ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৪:৪৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য প্রস্তাবিত নীতিমালা- ২০২৫ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ‘রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’র (আরএফইডি) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রকাশ করছে।
প্রস্তাবিত নীতিমালায় আছে-
নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ধরণ
ক. প্রিন্ট মিডিয়া: ডিক্লারেশন প্রাপ্ত এবং নিয়মিত প্রকাশিত দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক প্রভৃতি এবং তাদের অনলাইন ও ডিজিটাল প্লাটফর্ম;
খ. টেলিভিশন: অনুমোদিত টেলিভিশন চ্যানেল যা বাংলাদেশ হতে প্রচারিত হয়; তাদের অনলাইন ও ডিজিটাল প্লাটফর্ম;
গ. রেডিও: অনুমোদিত রেডিও স্টেশন যা বাংলাদেশ হতে প্রচারিত হয়; তাদের অনলাইন ও ডিজিটাল প্লাটফর্ম;
ঘ. অনলাইন নিউজ পোর্টাল: অনুমোদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল; তাদের ডিজিটাল প্লাটফর্ম;
ঙ. আইপিটিভি: অনুমোদিত ইন্টারনেটভিত্তিক টেলিভিশন;
চ. ফ্রি-ল্যানস সাংবাদিক: তথ্য অধিদপ্তরের সাংবাদিক পাসধারী;
ছ. আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা: তথ্য অধিদপ্তর হতে অনুমতিপ্রাপ্ত;
জ. বিদেশি সাংবাদিক: তথ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে অন্যান্য দেশ হতে আগত সাংবাদিক।
অনুমোদনের স্থান
ক) ঢাকাস্থ সাংবাদিক: রাজধানীকেন্দ্রিক জাতীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ঢাকাস্থ সাংবাদিক হিসেবে গণ্য করা হবে। এসব সাংবাদিকদের পাশ, গাড়ি ও মোটরসাইকেলের স্টিকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ অধিশাখা হতে প্রদান করা হবে।
খ) স্থানীয় সাংবাদিক: সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকা/জেলা/উপজেলা হতে প্রকাশিত পত্রিকা এবং জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন, অনলাইন, আইপিটিভি এর স্থানীয় প্রতিনিধি স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। স্থানীয় পর্যায়ের এসব সাংবাদিকদের কার্ড, গাড়ি ও মোটরসাইকেলের স্টিকার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা তার কর্তৃক ক্ষমতা প্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদান করবেন।
আবেদন প্রক্রিয়া
ভোটগ্রহণ দিনের অন্তত পনের দিন (১৫) পূর্ব হতে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের অফিসিয়াল প্যাডে নিউজ এডিটর/চিফ রিপোর্টার/বার্তা প্রধান/ব্যুরো প্রধান/জেলা প্রতিনিধি স্বাক্ষরিত আবেদন সচিব নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বা রিটার্নিং অফিসার বরাবর দাখিল করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হতে কতজন সাংবাদিককে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হলো- তাদের নাম, প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক পরিচয়পত্র/পিআইডি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, সদ্য তোলা ০১ কপি পাসপোর্ট ও ০১ কপি স্ট্যাম্প সাইজ রঙিন ছবি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
৩.১ নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন কার্ড পাওয়ার জন্য আবেদন; প্রয়োজনীয় তথ্যাদী এবং ছবি অনলাইনে দাখিলের সুযোগ থাকবে।
অনুমোদন ও কার্ড প্রদান
(ক) প্রাপ্ত আবেদনসমূহ ও দলিলাদি যথাযথভাবে যাচাই বাছাই করে নির্বাচনের কলেবর ও গুরুত্ব অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার স্বীয় বিবেচনায় যৌক্তিক সংখ্যক সাংবাদিককে অনুমোদন ও কার্ড ইস্যু করবেন। জটিলতা এড়াতে কতসংখ্যক স্থানীয় সাংবাদিককে পরিচয়পত্র দেওয়া যায় তা স্থানীয় প্রেসক্লাব বা প্রেসক্লাবসমূহ বা সাংবাদিক সংগঠন বা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করবেন। এছাড়া সাংবাদিকদের আবেদন যাচাই বাছাই করে পরিচয়পত্র, গাড়ি ও মোটরসাইকেলের স্টিকার প্রদানের জন্য রিটার্নিং অফিসার একটি কমিটি গঠন করে দিতে পারবেন।
(খ) আবেদন যাচাই বাছাইয়ের সময়, পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ হলে, পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয় কিনা তা দেখার জন্য গত এক সপ্তাহের পত্রিকা। সাপ্তাহিকের ক্ষেত্রে তিনটি সংখ্যা জমা দেওয়ার জন্য বলা যেতে পারে। সাংবাদিক পরিচয়পত্র বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পত্রিকার এডিটর/ প্রেস ক্লাবের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। যেসব সাংবাদিককে অনুমোদন দেওয়া হবে। তাদের বিস্তারিত তথ্য ইস্যু নম্বরসহ রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে এবং ইস্যুকৃত কার্ডে রিটার্নিং অফিসার/ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর, সিল ও তারিখ থাকতে হবে।
সাপোর্ট স্টাফ
টেলিভিশনের সাংবাদিকদের প্রযুক্তিগতভাবে সহায়তা করার জন্য যেসব সাপোর্ট স্টাফ (ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান) নিয়োজিত থাকবেন। তাদেরকে সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) কার্ড প্রদান করতে হবে।
গাড়ি/মোটরসাইকেল স্টিকার
