মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারের দ্বার খোলার সম্ভাবনা
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার। সম্ভাবনাময় এই শ্রমবাজার বন্ধ থাকলে হতাশার সৃষ্টি হয়। শ্রমবাজার বন্ধ থাকার এক বছর পার হয়ে গেছে। তবে বন্ধ দুয়ার খোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশ সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল।
বৈঠকে শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশা করছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
এই প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তার সঙ্গে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নেয়ামত উল্ল্যা ভূঁইয়া এবং উপসচিব মো. সারওয়ার আলম। তারা গত মঙ্গলবার মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন।
২০২৪ সালের শুরুতে মালয়েশিয়া হঠাৎ করেই সব দেশের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়। এর আগে, তারা ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করত, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তবে অভিযোগ ওঠে, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠাতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় এবং প্রক্রিয়াটি একটি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে আগের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার মধ্যদিয়ে আজকের বৈঠক থেকেই একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে প্রত্যাশা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সফরের মূল উদ্দেশ্য মালয়েশিয়ায় আবারও বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর পথ খুলে দেওয়া। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান একটি সমঝোতা স্মারক (গড়ট) রয়েছে, যার মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। নতুন চুক্তি করার সুযোগ না থাকলেও, বাংলাদেশ চাইছে এই সমঝোতা স্মারকের কিছু ধারা সংশোধন করতে।
বৈঠকে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে এজেন্সি বাছাই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। কারণ আগেরবার বাজার চালুর সময় এজেন্সি নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। মালয়েশিয়া সরকার তখন কিছু নির্দিষ্ট এজেন্সিকে সুযোগ দেওয়ায় বাকি অনেক প্রতিষ্ঠান বঞ্চিত হয়। একইসঙ্গে তৈরি হয় চক্রভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থা, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে দুর্নীতির।
বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা মনে করছেন, চলমান আলোচনার মধ্য দিয়ে শিগগিরই আবার শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এই লক্ষ্যে দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির সভার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া আগামী ২১-২২ মে ঢাকায় এই কমিটির বৈঠকে বসার প্রস্তাব দিয়েছে, যা বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় গেছেন প্রায় ১৩ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক। এর মধ্যে ২০২৩ সালেই গেছেন সাড়ে তিন লাখের বেশি। তবে অতীতে এই বাজার একাধিকবার বন্ধ হয়েছে। ২০০৭-২০০৮ সালে চার লাখ এবং ২০১৭-১৮ সালে তিন লাখ শ্রমিক পাঠানোর পর বাজার বন্ধ হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় গেছেন প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক।
ভোরের আকাশ/আজাসা
সংশ্লিষ্ট
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চায়। এ কারণে গত ৯ মাসে সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি, কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করা হয়নি। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গণমাধ্যমের হালচাল শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্যকালে এমন দাবি করেন তিনি।প্রেস সচিব বলেন, মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রচার হলেও প্রতিবাদ করতে গেলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ করা হয়। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৯ মাসে কোনো সাংবাদিকের চাকরি হারানোর জন্য সরকার দায়ী নয়। আদর্শগত কারণে কাউকে কোনো হুমকিও দেয়া হয়নি। এ সময় কেউ কোনোভাবে হুমকির শিকার হলে সরকারকে অবহিত করার পরামর্শ দেন তিনি। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার জন্য সরকার দায়ী নয়।ভোরের আকাশ/আজাসা
