নিখিল মানখিন
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৫ ০৮:৫২ এএম
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যকার বহুল প্রতীক্ষিত হাইভোল্টেজ এক বৈঠক আলাস্কা দ্বীপে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকটি গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১টা) শুরু হয়। তবে বৈঠকটি শুরুর আগেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম হতে থাকে। এই বৈঠক ঘিরে প্রত্যাশার চাপ অনেক বেশি। বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণ বদলে দিতে পারে এই ঐতিহাসিক বৈঠক। আবার শঙ্কাও আছে।
বৈঠক সফল না হলে সামনে ভয়ংকর সময় অপেক্ষা করছে বিশ্ববাসীর সামনে। ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকে কী হবে-এই প্রশ্ন গোটা দুনিয়ার মানুষের। পুতিনের সঙ্গে আলাস্কা বৈঠকে সাফল্যের সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ বলে বৈঠকের আগে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিট) বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্ত জানা সম্ভব হয়নি। তবে বৈঠক সূত্রসমূহ জানায়, একের পর এক কথোপকথনের মাধ্যমে বৈঠকটি শুরু হয়, যেখানে নেতাদের পাশাপাশি কেবল দোভাষী অংশগ্রহণ করেন। তারপর নেতাদের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা যোগ দেন। প্রতিটি পক্ষ থেকে পাঁচজন করে প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানতে আলাস্কায় তাকিয়ে রয়েছে বিশ্ববাসী।
রয়টার্স জানায়, শীর্ষ সম্মেলনের পরে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যে চুক্তি এবং বোঝাপড়া অর্জন করতে সক্ষম হবেন তার পরিসরের রূপরেখা দেওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল শুক্রবারের আলোচনার পর দ্বিতীয় বৈঠক হওয়ার বিষয়েও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুও বৈঠকে উঠতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রসমূহ জানিয়েছে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক পাওয়া কঠিন হবে: রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের মতে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, আলোচনার পরে এই ধরনের ডকুমেন্ট ‘প্রত্যাশিত নয়’ এবং কিছুই প্রস্তুত করা হয়নি। আর কোনো ডকুমেন্ট থাকার সম্ভাবনাও কম।’
পেসকভ বলেন, ‘তবে, শীর্ষ সম্মেলনের পরে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন হবে এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যে চুক্তি এবং বোঝাপড়া অর্জন করতে সক্ষম হবেন তার পরিসরের রূপরেখা দেবেন।’ তিনি বলেন, ‘শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি সীমিত সময়ের মধ্যে করা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে বর্তমান আলোচনা দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে চলছে এবং কিয়েভের অবস্থান পরবর্তী পর্যায়ে বিবেচনার জন্য রয়েছে।’
ক্রেমলিনের এ মুখপাত্র আরও বলেন, এর আগে মস্কোতে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক ফলপ্রসূ ছিল এবং শীর্ষ সম্মেলনের পথ প্রশস্ত করেছে।
তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘আলোচনার ফলাফল তাড়াহুড়ো করে ভবিষ্যদ্বাণী করা একটি ‘বড় ভুল’ হবে। তাই বৈঠকটি কেমন হয় তা দেখার আহ্বান জানিয়েছেন পেসকভ।
ওয়াশিংটন থেকে আলাস্কায় ট্রাম্প : হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সময়সূচি উল্লেখ করে রাশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা ‘তাস’ জানায়, আলাস্কার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে (শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে) ট্রাম্প ওয়াশিংটন ছেড়ে আলাস্কায় উদ্দেশে উড়াল দেন।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বহুল আলোচিত বৈঠকে অংশ নিতে এয়ার ফোর্স ওয়ানে চড়ে অ্যাঙ্কোরেজের পথে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
উড়োজাহাজে তার সঙ্গে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। আর প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট ও সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফকও রয়েছেন আলাস্কায় ট্রাম্পের আলাস্কা রওনা হওয়ার আগে নামগুলো প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস।
বৈঠকের আগের ঘটনাসমূহ : বৈঠকের আগে ফক্স নিউজ রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, এই সাক্ষাৎ ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে অন্তর্ভুক্ত করে দ্বিতীয় দফা আলোচনার পথ খুলে দিতে পারে। তবে কিয়েভকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জেলেনস্কি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তার অনুপস্থিতিতে গৃহীত যেকোনো সিদ্ধান্ত অর্থহীন হবে এবং তিনি কোনো ভূখণ্ড ছাড়বেন না।
বৈঠক ঘিরে অ্যাঙ্কোরেজে তেমন উচ্চপর্যায়ের প্রস্তুতি ছিল না। কেবল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সময়সীমা ও নিরাপত্তার কারণে পুরো আলোচনা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হবে বলে জানা গেছে। এটি ট্রাম্পের রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতির সময়সীমা দেওয়ার এক সপ্তাহ পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সময়সীমা শেষে তিনি নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন।
যুদ্ধ থামার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রাশিয়া বলছে, তারা দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া পুরোপুরি দখল এবং ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার অঙ্গীকার ছাড়া যুদ্ধ থামাবে না। অন্যদিকে ট্রাম্পের ‘অঞ্চল বিনিময়’ মন্তব্য কিয়েভে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপে ট্রাম্প কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পুতিন রাজি না হলে ‘খুব কঠোর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। তবে তিনি বৈঠকের পর জেলেনস্কিকে অবহিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনার কথা বলেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়ার মতে, পুতিনের মূল লক্ষ্য ইউক্রেনের ভূ-রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। সব মিলিয়ে, আলাস্কার এই বৈঠক উভয় নেতাকে একই টেবিলে বসালেও প্রকৃত সমঝোতায় পৌঁছানো কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্স জানায়, স্থানীয় সময় শুক্রবার শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি রুশ প্রেসিডেন্টকে ভয় পাবেন না আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আগে পুতিনের সঙ্গে কোনো চুক্তি চূড়ান্ত করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট এবং তিনি (পুতিন) আমার সঙ্গে ঝামেলা করবেন না... আমি প্রথম দুই মিনিট, তিন মিনিট, চার মিনিট বা পাঁচ মিনিটের মধ্যেই জানতে পারব... আমাদের বৈঠকটি ভালো নাকি খারাপ হবে।’
তিনি বলেন, ‘যদি বৈঠকটি খারাপ হয়, তাহলে এটি খুব দ্রুত শেষ হবে। আর যদি ভালো বৈঠক হয়, তবে আমরা খুব নিকট ভবিষ্যতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি।’
এছাড়া শীর্ষ সম্মেলন ব্যর্থ হওয়ার ২৫ শতাংশ আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে তিনি (পুতিন) একটি চুক্তি করতে যাচ্ছেন এবং আমরা খুঁজে বের করতে যাচ্ছি, আমি খুব দ্রুত জানতে যাচ্ছি।’ শীর্ষ এই বৈঠকেবৈঠকে তিনি আরও জানান, তার লক্ষ্য হলো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘দ্বিতীয় বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, কারণ এটি এমন একটি বৈঠক হতে চলেছে যেখানে তারা একটি চুক্তি করবে।’
রুশ প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ বৃহস্পতিবার বলেছেন, বৈঠকটি একের পর এক কথোপকথনের মাধ্যমে শুরু হবে, যেখানে নেতাদের পাশাপাশি কেবল দোভাষী অংশগ্রহণ করবেন। তারপর নেতাদের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা যোগ দেবেন। প্রতিটি পক্ষ থেকে পাঁচজন করে প্রতিনিধি থাকবেন।
ভোরের আকাশ/মো.আ.