দগ্ধদের চিকিৎসা
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫ ০৯:২৬ এএম
সংগৃহীত ছবি
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধদের বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। দেশের চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি চীন, সিঙ্গাপুর ও ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে এসেছে সরকার। গতকাল শুক্রবারও অব্যাহত থাকে দগ্ধদের আর্তনাদ এবং স্বজনদের আহাজারি। আর সর্বোচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসাসেবা প্রদানের পরও গতকাল শুক্রবার সাড়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৪০ এবং পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক।
গতকাল শুক্রবার মারা যাওয়া দুই শিশুর একজনের নাম মুসাব্বির মাকিন (১৩)। চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বেলা একটা পাঁচ মিনিটে রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। এ নিয়ে এই ঘটনায় বার্ন ইনস্টিটিউটে ১৫ জন মারা গেল।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বলেন, মুসাব্বিরের শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। মুসাব্বির মাইলস্টোন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবার নাম মো. মহসিন। তিনি পেশায় স্যানিটারি ব্যবসায়ী। গ্রামের বাড়ি গাজীপুর। দুই ভাইয়ের মধ্যে মুসাব্বির ছোট ছিল।
এর আগে শুক্রবার সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তাসনিম আফরোজ আইমান (১০)। তার শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। সে মাইলস্টোন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে মা-বাবার সঙ্গে উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে থাকত। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। বাবার নাম ইসমাইল হোসেন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় মারা গেছে ৩২ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৫১ জন। যদিও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। এরপর সেদিন রাতে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান। যে কারণে তখন গণমাধ্যমে নিহত হওয়ার সংখ্যা ৩২ উল্লেখ করা হয়েছিল।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের তথ্যের ভিত্তিতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২০ শিক্ষার্থী, ২ জন শিক্ষক ও ২ জন অভিভাবক নিহত হয়েছেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৪০, পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক : বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এখনও পর্যন্ত ভর্তি আছেন ৪০ জন। তাদের মধ্যে ক্রিটিক্যাল রোগী আছেন পাঁচজন। গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
পরিচালক বলেন, ‘এই মুহূর্তে বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঁচজন ক্রিটিক্যাল রোগীর পাশাপাশি সিভিয়ার গ্রুপে আছে ১০ জন। আর ইন্টারমেডিয়েট পর্যায়ে আছে ২৫ জন। ২৫ জনের মধ্যে ১৫ জনকে আমরা কেবিনে শিফট করেছি। একটি ভালো খবর হলো, যারা ভেন্টিলেশনে আছেন তাদের মধ্যে দুজন সজাগ আছেন এবং নিজেরা নিঃশ্বাস নিতে পারছেন। যদিও আমরা দুজনকে হারিয়েছি, কিন্তু কাল থেকে আজকের মধ্যে এই উন্নতির জায়গাটা আমরা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটা ভালো মতো দেখে শনিবার আমাদের প্ল্যান আছে যে, চার থেকে পাঁচজন রোগীকে আমরা ছুটি দিয়ে দিবো। পরবর্তী সময়ে আরও কিছু সংখ্যক রোগীকে ছুটি দিতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।’
হতাহতের সর্বশেষ তথ্য জানাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় : মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে। এছাড়া দগ্ধ হয়ে রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫০ জন। গতকাল শুক্রবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় শুক্রবার বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত মোট ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৫০ জন।
এতে জানানো হয়, হতাহতদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটউটে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন, লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ১ জন ও ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জনসহ মোট ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটউটে ভর্তি রয়েছেন ৪০ জন। এছাড়া, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৮ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালে ১ জনসহ মোট ৫০ জন ভর্তি রয়েছেন।
দগ্ধদের চিকিৎসাসেবা শুরু করল চীনা বিশেষজ্ঞ দল : বিমান দুর্ঘটনায় চিকিৎসা সহায়তা দিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসেছেন পাঁচ সদস্যের এক চীনা চিকিৎসক দল। এরই মধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছেন তারা।গতকাল সকাল ৯টায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছেন চীনা বিশেষজ্ঞ দল। আহত ও দগ্ধদের পর্যবেক্ষণ শেষে, চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন তারা। সিঙ্গাপুর ও ভারতীয় দলের সঙ্গে দেবেন সমন্বিত চিকিৎসা। পরে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংও করতে পারেন।
এদিকে হাসপাতাল চত্বরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিমান বাহিনী রাখছে কড়া নজরদারি। বার্ন ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে কোনো ব্লাড বা স্কিন ডোনারের প্রয়োজন নেই। আহতদের চিকিৎসার সব খরচ বহন করবে সরকার।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা এসে পৌঁছায় চীনা বিশেষজ্ঞ দল। বিমানবন্দরে এই চিকিৎসক দলকে স্বাগত জানান বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গ্লোবাল হেলথ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অনুবিভাগের প্রধান সৈয়দা জেসমিন সুলতানা মিল্কি।
চীনের দূতাবাস জানিয়েছে, চিকিৎসা দলটি এসেছে দেশটির হুবেই প্রদেশেন উহান থার্ড হসপিটাল থেকে।
বার্ন ইনস্টিটিউটে ভারতীয় চিকিৎসক দল : বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের সহায়তা দিতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। গত বৃহস্পতিবার সকালে দলটি বার্ন ইনস্টিটিউটে যায় এবং হাসপাতালটিতে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এসে এখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা গুরুতর দগ্ধদের বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং চিকিৎসার পদ্ধতি সম্পর্কে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারিতে ভারতের দুই শীর্ষ চিকিৎসা কেন্দ্র- দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল ও সাফদারজং হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সমন্বয়ে দলটি বুধবার দেশে এসে পৌঁছায় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে ভারতীয় হাই কমিশন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