সাংবাদিকদের যাতায়াতের জন্য যৌক্তিক সংখ্যক গাড়ি ও মোটরসাইকেলের স্টিকার প্রদান করা হবে। প্রয়োজনীয়তার নিরীখে ও বাস্তবতার আলোকে স্থানীয় প্রশাসন (রিটার্নিং অফিসার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার সমন্বিতভাবে) প্রকৃত সাংবাদিকদেরকে ভোটকেন্দ্রে গমনাগমন করতঃ সংবাদ সংগ্রহের লক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র, এনআইডির কপি এবং যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হবে সেই মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিলে তার সঠিকতা যাচাই করে রিটার্নিং অফিসার বা রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাড়ি/মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দেবেন। কোনো সাংবাদিকের জন্য গাড়ি ও মোটরসাইকেলের স্টিকার প্রদান করা হলে স্টিকারের ক্রমিক নম্বর রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে।
সাংবাদিক কার্ড, সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) কার্ড, গাড়ির স্টিকার প্রিন্ট ও সরবরাহ
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় হতে বিভিন্ন নির্দেশনাসহ নির্বাচনভিত্তিক সাংবাদিক কার্ড, সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) কার্ড, গাড়ি ও মোটরসাইকেলের স্টিকার মুদ্রণ করা হয়। এগুলো বিভিন্ন নির্বাচনে চাহিদা অনুযায়ী সারাদেশে ব্যবহার করা হয়।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের অবহিতকরণ
নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের সময় সাংবাদিকদের বিষয়ে অনুমোদিত নীতিমালাসমূহ রিটার্নিং অফিসার, সহকারি রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার এবং আইনশৃক্সখলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিতে হবে। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা এবং সাংবাদিক কার্ডের নমুনা সব ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইনশৃক্সখলা বাহিনী ও দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটদের সরবরাহ করতে হবে। নীতিমালাসমূহ যেসব সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে তাদেরকেও সরবরাহ করতে হবে।
সাংবাদিক কার্ড ও গাড়ির স্টিকার
মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাংবাদিক পরিচয়পত্র, সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) পরিচয়পত্র এবং গাড়ির স্টিকার অন্যান্য নির্বাচনি মালামাল সংগ্রহের সময় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখা হতে সংগ্রহ করতে হবে।
নির্বাচনি এলাকা ও ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের পালনীয় নির্দেশাবলী
ক. নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন, কিন্তু কোনোক্রমেই গোপন কক্ষের ভেতরের ছবি ধারণ করতে পারবেন না, তবে নির্বাচনি অনিয়মের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না;
খ. একইসঙ্গে পাঁচের অধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোটকক্ষে ভোটারদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারবেন না;
গ. ভোটকেন্দ্রের ভেতর হতে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ হতে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে, কোনোক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করা যাবে না;
ঘ. সাংবাদিকরা ভোটগণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, ছবি নিতে পারবেন তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না;
ঙ. কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকবেন;
চ. ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকগণ প্রিজাইডিং অফিসারের আইনানুগ নির্দেশনা মেনে চলবেন;
ছ. নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না;
জ. কোনো প্রকার নির্বাচনি উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না;
ঝ. নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যেকোনো ধরনের প্রচারণা বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা হতে বিরত থাকবেন;
ঞ. নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য নির্বাচনি আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন;
উপরোল্লিখিত নির্দেশনা কোনো সাংবাদিক পালন না করলে কার্ড ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ তার সাংবাদিক পাশ বাতিল করতে পারবেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বা ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ৮৪ক তে উল্লেখিত বিধান অনুযায়ী- নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত কোনো গণমাধ্যম প্রতিনিধিকে যদি কেউ বাধা প্রদান করে বা বাধা প্রদানের চেষ্টা করে, তাহলে এই বিধান অনুযায়ী তিনি ওই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবেন।
এ নীতিমালা নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ও উপনির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হবে।
নির্বাচন কমিশনের আদেশক্রমে এ নীতিমালা জারি করা হলো। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