আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৫ এএম
সংগৃহীত ছবি
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে নিয়ন্ত্রণ শক্ত করতে নতুন করে আগ্রাসী অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। রবিবার (৩১ আগস্ট) ভোর থেকে সারাদিনের গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় অন্তত ৭৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু, সাংবাদিক ও খাদ্য সহায়তার অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষও রয়েছেন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরা এ তথ্য প্রকাশ করে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণে জোরপূর্বক সরিয়ে দিতে অভিযান জোরদার করেছে ইসরায়েল। রোববার ভোর থেকে সারা গাজা উপত্যকায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে ৩২ জন খাদ্য সংগ্রহে বের হয়েছিলেন।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানায়, রোববার ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে আল-কুদস হাসপাতালের কাছে তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। রিমাল এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও তিনজন আহত হন।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতা অভিযোগ করেন, আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা “বিস্ফোরক রোবট” ব্যবহার করছে এবং জোরপূর্বক মানুষ সরিয়ে দিচ্ছে। তিনি জানান, গত তিন সপ্তাহে অন্তত ৮০টি বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এটিকে তিনি “ভূমি পোড়াও নীতি” আখ্যা দেন।
আল-থাওয়াবতা বলেন, ধ্বংস ও দুর্ভিক্ষ সত্ত্বেও গাজা সিটি ও উত্তরাঞ্চলের ১০ লাখেরও বেশি মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়ার নীতি মানতে অস্বীকার করছে।
ইনস্টাগ্রামে সাংবাদিক ফায়েজ ওসামা যে ভিডিও প্রকাশ করেছেন, আল জাজিরা তা যাচাই করে জানিয়েছে— সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। আহত এক শিশু পায়ে রক্তাক্ত অবস্থায় চিৎকার করছে, আরেকজনকে মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আশপাশের ভবনগুলো।
আগস্টের শুরু থেকে গাজা সিটিতে নিরবচ্ছিন্ন গোলাবর্ষণ চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। গত শুক্রবার তারা শহরটিকে “যুদ্ধক্ষেত্র” ঘোষণা করে এবং নতুন আক্রমণ শুরুর কথা জানায়।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ রোববার জানান, নিরবচ্ছিন্ন গোলাবর্ষণ ও বুলডোজার দিয়ে আবাসিক এলাকা ধ্বংস করে গাজা সিটিকে “ধ্বংসস্তূপের মাঠে” পরিণত করছে ইসরায়েল। তিনি বলেন, সেখানে তেমন কোনো যুদ্ধ নেই, শুধু ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। মানুষ পালাতেও পারছে না, কারণ কোথাও নিরাপদ আশ্রয় নেই।
রোববার ইসরায়েলি হামলায় আরও এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আল-কুদস আল-ইয়াওম টিভির সাংবাদিক ইসলাম আবেদকে গাজা সিটিতে হত্যা করা হয়।
গাজার গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২৪৭ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অন্য হিসাবে এই সংখ্যা ২৭০ জনেরও বেশি। সোমবার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হন, এর মধ্যে পাঁচজন ছিলেন সাংবাদিক।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৬৩ হাজার ৪৫৯ জন নিহত ও ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয়েছিল।
রোববার ইসরায়েলি সেনাপ্রধান আইয়াল জামির শীর্ষ কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে আরও হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। তিনি জানান, লড়াই আরও জোরদার করতে অনেক রিজার্ভ সেনাকে ডাকা হয়েছে।
এদিকে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেড দাবি করেছে, শনিবার তারা গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সেনাদের দুইটি যানবাহন আক্রমণ করেছে। এর মধ্যে একটি মার্কাভা ট্যাংকে ইয়াসিন-১০৫ রকেট নিক্ষেপ করা হয় এবং একটি ডি-৯ সামরিক বুলডোজারকে বিস্ফোরক দিয়ে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
ভোরের আকাশ/তা.কা