আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫ ০১:১৩ এএম
অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি মোদির
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। এই প্রেক্ষাপটে রাজ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার দুর্গাপুরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের পর এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি। সেখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কড়া বার্তা দেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস দেশের এবং পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তুষ্টিকরণ নীতির নামে তারা সীমা অতিক্রম করেছে। তারা সরাসরি অনুপ্রবেশকারীদের পক্ষে কাজ করছে, জাল নথিপত্র দিচ্ছে এবং এদের সুরক্ষা দিচ্ছে। যারা ভারতের সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করছে, তাদের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে তৃণমূল।”
তিনি আরও বলেন, “যে কেউ ভারতের নাগরিক না, যারা বেআইনিভাবে এদেশে প্রবেশ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পাশাপাশি তিনি বাংলার সংস্কৃতি ও আত্মমর্যাদা রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দেন।
বাঙালির আত্মমর্যাদা রক্ষায় বিজেপির অবস্থান স্পষ্ট করে মোদি বলেন, “বাংলা পরিবর্তন চায়, উন্নয়ন চায়। বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলায় ডবল ইঞ্জিন সরকার হবে। তৃণমূলের অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে শান্তি ও উন্নয়ন ফিরিয়ে আনব।”
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য, ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মোদি বলেন, “তৃণমূল সরকার থাকলে রাজ্যে শিল্পে বিনিয়োগ সম্ভব নয়। মুর্শিদাবাদের মতো এলাকায় পুলিশ পক্ষপাতমূলক আচরণ করে। সিন্ডিকেটের দাপটে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে থাকেন।”
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়াতেও মোদি সরাসরি জবাব দেন। মমতা সম্প্রতি অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই বাঙালিদের হেনস্তা করা হচ্ছে। এর জবাবে মোদি বলেন, বিজেপিই বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। তিনি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে মোদি বলেন, “ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের পক্ষ নিচ্ছে তৃণমূল নেতারা। শিক্ষাঙ্গনে এই ধরনের পরিস্থিতি বাংলার মেয়ে ও ছাত্রদের জন্য ভয়ঙ্কর। এটা বন্ধ করতে হলে তৃণমূলকে সরাতেই হবে।”
এদিন মোদি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নারী চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ও কবি বিষ্ণু দে’র জন্মদিন স্মরণ করেন এবং বাংলার ঐতিহ্যকে স্মরণ করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোদির বক্তব্যে ২০২১ সালের নির্বাচনী ভাষণেরই প্রতিফলন দেখা গেছে। তবে উন্নয়ন ও বিনিয়োগ ইস্যুতে কিছু নতুন বার্তা দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, বিজেপি নেতা ও অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী ঘোষণা দিয়েছেন, “আমি ২৩-২৪ তারিখ থেকে ময়দানে নামছি। মানুষের সমস্যা জানব এবং বুক চিতিয়ে লড়াই করব। আমি কোনো সমঝোতার রাজনীতি করি না।” তিনি পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানান।
রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়িয়ে মোদির এই সফর তৃণমূল ও বিজেপির দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করে তুলেছে। এখন দেখার বিষয়, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মোদির এই বার্তা কতটা প্রভাব ফেলে।
ভোরের আকাশ//হ.র