইটে তিন হাজার ১৮৫ জন ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের ১০টি ফ্লাইটে ৪ হাজার ১২ জন হাজি দেশে ফিরেছেন। ফিরতি ফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুলাই।
এবার মোট বাংলাদেশি হজযাত্রীর (ব্যবস্থাপনা সদস্য সহ) সংখ্যা ৮৭ হাজার ১৫৭ জন। তিনটি এয়ারলাইন্সের মোট ২২৪টি ফ্লাইটে এ হজযাত্রীরা সৌদি আরবে গেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১০৮টি ফ্লাইটে ৪২ হাজার ৪০৪ জন, সৌদি এয়ারলাইন্সের ৮৩টি ফ্লাইটে ৩১ হাজার ৬৭৬ জন ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের ৩৩টি ফ্লাইটে ১৩ হাজার ৭৭ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছিলেন।
হজযাত্রীদের সৌদি যাওয়ার ফ্লাইট ২৯ এপ্রিল শুরু হয়। শেষ হয় ৩১ মে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
দেশের তিন বিভাগ ও ছয় জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার (১৩ জুন) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।আবহাওয়া অফিস জানায়, শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৯টার মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।রোববার (১৫ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।সোমবার (১৬ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।ভোরের আকাশ/এসএইচ
পুরোদমে চালু হয়নি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। জরুরি বিভাগের অতি জরুরি সেবার পর গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে আউটডোর সেবা। বন্ধ রয়েছে ইনডোর সেবা। সংকট উত্তরণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আন্তরিক অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন হাসপাতালটির চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এতে জুলাই আহতদের পুনর্বাসনসহ ৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। দাবি পূরণ হলে আগামী শনিবার থেকে পুরোদমে হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জুলাই আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে কর্মচারীদের সংঘর্ষের জেরে প্রায় ১৬তম দিন বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে আউটডোরের সেবা চালু করেছে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সীমিত পরিসরে বহির্বিভাগের সেবা চালু করেছে।হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, আগামী শনিবার থেকে হাসপাতাল পুরোদমে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি, এর মধ্যে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা চলছে। আমরা রোগীদের সেবা দিতে চাই এবং চিকিৎসক-নার্সদেরও নিরাপদ কর্ম পরিবেশ তৈরি করতে চাই।এর আগে গত ২৮ মে জুলাই আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মী, সাধারণ রোগী এবং তাদের স্বজনদের মধ্যে সংঘর্ষের পর থেকে হাসপাতালটিতে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালটিতে শুধু জুলাই আহতরা অবস্থান করেন। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের জন্য বিশেষ উদ্যোগে খাবার সরবরাহ করেছে।স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন চিকিৎসক-নার্সরা : জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিরাপত্তা সংকট এবং সংকট উত্তরণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আন্তরিক অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন হাসপাতালটির চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এতে জুলাই আহতদের পুনর্বাসনসহ ৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতাল বন্ধের ১৬তম দিনে স্বল্প পরিসরে আউটডোর সেবা চালু করা হয়। এর পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একসঙ্গে সভায় বসেন। পরে তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জুলাই আহতদের পুনর্বাসনসহ ৮ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দেন। তার একটি অনুলিপি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম এর হাতে তুলে দেওয়া হয়।স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত ‘জুলাই আন্দোলন’-এ আহত সব রোগীকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও মানবিক বিবেচনায় উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বর্তমানে আমাদের হাসপাতাল এক চরম নিরাপত্তা সংকট ও অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সম্মুখীন। চিকিৎসার প্রয়োজন শেষ হওয়া সত্ত্বেও কিছু রোগী প্রায় ১০ মাস যাবত অপ্রয়োজনে হাসপাতালে অবস্থান করছেন। তারা হাসপাতালের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে উশৃঙ্খল আচরণ, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের গালাগাল, শারীরিক আক্রমণ, এমনকি হাসপাতাল পরিচালকের ওপর হামলা ও আগুন লাগানোর হুমকিসহ নানাবিধ সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। তাদের দখলে থাকা সিটগুলো প্রকৃত দরিদ্র ও জরুরি রোগীদের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি ও অপারেশনে তারা প্রভাব বিস্তার এবং ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, তারা (জুলাই আহত) পরিচালক স্যারকে আটকে রাখেন এবং গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিতে চেষ্টা করেন। সর্বশেষ সশস্ত্র আক্রমণ করে অনেক চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গুরুতর আহত করে, হাসপাতালের অনেক স্থাপনার ক্ষতি করেন তারা। সংকট সমাধান এবং পরবর্তী চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড ৪ জুন হাসপাতালে আহত রোগীদের দেখতে আসেন। ৫৫ জন আহতের মধ্যে মাত্র ৩০ জন মেডিকেল বোর্ডে উপস্থিত হন এবং তাদের কারোরই হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন নেই বলে মেডিকেল বোর্ড মতামত দেয়। কিন্তু ছুটি দেওয়া সত্ত্বেও তারা হাসপাতাল ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান এবং আবারও চিকিৎসকদের অবরুদ্ধ করেন।এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের সুষ্ঠু চিকিৎসার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা ৮টি দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো- আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’দের পূর্ণ পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান এবং আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব রোগীর আর হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন নেই, তাদের ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হলে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়/সিএমএইচ/ ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।অনাবশ্যক রোগী ভর্তি প্রতিরোধে একটি কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। দুষ্কৃতিকারীদের হামলায় আহত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আহতদের সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপযুক্ত স্বীকৃতি দিতে হবে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করতে হবে।স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে চক্ষু চিকিৎসার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল একটি দিনের জন্য বন্ধ থাকবে এটি কোনভাবেই কারো কাম্য নয়। আমরা বিশ্বাস করি, অবিলম্বে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো না নিলে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনার (স্বাস্থ্য উপদেষ্টা) সুদৃষ্টি ও জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।ভোরের আকাশ/এসএইচ
অব্যাহত রয়েছে করোনা ভাইরাসের নীরব সংক্রমণ। ডেঙ্গু আতঙ্কে দেশবাসী। বেশকিছু উপসর্গের মিল থাকায় এই দুই রোগ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনা মানুষের রক্তে যে সমস্যা তৈরি করে, তেমনি রক্তে একই রকম সমস্যা তৈরি করে ডেঙ্গু। আর ডেঙ্গু ও করোনার প্রাথমিক উপসর্গে থাকে জ্বর। একই ব্যক্তি করোনা ও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে ওই রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০৮ জন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ১০৮ জনের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১১ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৯৭ জন।বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫ হাজার ৪১১ জন। এর মধ্যে ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ নারী।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সরকারি পরিসংখ্যানের দ্বিগুণ হবে বেসরকারি চিত্র। অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ‘ ডেঙ্গু তথ্য’ প্রেরণ করে না। আর উপসর্গ থাকার পরও পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণে উদাসীন অনেক রোগী। ফলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠে না।করোনা পরিস্থিতি: দেশে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ কর্মসূচি অনেকটা সংকুচিত হয়ে গেছে। রাজধানীর কিছু সংখ্যক হাসপাতাল ছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি উপসর্গ থাকার পরও রোগীরাও নমুনা পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে উদাসীন। ফলে করোনা ভাইরাস নিয়ে সরকার ও সাধারণ মানুষ এখন ভাবে না বললেই চলে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ।এদিকে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের(আইইডিসিআর) সাবেক উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, যতদিন সংক্রমণ থাকবে ততদিন করোনা নিয়ে অবহেলা করা যাবে না। করোনা ভাইরাস শনাক্তরণ ও হাসপাতালে যাওয়ার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেশের করোনা পরিস্থিতিতে ভুমিকা রাখবে। নীরবে করোনার সংক্রমণ ঘটছে। টেস্ট করাতে না যাওয়ার কারণে শনাক্তের বাইরে রয়ে যাচ্ছে অনেক করোনা রোগী। করোনার সংক্রমণ সর্বত্র বিস্তার ঘটতে খুব বেশি সময় লাগে না। একসঙ্গে ডেঙ্গু, করোনা ও মৌসুমী জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মুস্তাক হোসেন।করোনা ও ডেঙ্গু: বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, ডেঙ্গু ও করোনা দুটিতেই আক্রান্ত হওয়ার রোগী পাওয়া যাচ্ছে। জ্বর হলেই প্রথমে করোনা ও পরে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে উদাসীনতা ও ঘামখেয়ালিপনা করলে মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।