আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৫ ০৫:৪৮ এএম
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ওপর মাখোঁর চাপ
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ব্রিটেনের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারকে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডনে যাচ্ছেন মাখোঁ। এ সফরে কূটনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে ফিলিস্তিন ইস্যু।
মাখোঁর এই সফরকালে তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দুই কক্ষে ভাষণ দেবেন এবং স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। সফরের আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া অভিবাসীদের ঠেকাতে ‘ওয়ান-ইন, ওয়ান-আউট’ ভিত্তিক একটি অভিবাসন চুক্তি, ফ্রান্স-ব্রিটেন যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প এবং ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা।
তবে আলোচনার সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত বিষয় হতে যাচ্ছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রসঙ্গ। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষয়টি নিয়ে ডাউনিং স্ট্রিট ও এলিসি প্রাসাদের মধ্যে পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণে মতবিরোধ রয়েছে। যদিও উভয় দেশই বলছে, ‘যথাসময়ে’ পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তবে কবে ও কীভাবে—সে বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট মাখোঁ এই প্রক্রিয়াকে দ্রুত এগিয়ে নিতে আগ্রহী। এর আগে তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে জাতিসংঘে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের চেষ্টা করেছিলেন, তবে ইসরায়েলের ইরান হামলার কারণে সেটি বাতিল হয়ে যায়। ফ্রান্সের বিশ্বাস, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে, ব্রিটিশ সরকারের কিছু কর্মকর্তা মনে করছেন, এ স্বীকৃতি যদি কেবল প্রতীকী হয় এবং হামাসকে চাপ প্রয়োগ না করা হয়, তবে তা ফলপ্রসূ হবে না। তারা বলছেন, স্বীকৃতির আগে হামাসকে অস্ত্র পরিত্যাগ এবং শাসন থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা এমন একটি দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান চাই, যা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি—উভয় জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। স্বীকৃতি তখনই দেওয়া হবে, যখন তা শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে।”
এদিকে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনকে একতরফা স্বীকৃতির বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, এটি হামাসকে ‘পুরস্কার দেওয়ার’ সামিল, বিশেষ করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার প্রেক্ষাপটে।
গণমাধ্যম বলছে, মাখোঁ ও স্টারমারের মধ্যে গাজা যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও আলোচনা ফলপ্রসূ হবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিও জটিল হয়ে উঠছে। ধারণা করা হচ্ছে, সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে একটি নতুন বামপন্থি দল গঠিত হতে পারে, যার ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থান স্টারমারের তুলনায় আরও কঠোর হবে। এই প্রেক্ষাপটে মাখোঁর চাপ স্টারমারের জন্য কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
ভোরের আকাশ//হ.র