কুষ্টিয়ায় স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যাকে হত্যাচেষ্টা চালিয়ে নিজেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মামুন আলী নামে এক যুবক। সাভারে বাবাকে ছুরি মেরে হত্যা করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন মেয়ে। চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহরে পঞ্চম বিয়ে করায় চতুর্থ স্ত্রীর হাতে খুন হয়েছেন মো. আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। এভাবে পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ, পারিবারিক বন্ধন ও পরিবারের গুরুত্ব হ্রাস পেয়ে আজ বেড়েছে পারিবারিক কলহ, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড। যৌথ পরিবার অনেক আগেই ভেঙে গেছে। এবার একক পরিবারের সদস্যরাও হয়ে যাচ্ছেন ব্যক্তি স্বার্থকেন্দ্রিক মানসিকতার। আর সংসার ভাঙনের হার বেড়েছে কয়েকগুণ।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ সামাজিক জীব, সামাজিক উপাদানগুলোর মধ্যে প্রথম ও প্রধান উপাদান হলো পরিবার। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা ও ভালোবাসার দৃঢ় বন্ধনের মাধ্যমে পরিবারে একজন মানুষ সমাজের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করে থাকে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও সংস্কৃতিতে পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবারকে বলা হয় সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না। একটি আদর্শ পরিবারে অন্যতম কার্যাবলি হলো পরিবারের সকলে মিলেমিশে একত্রে বাস করা। এ কাজটাই একটি আদর্শ পরিবারে থাকে।বর্তমানে পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাচ্ছে বলেই আমাদের সামাজিক নানা সমস্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে অস্থিরতা। ধর্মীয় বিধানেও রক্তের সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার ওপর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পরিবারকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু বিবেচনা করে পরিবারের সব সদস্যের সুখ ও সমৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা অপরিহার্য। তাই পরিবারের সবার সুস্বাস্থ্য, শান্তি ও সৌহার্দ্য পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতিও সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে এবং বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরতে সর্বস্তরের জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।বাড়ছে তালাক, ভাঙছে সংসার : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা-চাচি মিলে এক মধুর সংসার গড়ে উঠেছিল প্রাচীন বাংলাদেশে। আবহমানকাল ধরে এ পরিবার প্রথা বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সামাজিক বন্ধন শুধু সুদৃঢ় ভিত্তিই দেয়নি, গড়েছে অনাবিল পরিবেশ। আর্থিক সংকট, সামাজিক প্রতিযোগিতাসহ পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থার নানা সংস্কৃতির প্রবেশের কারণে বাংলাদেশের সেই যৌথ পরিবার প্রথা ভেঙে যাচ্ছে। ফলে ভাঙছে সংসার, বাড়ছে তালাক। বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কসহ নানা কারণে ভাঙছে সংসার, বাড়ছে বিচ্ছেদের হার। এককভাবে পুরুষ কিংবা নারী নন, উভয়পক্ষ থেকেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যাচ্ছে। দেশে দিন দিন এমন বিচ্ছেদের ঘটনার মিছিল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বিচ্ছেদ নিয়ে নানা ধারণা প্রচলিত আছে।আইনি প্রক্রিয়া মেনে যেকোনো দম্পতি যেকোনো বয়সেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে বিচ্ছেদ বৈধ প্রক্রিয়া হলেও উৎসাহিত করার মতো কোনো বিষয় নয়। কারণ এর ফলে সন্তানের ভবিষ্যৎ পড়ে অনিশ্চয়তার মুখে, ভেঙে পড়ে সমাজের কাঠামো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রথমবার এবং সর্বশেষ বিয়ে ও তালাক সংক্রান্ত ২০২২ সালের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, দেশে বিয়েবিচ্ছেদের হার তুলনামূলক বেড়েছে।‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’ শীর্ষক ওই পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে বিচ্ছেদের হার শূন্য দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ১-এর মধ্যে ওঠানামা করে। আর ২০২২ সালে তা বেড়ে ১ দশমিক ৪ এ দাঁড়ায়।পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালে নারীদের পক্ষ থেকে সাধারণ বিয়েবিচ্ছেদের হার ছিল ২ এর সামান্য কম। তা পরের বছর বেড়ে ৩ দশমিক ৬-এ দাঁড়ায়। একইভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের হার ২০২১ সালে ছিল ২ এর সামান্য বেশি। পরের বছর তা বেড়ে ৩ দশমিক ৮ এ দাঁড়ায়। আর শহরের তুলনায় গ্রামে বিয়েবিচ্ছেদ বেশি। কেন বিয়ে বিচ্ছেদ বাড়ছে, এমন প্রশ্নে বিবিএসের ওই পরিসংখ্যান বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ককে তালিকার প্রথমে রেখেছে। এতে দেখা যায়, ২৩ শতাংশ ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের কারণ বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক। আর ২২ শতাংশ ক্ষেত্রে দাম্পত্য জীবনের দায়িত্বহীন আচরণকে দোষারোপ করা হয়েছে।কেন তাসের ঘর হচ্ছে সংসার : কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে, যারা একান্নবর্তী পরিবারে বেড়ে উঠেছেন এবং তাদের অধিকাংশই গ্রামীণ জীবনযাপন করেছেন। এসব পরিবারের নারী এবং পুরুষ উভয়ের মতে, বিয়ে হলো সামজিক বন্ধন। দাম্পত্য জীবনে যতই চড়াই-উতরাই থাকুক না কেন শেষ পর্যন্ত জীবনের রাস্তায় দুজনকে এক থাকতে হয়। আর এক্ষেত্রে একান্নবর্তী পরিবারের গুরুত্ব তুলে ধরে তারা বলছেন, দাম্পত্য জীবনে যে কোনো কলহ দুজনকেই মিটাতে হয়, তবে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তা সহজ করতে ভূমিকা পালন করে থাকে।এদিকে শহরের নিউক্লিয়ার পরিবারগুলো বলছে, ছোট পরিবারে ঝামেলা কম, চাকরি শেষে সবাইকে নিয়ে এত ভেবে পেরে ওঠা যায় না বলেই স্বামী-স্ত্রী সন্তানসহ থাকছেন তারা। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগই সন্তান পালনে সাহায্যকারীর ওপর নির্ভরশীল। এমনই একটি পরিবার শামীম-জোহরার। এই দম্পতি বলেন, জীবনে এগিয়ে যেতে হলে প্রযুক্তির বিকল্প নেই। তবে যতই ব্যস্ততা থাকুক পরিবারের জন্য সময় বের করেন তারা। কিন্তু নিজেদের শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তারাও একান্নবর্তী পরিবারের গুরুত্ব তুলে ধরেন।গ্রামে বিচ্ছেদ বাড়াচ্ছে বাল্যবিয়ে : বিবিএসের ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক ২০২৩-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ১০ হাজারে গ্রামে ১১টি এবং শহরে ৯টি তালাকের ঘটনা ঘটছে। দেশে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার অনেকটাই বেড়েছে। সমাজবিজ্ঞানীরা গ্রামে বিয়েবিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার পেছনের অন্যতম বড় কারণ হিসেবে বাল্যবিয়ে ও কৌশলে যৌতুক আদায়ের বিষয়টিকে দেখছেন।প্রযুক্তি কমাচ্ছে সম্পর্কের গুরুত্ব : প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে গতিশীল করছে। তবে এর নেতিবাচক ব্যবহার এড়াতে পারছে না মানুষ। প্রযুক্তি পারস্পরিক দূরত্ব বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাছির বলেন, ‘প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবারের বাইরে সবারই ভিন্ন ভিন্ন জগৎ তৈরি হচ্ছে। একটা সময় ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য অনেকটা বেড়ে যাচ্ছে। এতে পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করতেও মানুষ দ্বিধা করছে না। আর এর বলি হচ্ছে শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ।তিনি আরও বলেন, মেয়েরা এখন শিক্ষার দিক দিয়ে অনেক এগিয়েছে, যেটি তাকে স্বনির্ভর করছে। এখন আর নারীরা নীরবে সংসারে নির্যাতন সহ্য করে না। তাই নারীদের পক্ষ থেকে তালাকের সংখ্যাও দিনকে দিন বাড়ছে।বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে বিচ্ছেদ ঘটে- উল্লেখ করে সমাজবিজ্ঞানী খায়রুল চৌধুরী বলেন, আমাদের ভাবতে হবে কেন এটি ব্যাধির মতো ছড়াচ্ছে। এর মূল কারণ হিসেবে আমি বলব, নিজ পরিবারকে সময় না দিয়ে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়া, বিভিন্ন অ্যাপে বন্ধু তৈরি করা আর সেখানে ডুবে যাওয়া। এমনকি পেটের দায়ে যারা পরিবার রেখে শহরমুখী হচ্ছে, শহরে এসে তারাও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। এতে করে গ্রামে রেখে আসা পরিবারে সঙ্গে বিচ্ছেদ দীর্ঘ হচ্ছে। এই ব্যাধি কমাতে হলে পরিবারকে নিয়ে ভাবতে হবে, সময় দিতে হবে। তিনি বলেন, সামাজিক শৃঙ্খলাবোধ নিজের মধ্যে তৈরি করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, প্রযুক্তিতে গতিশীল হতে গিয়ে আমরা যেন সমাজকে ভেঙে না ফেলি।বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে তাড়াহুড়ো নয় : বিয়েবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের। মনোশিক্ষাবিদ ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম এ মোহিত কামাল বলেন, দাম্পত্য কলহ দিনকে দিন বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে দম্পতিদের উচিত কাপল কাউন্সিলিং নেওয়া, নিজেদের সমস্যাগুলো মানসিক বিষেশজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ঠিক করে নেওয়া। তবে এই প্র্যাকটিসটা (চর্চা) বাংলাদেশে একদমই নেই। কলহ থেকে দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কারণেই বিচ্ছেদের ঘটনা বেশি হচ্ছে।বিচ্ছেদ পরবর্তী চিত্র নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিচ্ছেদের পর যে মানসিক ট্রমা তৈরি হয়, সেটা থেকে বের হতে অনেকের দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এটি অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করে ওই ব্যক্তি (নারী বা পুরুষ) মানসিকভাবে কতটা দৃঢ় তার ওপর। যা হওয়ার, তা হয়ে গেছে- ভেবে জীবনের নতুন অধ্যায় সাহস নিয়ে শুরু করতে হবে।বেড়েছে পারিবাকি সহিংসতা : জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রোগ্রাম অফিসার ও হেল্পলাইন ইনচার্জ রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘সহযোগিতা চেয়ে পরিবারের সদস্যরা বেশি কল দেন। বেশির ভাগ কল আসে পারিবারিক সহিংসতাকে কেন্দ্র করে। প্রতিদিন চাঞ্চল্যকর কেসগুলো, অর্থাৎ বাল্যবিয়ে, যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের ঘটনা হেল্পলাইন সেন্টার থেকেই তদারকি করা হয়। দৈনিক গড়ে ছয় থেকে সাত হাজার কল আসে।’ জনবলের সংকট রয়েছে। বর্তমানে তিন শিফটে ৪০ জন ২৪ ঘণ্টা কাজ করলে প্রয়োজন ৮০ জনের।মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নারীর প্রতি অর্থনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে। গত চার বছরের মধ্যে এ সহিংসতা সম্পর্কিত কল বেশি এসেছে ২০২৪ সালে। বছরটিতে ৪ লাখ ৬০ হাজারের বেশি কল আসে। এর আগে ২০২১ সালে ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৯১টি, ২০২২ সালে ৩ লাখ ৬ হাজার ৬৬০টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৭৭টি কল আসে। উই ক্যান অ্যালায়েন্সের জাতীয় সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বলেন, পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে, যে ভাবনা নিয়ে পারিবারিক কাঠামোগুলো তৈরি হয়, সেগুলোর পরিবর্তন হচ্ছে না। ছেলেরা বাইরে খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে কিংবা ক্লান্ত থাকলে ঘরে এসে বউকে নির্যাতন করে। আবার কোনো কোনো ছেলের বউকে ভালো লাগলেও তার পরিবারের মানুষকে পছন্দ করে না। এসব কারণে সহিংসতা বাড়ছে।নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক মনে করেন, পারিবারিক সহিংসতাসহ নারীর প্রতি সব বৈষম্য প্রতিরোধে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার।সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন বলেন, অনেকেই দাম্পত্যজীবনে সুখী হন না। কিন্তু নানা পারিপার্শ্বিক কারণে সেটা মেনে নিয়ে সংসার করে যান। অবশ্য অনেকেই দাম্পত্যজীবনে সুখী হওয়াকেই প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা বদলাতে গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সংশোধিত জামুকা অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন যাঁরা বিদেশে থেকে জনমত গঠন করেছেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী-দূত; মুজিবনগর সরকারে সম্পৃক্ত এমএনএ এবং যাঁরা পরবর্তীকালে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সব খেলোয়াড়কে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে রাখার প্রস্তাব করা হয়।এর ফলে বঙ্গবন্ধুসহ মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় না থেকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের তালিকায় চলে যেত। জামুকা অধ্যাদেশের এই খসড়া প্রকাশ করার পর এ নিয়ে বেশ সমালোচনা শুরু হয়। অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদনের জন্য ৬ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন করা হয়। