ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৫৬ পিএম
শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা ও ন্যূনতম মজুরির সুপারিশ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন। গতকাল সোমবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশনের সদস্যরা। প্রতিবেদনে সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও শ্রমিক আন্দোলনে নিহত সব শ্রমিককে রাষ্ট্র কর্তৃক শহীদের স্বীকৃতি প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শ্রম সংস্কার কমিশন সুপারিশগুলোর মধ্যে ২৫টি মূল সুপারিশকে গুরুত্বারোপ করেছে।
সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, শ্রম খাতে দুর্ঘটনা বা অবহেলাজনিত কারণে নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় যথাযথ নীতি গ্রহণ। একই সঙ্গে রানা প্লাজা, তাজরিনস গার্মেন্টস এবং হাসেম ফুডসহ উল্লেখযোগ্য কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত বিচার ও শাস্তির আওতায় আনা। সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতির কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ গতকাল ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে অনেক সুপারিশ আছে। তার মধ্যে আমার যেটি বেশি পছন্দ হয়েছে তা হলো কর্মপরিবেশে শ্রেণিক্ষমতায় তুই-তুমি সম্বোধন চর্চা বন্ধ করা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে ৮ কোটি শ্রমজীবী মানুষ আছেন। তার মধ্যে ৮৫ শতাংশ বা ৭ কোটি শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নেই। শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিটি এই শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে। আজাদ মজুমদার বলেন, দেশের শ্রমিকদের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সুপারিশ করেছে কমিশন।
এতে বলা হয়েছে, কোনো শ্রমিক যেন ন্যূনতম মজুরির চেয়ে কম মজুরি না পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে পরিচয়পত্র দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে, সেসব মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করারও কথাও বলেছে কমিশন।
শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত এবং তাদের দর-কষাকষি করার প্রক্রিয়া যেন আরও সহজ হয়, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি দূর করতে ২০০৯ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে কমিশন। সেই সঙ্গে নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করার কথা বলা হয়েছে, যে সুপারিশ অন্যান্য কমিশনও করেছে।
শ্রমিকদের কল্যাণে সর্বজনীন তহবিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রম আদালতসহ আপিল বিভাগের সর্বক্ষেত্রে যেন বাংলা প্রচলন করা হয়, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী-পুরুষের সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিআইএলএস) এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে।
কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র টিইউসির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি তপন দত্ত, বাংলাদেশ লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম নাসিম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি এম কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আখতার চৌধুরী, আলোকচিত্রী ও শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক তাসলিমা আখতার এবং একজন ছাত্র প্রতিনিধি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