আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫ ১০:১৩ এএম
প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিলো রাশিয়া
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। এটি তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগান সরকারের প্রতি বিশ্বের কোনো দেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আমাদের দুই দেশের মধ্যে গঠনমূলক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।”
রাশিয়ার এই স্বীকৃতি মূলত তালেবান সরকারের নিয়োগ দেওয়া নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। কাবুলে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনভ সম্প্রতি আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেন।
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি রাশিয়ার এ সিদ্ধান্তকে “সাহসী পদক্ষেপ” আখ্যা দিয়ে বলেন, “রাশিয়া প্রথম দেশ হিসেবে এই স্বীকৃতি দিয়ে অন্যদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।”
তবে এখনো জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় কোনো সংস্থা তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র তালেবান নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে এবং আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ করে রেখেছে, যার ফলে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
রাশিয়া যদিও এ ক্ষেত্রে ভিন্ন পথে হাঁটছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান যখন আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়, তখন রাশিয়া একে যুক্তরাষ্ট্রের “ব্যর্থতা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। এরপর থেকেই মস্কো তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয়।
তালেবান নেতারা ২০২২ ও ২০২৪ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে আয়োজিত অর্থনৈতিক ফোরামে অংশ নেন। ২০২৩ সালে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মস্কো সফরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তালেবানকে “সন্ত্রাসবিরোধী মিত্র” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। একই বছর রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তালেবানকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়, যা ২০০৩ সাল থেকে বলবৎ ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে রাশিয়া এখন আফগানিস্তানকে আঞ্চলিক সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে আইএসআইএস মোকাবিলায় তালেবানের অবস্থানকে গুরুত্ব দিচ্ছে মস্কো।
রাশিয়া ইতোমধ্যেই কাবুলে ব্যবসায়িক কার্যালয় চালু করেছে এবং আফগানিস্তানকে গ্যাস পরিবহনের ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে।
ভোরের আকাশ//হ.র