ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫ ১০:৩৭ পিএম
নয়াদিল্লিতে ছুটে এলেন সৌদি ও ইরানি মন্ত্রী
কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ তীব্রতর হচ্ছে। বুধবার পাকিস্তানে ভারতীয় হামলার ঠিক পরেই, অনির্ধারিত সফরে রাতেই নয়াদিল্লিতে পৌঁছান সৌদি আরবের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর। একই সময়ে একদিনের সফরে ভারতে পা রাখেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাঘচি।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে সৌদি মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সামাজিকমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইরের সঙ্গে গঠনমূলক বৈঠক হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারত কীভাবে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তাকে জানানো হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জয়শঙ্কর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে সোমবার ৫ মে আরাঘচি পাকিস্তান সফর করেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, পেহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর থেকে পরিস্থিতি যে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা প্রশমিত করতে আলোচনাই একমাত্র পথ।
ইরানের সঙ্গে বৈঠকে ভারত জানিয়েছে, নতুন করে পরিস্থিতি আরো জটিল করতে চায় না নয়াদিল্লি। কিন্তু পাকিস্তান যদি সামরিক আক্রমণ করে, তাহলে তার যোগ্য জবাব দেবে ভারত।
আরাঘচির নেতৃত্বে যৌথ কমিশনের উদ্দেশে জয়শঙ্কর বলেন, এমন একটা সময়ে আপনারা ভারতে এসেছেন, যখন জম্মু-কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এক হত্যাকাণ্ডের জবাব দিতে আমরা ব্যস্ত। জম্মু-কাশ্মীরের ওই হামলা আমাদের সীমান্তপারের জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে বাধ্য করেছে। আমরা লক্ষ্যবস্তু বেছে বেছেই পালটা আঘাত করেছি। এ সময় জয়শঙ্কর বলেন, পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠুক, তা আমরা চাই না। তবে আমাদের ওপর আঘাত এলে নিঃসন্দেহে আমরা তা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিহত করব।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জয়শঙ্কও আরও বলেন, আপনারা আমাদের প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী। আপনাদের জন্য এই পরিস্থিতি বিশদভাবে জানা জরুরি। পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হন। এই হামলার তদন্তে ভারতের পক্ষ থেকে সৌদি আরবসহ একাধিক দেশের কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়।
ভারত পেহেলগামের ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানাবার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
এর আগেও বেশ কয়েকবার সংঘাত ও যুদ্ধে জড়িয়েছিল প্রতিবেশী দেশ দুটি। সবগুলো সংঘাতই তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্ততায় সমাধান হয়েছে। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শেষ হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে। এরপর ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধে পাকিস্তানসমর্থিত বিদ্রোহী ও সেনারা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের ভূখণ্ড দখল করেছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের চাপেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য হন। প্রায় দশ সপ্তাহের এই সংঘাতে উভয় পক্ষের প্রায় এক হাজার সেনা নিহত হন।
বর্তমান সংঘাতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি দেশ মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তদন্তে চীনের ভূমিকা জানতে চাওয়ার পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, আমরা ন্যায়সঙ্গত ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সংলাপ ও পরামর্শ জরুরি।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ৪ মে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে ফোনে বলেন, ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লি উভয়ের সদিচ্ছা থাকলে মস্কো রাজনৈতিক সমাধানে ভূমিকা নিতে প্রস্তুত। এর আগে, ২ মে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
পেহেলগাম হামলার চার দিন পর এক্সে দেওয়া এক বার্তায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি বলেন, এই কঠিন সময়ে ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে বোঝাপড়ায় সাহায্য করতে তেহরান তার কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতে প্রস্তুত।
এছাড়া মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এক্সে এক বার্তায় পাকিস্তানের স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্ত চাওয়ার আহ্বানকে সমর্থন জানিয়েছেন।
ভোরের আকাশ/আমর