আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫ ০৩:২৯ এএম
মিয়ানমারে নির্বাচনের সমালোচনা করলে কারাদণ্ড, নতুন আইন জারি করল জান্তা সরকার
ঘোষিত আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা, প্রতিবাদ বা বিরোধিতা করলে তিন থেকে ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন কার্যকর করেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। বুধবার (৩০ জুলাই) রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মায়ানমার-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
সামরিক জান্তা জানিয়েছে, বহুদলীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে সুরক্ষিত রাখতে এই আইন কার্যকর করা হয়েছে। তবে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা একে জান্তার শাসনকে বৈধতা দেওয়ার কৌশল হিসেবে দেখছে।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। এরপর থেকেই দেশটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। চলতি বছরের শেষ দিকে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে জান্তা সরকার, যাকে তারা শান্তির পথে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে দাবি করছে।
তবে উৎখাত হওয়া সংসদ সদস্য, বিরোধী দল এবং জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকেরা এই নির্বাচনী উদ্যোগকে ‘প্রতারণামূলক’ এবং ‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা’ হিসেবে দেখছেন।
প্রকাশিত ১৪ পৃষ্ঠার নতুন আইনে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্য, সংগঠিত কার্যক্রম, উসকানি, প্রতিবাদ বা লিফলেট বিতরণ—সবই নিষিদ্ধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে তিন থেকে সাত বছর এবং দলবদ্ধভাবে করলে পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
এছাড়া নির্বাচনকেন্দ্র, ব্যালট পেপার নষ্ট করা, ভোটার বা প্রার্থীদের ভয় দেখানো বা আঘাত করা—এসব অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ২০ বছরের সাজা নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে কেউ হত্যাকাণ্ড ঘটালে জড়িত সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধানও রাখা হয়েছে।
এদিকে বাস্তব পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলেই সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। ২০২৩ সালে জনগণনার জন্য মাঠে নামা সরকারি কর্মীরা নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। অস্থায়ী তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত এক কোটি ৯০ লাখের তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হয়নি, যার মূল কারণ ছিল ‘গুরুতর নিরাপত্তাজনিত প্রতিবন্ধকতা’।
বিশ্লেষকদের মতে, বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী ও অভ্যুত্থানবিরোধী গেরিলা দল এই নির্বাচনকে প্রতিহত করতে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করতে পারে।
গত মাসে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, “জান্তা সরকার একটি ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে গঠিত বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের চেষ্টা করছে।” তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই ‘প্রতারণামূলক প্রক্রিয়া’ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানান।
ভোরের আকাশ//হ.র