নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫ ১০:২৪ পিএম
রায় ঘোষণার পর এটিএম আজহারের আইনজীবীদের ব্রিফিং
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করেন।
এই রায়ের ফলে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। রায় ঘোষণার পর প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকলে তার মুক্তিতে বাধা নেই।
ব্রিফিংয়ে আজহারুল ইসলামের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সব অভিযোগ থেকে এটিএম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। আজ থেকে, এখন থেকে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেপারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম ‘ইজ এন ইনোসেন্ট ম্যান (একজন নিষ্পাপ মানুষ)’।
তিনি বলেন, আমরা একটি শর্ট অর্ডার চেয়েছি, অ্যাডভান্স অর্ডার চেয়েছি, এই অ্যাডভান্স অর্ডার আদালত মঞ্জুর করেছেন। আদালত বলেছেন, আমরা চেষ্টা করবো আজকেই যেন এবং আজ ও কালকের মধ্যেই এই শর্ট অর্ডারটা যেন প্রসেস হয়ে এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পেতে পারেন এজন্য আমরা সব আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে আমরা মনে করি সত্য জয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে। জামায়াতের এবং বিএনপির ছয়জন শীর্ষস্থানীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। অন্তত পাঁচজন জেলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন নির্যাতনের শামিল।
তিনি বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলাম সৌভাগ্যবান, তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন, আল্লাহ তাআলা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাই। আমরা এটাও মনে করি এই রায়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিসের অবসান হয়েছে। এই রায় ঘোষণার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের আদালতের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।
আদালত চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বলেও জানান এই আইনজীবী।
গত ৮ মে মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়। ওইদিন শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের (২৭ মে) দিন ধার্য করেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় রায় ঘোষণা করা হলো আজ।
গত ৬ মে এটিএম আজহারের আপিল শুনানি শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা-হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে ২ নম্বর, ৩ নম্বর এবং ৪ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ৬ নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়। আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।
ওইদিন আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী (প্রয়াত) খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন (প্রয়াত) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট আবেদন করেছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার এ আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।
ওই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এটিএম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দেন। এরপর তিনি আপিল করেন।
ভোরের আকাশ/আজাসা