তিনি বলেন, করোনা ও ডেঙ্গু- এ দুটির উপসর্গ প্রায় একই। তবে কিছু কিছু পার্থক্য আছে। করোনার উপসর্গ হলো জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, শরীরে ব্যথা ও ঘ্রাণ না পাওয়া। আর ডেঙ্গুর লক্ষণ হলো, ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি শরীর কাপানো জ্বর, চোখের পাতার পেছনে ব্যথা ও ব্যাপক পেইন এবং গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা। শরীরে র্যাশও উঠতে পারে। কোনো কোনো ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হওয়ার চার দিন পর প্লাটিলেট কমে গিয়ে নাক, দাঁত, পায়খানা ও বমির মাধ্যমে রক্তক্ষরণ হতে পারে। করোনা রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ চিকিৎসা সেবায় প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীর শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে, এসপিরিন জাতীয় ওষুধসহ কোনো ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যাবে না। তবে সেকেন্ডারি ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে। এছাড়া ডেঙ্গু রোগীর বেশি করে ওরস্যালাইন, ডাব ও অতিরিক্ত পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আরো বলেন, এডিস মশার কারণে ডেঙ্গুজ্বর হয়। এডিস মশা দিনে কামড়ায়। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ গত কয়েক বছর ধরে সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ডেঙ্গু ও করোনার উপসর্গ প্রায় একই। তবে কিছু পার্থক্য আছে। দুটির ক্ষেত্রেই জ্বর, গলাব্যথা, সর্দি, কাশি এবং স্বাদ না থাকা হতে পারে। করোনার ক্ষেত্রে এসব লক্ষণের সঙ্গে নাকে ঘ্রাণ পায় না এবং কারো কারো পাতলা পায়খানা হয়।এছাড়া করোনার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হতে পারে, যেটি ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে হয় না। ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চার-পাঁচ দিন পরে শরীরে লাল অ্যালার্জির মতো র্যাশ হতে পারে। তখন রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যেতে পারে। তিনি বলেন, একজন রোগীর ডেঙ্গু ও করোনা এক সঙ্গে হচ্ছে। তাই জ্বর হলেই করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। নিজের জীবন রক্ষার স্বার্থে দুটি পরীক্ষা করাতে হবে।ভাইরোলজিস্ট ডা. নজরুল ইসলাম বলছেন, যদি একইসঙ্গে ডেঙ্গুর কারণে রক্তে প্লাটিলেট স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি কমে যায় এবং কোভিডের কারণে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাও ৯০ এর নিচে নেমে যায়, তাহলে বিষয়টি বিপজ্জনক। তখন একইসঙ্গে প্লাটিলেট দিতে হবে, অক্সিজেন দিতে হবে। চিকিৎসকরা এর সিদ্ধান্ত নেবেন। আবার করোনার কারণে যদি ফুসফুস বেশি আক্রান্ত হয়, হৃদযন্ত্রের আর্টারি আক্রান্ত হয়, তখন খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। এমন রোগীদের ফেরানো মুশকিল।ভোরের আকাশ/এসএইচ
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের চায়না ওয়ার্ল্ড হোটেলে অনুষ্ঠিত হলো জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) আয়োজিত এশিয়ান মেয়রস ফোরাম। গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।এশিয়ান মেয়রস ফোরামের এবারের ফোরামের প্রতিপাদ্য ছিল “সহযোগিতামূলক উদ্ভাবন: একটি নিম্ন-কার্বন নিঃসরণ ও টেকসই ভবিষ্যতের শহর নির্মাণ”।আন্তর্জাতিক এই ফোরামে বাংলাদেশ থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ফোরামে টেকসই নগর উন্নয়ন, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো এবং নগর শাসনে উদ্ভাবনের ভূমিকা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরেন।ফোরামের উদ্দেশ্য ছিল শহরগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, কম কার্বন নিশ্চিত করতে উন্নয়ন কৌশল ভাগ করে নেয়া এবং প্রযুক্তি ও অর্থায়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDGs) অর্জনে শহরগুলোকে সহায়তা করা।এবারের আয়োজনের আয়োজক ছিল ইউএনডিপির চীনে অবস্থিত প্রতিনিধিদপ্তর। এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা ১৬টিরও বেশি শহরের মেয়র, শহর প্রশাসক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা এই ফোরামে অংশগ্রহণ করেন।জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির চীনে নিযুক্ত প্রতিনিধি বেয়াতে ট্রাংকমান উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “শহরগুলোকে নেতৃত্ব, সহযোগিতা এবং অর্থায়নের কাঠামোতে নতুন চিন্তা নিয়ে এগোতে হবে, যাতে তারা টেকসই উন্নয়নের পথ তৈরি করতে পারে। শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদ্ভাবনী শাসন ব্যবস্থাই শহরকে গতি ও স্থিতিশীলতা দিতে পারে।”ফোরামের মূল পর্বে প্রধান বক্তৃতা, ইন্টার্যাক্টিভ প্যানেল আলোচনা ও মেয়র সংলাপ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এতে অংশগ্রহণকারী শহরগুলোর মধ্যে ছিল, উলানবাটর (মঙ্গোলিয়া), বেইজিং (চীন), সিউল (দক্ষিণ কোরিয়া), সিঙ্গাপুর, ললিতপুর (নেপাল), কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া), কলম্বো (শ্রীলঙ্কা), সুভা (ফিজি), ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (বাংলাদেশ), মালে (মালদ্বীপ), নমপেন (কম্বোডিয়া), এবং ভিয়েনতিয়েন (লাওস)।এ ছাড়াও, ফোরামে অংশ নেন জাতিসংঘ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (UN ESCAP), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB), UNCTAD, সিটি নেট (CityNet), চিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, RICS ও আরুপ (ARUP)-এর প্রতিনিধিরা।ভোরের আকাশ/এসএইচ