মানবিক সংকটে গাজা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ০৯:৪৪ এএম
৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা জাতিসংঘের
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সাহায্য না পৌঁছে, তাহলে প্রায় ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে। বিবিসি রেডিও ৪-এর আজকের প্রোগ্রামে আন্না ফস্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
টম ফ্লেচার জানান, ইসরায়েল ১১ সপ্তাহের অবরোধ তুলে নেওয়ার পর সোমবার মাত্র ৫টি ত্রাণবাহী লরি গাজায় ঢুকেছে। তবে এখনও সেগুলোর সাহায্য স্থানীয় জনগণের কাছে পৌঁছায়নি। তিনি আশা করছেন মঙ্গলবার গাজায় ১০০টি লরি প্রবেশ করানো যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় মানবিক সহায়তা প্লাবনের মতো প্রবাহিত করতে হবে। তার বদলে সেখানে যে সাহায্য ঢুকছে তাকে তিনি সমুদ্রে এক ফোটা পানির সঙ্গে তুলনা করেছেন।
টুডে প্রোগ্রামে তিনি বলেন, ‘আগামী ৪৮ ঘণ্টায় যত বেশি সম্ভব এই শিশুদের বাঁচাতে চাই। এই সংখ্যা কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের শক্তিশালী মাঠ পর্যায়ের দল রয়েছে, যারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে।
এদিকে রাতভর ইসরায়েলি বিমান হামলায় মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে গাজায় অন্তত ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এই হামলাটি এমন সময়ে হলো যখন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছে, তারা যেন গাজায় ‘নতুন করে সামরিক অভিযান বন্ধ করে এবং মানবিক সাহায্যের প্রবাহ বাড়ায়।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যুদ্ধ আগামীকালই শেষ হতে পারে’ যদি হামাস জিম্মিদের মুক্তি দেয় এবং অস্ত্র ফেলে দেয়। গাজায় বর্তমানে আনুমানিক ৫৮ জন জিম্মি রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৩ জন জীবিত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার
এদিকে গাজায় ‘মারাত্মক’ সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কানাডা।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার ফরাসি ও কানাডিয়ান নেতাদের সঙ্গে একযোগে ইসরায়েল সরকারকে সামরিক অভিযান বন্ধ ও অবিলম্বে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়ার আহ্বান জানান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
তিন দেশের যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা সবসময় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেছি। কিন্তু ইসরায়েলের এই অভিযান সম্পূর্ণভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ২ মার্চ থেকে গাজায় কোনও খাদ্য, জ্বালানি বা ওষুধ প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। জাতিসংঘ এই পরিস্থিতিকে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ‘বিপর্যয়কর প্রভাব’ বলে বর্ণনা করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই তিন দেশের অবস্থানকে ‘হামাসের জন্য একটি বিশাল পুরস্কার’ বলে উল্লেখ করেন।
রোববার নেতানিয়াহু বলেন, তার দেশ ১১ সপ্তাহের অবরোধের পর ‘সীমিত পরিমাণ খাদ্য’ প্রবেশ করতে দেবে। তবে তারা ‘সমগ্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার’ পরিকল্পনা করছে। তিন পশ্চিমা নেতা- স্যার কেয়ার স্টারমার, ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং মার্ক কার্নি নেতানিয়াহুর এই অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তারা বলেন, ‘নাগরিক জনগোষ্ঠীর জন্য অপরিহার্য মানবিক সহায়তা অস্বীকার করা অগ্রহণযোগ্য এবং এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
তারা আরও বলেন, গাজায় ভোগান্তির মাত্রা অসহনীয়। ইসরায়েলি সরকারের কিছু সদস্যের বিদ্বেষমূলক ভাষা ব্যবহারেরও নিন্দা জানান।
ইসরায়েল সরকারের সদস্যরা বলেছেন, ধ্বংসযজ্ঞের মুখে পড়ে গাজার বেসামরিক লোকজন এমনিতেই স্থানান্তর শুরু করবে।
এই তিন নেতা বলেন, স্থায়ী জোরপূর্বক স্থানান্তর আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, যত সংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারছে, তা জরুরি প্রয়োজনের তুলনায় এক ফোঁটাও নয়। এক সময় ব্রিটিশ কূটনীতিক ছিলেন তিনি।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কানাডার বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতির পক্ষে এবং ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধানের’ বাস্তবায়নের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে, যার অধীনে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে সহাবস্থানে থাকবে।
ভোরের আকাশ/আজাসা