ইশরাকের শপথ ইস্যু
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ০৯:১৬ এএম
হাইকোর্টে আদেশ আজ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি দলীয় প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানো যাবে কিনা- সে বিষয়ে আজ বুধবার আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন।
ইশরাক হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তাদের সহযোগিতা করেছেন ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. মাহফুজুর রহমান মিলন ও খান জিয়াউর রহমান।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে দাখিল করা রিট আবেদনের ওপর গতকাল দুই দফা শুনানি হয়। প্রথম দফা দুপুর ১টায় শুনানি শুরু হয়ে চলে প্রায় ২টা পর্যন্ত। এরপর আদালতে বিকাল ৪টা ১০ মিনিট থেকে প্রায় সোয়া ৫টা পর্যন্ত শুনানি চলে। রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন রুল জারির আর্জি জানান। তিনি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় থেকে পাঠ করে কিছু কিছু জায়গায় কয়েকটি ‘ভুল’ চিহ্নিত করে আদালতে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এসব ‘ভুলের’ কারণে ট্রাইব্যুনালে রায় ও ডিগ্রি বাতিলযোগ্য। অন্যদিকে ইশরাকের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আদালতকে বলেন, নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় ও আদেশে ভুল থাকলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করার সুযোগ আছে। তবে সেটা করতে পারবে মামলার বিবাদী পক্ষ অর্থাৎ ফজলে নূর তাপস। কিন্তু সেখানে আপিল না করে একজন আইনজীবী রিটকারী হয়ে হাইকোর্টে আসতে পারেন না। তাই এ রিট খারিজযোগ্য। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে যাতে শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দাখিল করা হয়।
গত ১৪ মে রিট আবেদনটি দাখিল করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ। এই রিট আবদেনের ওপর গতকাল শুনানি হলো। ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ের কপি পাওয়ার পর গত ২৭ এপ্রিল ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি।
এই গেজেট প্রকাশের পরই আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত না নিয়েই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এর পরই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। পরবর্তীতে তাকে শপথ না পড়াতে পাঠানো হয় আইনি নোটিশ। এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।
পাঁচ বছর আগে ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা করা হয়, ইভিএম মেশিনে ভোট জালিয়াতি করা হয়, নির্বাচনে ভোটারদের ভোটগ্রহণে বাধা দেওয়া হয়, নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি করা হয়। ব্যাপক জালিয়াতি ও কারচুপির ঘটনা ঘটলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে নূর তাপস দক্ষিণের মেয়র নির্বাচিত হন।
নির্বাচনে ব্যাপক হলেও নির্বাচন কমিশন পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি ওই দুইজনকে মেয়র ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। এতে তাপসের ভোট দেখানো হয় সোয়া চার লাখ। আর ইশরাকের ভোট দেখানো হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার। এরপর শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই সপরিবারে বিদেশে পাড়ি জমান তিনি। তবে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর তাদের মেয়র পদ থেকে তাপসকে বহিষ্কার করা হয়।
নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তিকে আবেদন করতে হয়। এই আইন মেনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ৩ মার্চ ইশরাক হোসেন বাদী হয়ে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলায় তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)কে এম নুরুল হুদা, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ মোট আটজনকে বিবাদী করা হয়।
আইন অনুযায়ী মামলার পর পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করার কথা ট্রাইব্যুনালের। কিন্তু ইশরাকের ক্ষেত্রে ৫ বছরের বেশি সময় লাগলো। আইন অনুযায়ী এই রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে তিনি নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারবেন। নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনাল ১২০ দিনের মধ্যে আপিলটি নিষ্পত্তি করবেন।
এর আগে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে গত বছরের ১ অক্টোবর রায় দেন আদালত। চট্টগ্রামের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ খাইরুল আমীন এ রায় দেন। এ রায়ের পর গত বছর ৮ অক্টোবর ইসি গেজেট প্রকাশ করে। এরপর ৩ নভেম্বর শপথ নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসেন ডা. শাহাদাত হোসেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