ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:৩৬ পিএম
সংগৃহীত ছবি
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির ‘মূলহোতা’ মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে রিমান্ড শুনানির জন্য আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। আজ তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর দুদকের পক্ষে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়।
আবেদনে বলা হয়, আসামি অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ স্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭৫ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়ন কাজের নামে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগসহ দেশে এবং দেশের বাইরে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া তার নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের নামে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে তাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। এ অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে অনুসন্ধান ও মামলাটি তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য আসামির ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন। এ সময় আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে দুদক রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসঙ্গে অধিকতর রিমান্ড শুনানির জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন মিঠু
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির মূলহোতা হিসেবে পরিচিত মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে বুধবার রাজধানীর গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, বিশেষ অভিযানে তাকে গুলশানের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে-স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, টেন্ডার জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন। সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে ছিলেন।
ডিবি জানায়, মিঠু দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির অন্যতম মূলহোতা হিসেবে চিহ্নিত।
দুদকের মামলা : স্বাস্থ্যখাতে ‘সিন্ডিকেট করে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারে’ জড়িত থাকার অভিযোগে আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর বিরুদ্ধে গত বুধবার মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে দুদকের উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলা করার দিনই বিকালে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলাটি অনুমোদনের তথ্য দিয়েছিলেন।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইস ও টেকনোক্রেট নামের কোম্পানির মালিক মো. মোতাজ্জেরুল ইসলাম (মিঠু) কৃষিজমি ক্রয়, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে মোট ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন।
এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার ও বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী মিলিয়ে তার আরও ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ২৩৮ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৮ টাকা। এছাড়া মিঠুর নামে পারিবারিক ব্যয়ের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৪ টাকা। অর্থাৎ পারিবারিক ব্যয়সহ তার মোট সম্পদ ও ব্যয়ের হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ১৭২ টাকা।
দুদক বলছে, ব্যবসা, বাড়িভাড়া, কৃষি আয়, বেতন-ভাতা, ফার্মের অংশ, ব্যাংক সুদ, নিরাপত্তা জামানতের সুদ এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্স থেকে মোতাজ্জেরুল ইসলামের বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ৭১ কোটি ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩৫ টাকা।
ভোরের আকাশ/এসএইচ