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদ তা পর্যালোচনা করে পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়। অবশেষে সমালোচনার মুখে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে সরকার। সরাসরি যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি, তাঁদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগী হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল রাখছে অন্তর্বর্তী সরকার।সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জামুকা অধ্যাদেশের খসড়া পর্যালোচনা করে সেখানে মুজিবনগর সরকারে সম্পৃক্ত এমএনএ এবং যাঁরা পরবর্তীকালে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রেখে নতুন খসড়া করেছে। এই খসড়া অনুমোদনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে জামুকা আইন সংশোধন হওয়ার পরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগীদের নাম আলাদা করা হবে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই কাজ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দেওয়ার প্রস্তাবে আপত্তি করেনি উপদেষ্টা পরিষদ। তবে বঙ্গবন্ধু এবং মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকা উচিত বলে মত দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে সহযোগীদের নাম আলাদা করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর তালিকায় যাঁরা থাকবেন, তাঁরা আগের মতোই সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন।জামুকার সুপারিশ অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি সংশোধিত পরিপত্র জারি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেই হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যেসব মুক্তিযোদ্ধার বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস ছিল, তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় সংশোধিত খসড়ায় এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। মামলা নিষ্পত্তির পর বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধার সর্বনিম্ন বয়স নতুন করে নির্ধারণ করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স সাড়ে ১২ বছরের পরিবর্তে ১৪ বছর করার বিষয়ে আলোচনা রয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স সাড়ে ১২ বছর করা হয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স ১৪ বছর করা হলে প্রভাবশালী কয়েক শ’ মানুষের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল হয়ে যাবে।মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনীতিবিদ : ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৭২’ জারি করেন। ওই বছরের ২৩ মার্চ গণপরিষদ আদেশ জারি করা হয়। এই আদেশবলে ১৯৭০ সালের ৭ ও ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত ৪৬৯-এর (জাতীয় পরিষদে ১৬৯, আর প্রাদেশিক পরিষদে ৩০০) মধ্যে ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় গণপরিষদ। ৪০৩ জনের মধ্যে ৪০০ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের, একজন ছিলেন ন্যাপের আর দু’জন নির্দলীয়। স্বাধীনতার পর প্রণীত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তাদের মধ্যে ১ হাজার ৩৬১ জনকে ‘লাল মুক্তিবার্তা স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা’ শ্রেণিতে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতাসহ গণপরিষদের সদস্যও আছেন।মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় বর্তমানে ৩৬টি শ্রেণি রয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া কার্যকর হলে গণপরিষদ সদস্যদের নিয়ে প্রণীত লাল মুক্তিবার্তা স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা, বিসিএস ধারণাগত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিশ্বজনমত গঠনকারী প্রবাসী সংগঠক, মুজিবনগর, স্বাধীন বাংলা বেতার শিল্পী, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় বদলে যাবে। এর বাইরে বেসামরিক গেজেটে থাকা প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্য থেকেও কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় নিয়ে সংকট দেখা দেবে। খসড়াটি অধ্যাদেশ হিসেবে প্রকাশের পর বেসামরিক গেজেটের তালিকা থেকে রণাঙ্গনে অংশ না নেওয়া অন্য শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই শুরু করবে মন্ত্রণালয়।উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর ১৯৮৬ সালে প্রথম জাতীয় কমিটির তালিকার ভিত্তিতে এক লাখ দুই হাজার ৪৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম পাঁচটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। তবে এটির গেজেট হয়নি। ১৯৮৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার ৮৯২। পরে ১৯৯৪ সালে বিএনপির আমলে করা তৃতীয় তালিকায় ৮৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে প্রকাশিত চতুর্থ তালিকায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫২ জনের নাম মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত হয়। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৯-এ। ২০২৩ সালে বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ষষ্ঠ দফার চূড়ান্ত (সমন্বিত) তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৮ হাজার ৮৫১-তে। এর মধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত, শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ১০ হাজার ৯৯৬ জন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার। সম্ভাবনাময় এই শ্রমবাজার বন্ধ থাকলে হতাশার সৃষ্টি হয়। শ্রমবাজার বন্ধ থাকার এক বছর পার হয়ে গেছে। তবে বন্ধ দুয়ার খোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশ সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশা করছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এই প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তার সঙ্গে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নেয়ামত উল্ল্যা ভূঁইয়া এবং উপসচিব মো. সারওয়ার আলম। তারা গত মঙ্গলবার মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন।২০২৪ সালের শুরুতে মালয়েশিয়া হঠাৎ করেই সব দেশের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়। এর আগে, তারা ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করত, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তবে অভিযোগ ওঠে, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠাতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় এবং প্রক্রিয়াটি একটি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে আগের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার মধ্যদিয়ে আজকের বৈঠক থেকেই একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে প্রত্যাশা।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সফরের মূল উদ্দেশ্য মালয়েশিয়ায় আবারও বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর পথ খুলে দেওয়া। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান একটি সমঝোতা স্মারক (গড়ট) রয়েছে, যার মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। নতুন চুক্তি করার সুযোগ না থাকলেও, বাংলাদেশ চাইছে এই সমঝোতা স্মারকের কিছু ধারা সংশোধন করতে।বৈঠকে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে এজেন্সি বাছাই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। কারণ আগেরবার বাজার চালুর সময় এজেন্সি নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। মালয়েশিয়া সরকার তখন কিছু নির্দিষ্ট এজেন্সিকে সুযোগ দেওয়ায় বাকি অনেক প্রতিষ্ঠান বঞ্চিত হয়। একইসঙ্গে তৈরি হয় চক্রভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থা, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে দুর্নীতির।বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা মনে করছেন, চলমান আলোচনার মধ্য দিয়ে শিগগিরই আবার শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এই লক্ষ্যে দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির সভার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া আগামী ২১-২২ মে ঢাকায় এই কমিটির বৈঠকে বসার প্রস্তাব দিয়েছে, যা বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে।উল্লেখ্য, ২০০৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় গেছেন প্রায় ১৩ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক। এর মধ্যে ২০২৩ সালেই গেছেন সাড়ে তিন লাখের বেশি। তবে অতীতে এই বাজার একাধিকবার বন্ধ হয়েছে। ২০০৭-২০০৮ সালে চার লাখ এবং ২০১৭-১৮ সালে তিন লাখ শ্রমিক পাঠানোর পর বাজার বন্ধ হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় গেছেন প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক।ভোরের আকাশ/আজাসা