লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৫ ০৬:১৬ এএম
স্বাস্থ্যকর রান্নার তেল: কোন তেলের কী উপকার, কী ক্ষতি
বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এই সচেতনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রান্নার তেল নির্বাচন। প্রতিদিন ব্যবহৃত এই উপাদানটি সরাসরি প্রভাব ফেলে আমাদের স্বাস্থ্য ও শরীরের কার্যক্রমে। তাই কোন তেল কতটা স্বাস্থ্যকর কিংবা ক্ষতিকর—তা জানা অত্যন্ত জরুরি। পুষ্টিবিদ স্বর্ণালী দাশ বিজয়া এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।
তেলের স্মোকিং পয়েন্ট
রান্নায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তেলের স্মোকিং পয়েন্ট। এটি এমন একটি তাপমাত্রা, যার পর তেল থেকে নীলাভ ধোঁয়া বের হয় এবং তেলের উপকারী গুণাবলি নষ্ট হতে শুরু করে। তখন চর্বি ভেঙে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল তৈরি হয়, যা শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই উচ্চ স্মোকিং পয়েন্টবিশিষ্ট তেল উচ্চ তাপে রান্নার জন্য নিরাপদ, অন্যদিকে নিম্ন স্মোকিং পয়েন্টবিশিষ্ট তেল কম তাপে ব্যবহারের উপযোগী।
বিভিন্ন তেলের উপকার ও অপকার
সরিষার তেল
সরিষার তেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ এবং এর স্মোকিং পয়েন্ট উচ্চ হওয়ায় ডিপ ফ্রাই রান্নায় উপযোগী। এতে মনো ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। তবে এতে থাকা এরুসিক অ্যাসিড দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং কিছু মানুষের ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
জলপাই তেল
বিশেষ করে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এতে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকায় হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি উচ্চ স্মোকিং পয়েন্টসম্পন্ন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।
সয়াবিন তেল
ওমেগা-৩ ও ৬ এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এই তেল হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সয়াবিন তেল স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং লিভারে চর্বি জমা করে।
ক্যানোলা তেল
স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম ও ওমেগা-৩ ফ্যাট বেশি থাকায় ক্যানোলা তেল হৃদরোগের জন্য উপকারী। এর স্মোকিং পয়েন্ট মাঝারি থেকে উচ্চ হওয়ায় এটি স্টির-ফ্রাই কিংবা গ্রিল করার জন্য ভালো।
রাইস ব্রান তেল
ধানের তুষ থেকে উৎপাদিত এই তেল কোলেস্টেরলমুক্ত এবং ওরিজনল নামক উপাদান থাকার ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এটি উচ্চ স্মোকিং পয়েন্টসম্পন্ন।
পাম তেল
পাম তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকায় এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে এতে থাকা ভিটামিন ই-এর উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। একই তেল বারবার গরম করলে এটি টক্সিন উৎপন্ন করে এবং ক্যানসারসহ হজমজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
পরামর্শ
রান্নার তেল বেছে নেওয়ার সময় তার পুষ্টিগুণ, স্মোকিং পয়েন্ট এবং ব্যবহারের পরিমাণ বিবেচনায় নেওয়া উচিত। সর্বোত্তম স্বাস্থ্য রক্ষায় একাধিক তেলের সুষম ব্যবহার ও পরিমিত ব্যবহারই হতে পারে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।
ভোরের আকাশ//হ.র