আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৫ ০১:৪৪ এএম
রাশিয়ার তেল কেনায় ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির কড়া জবাব দিল ভারত
রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর নতুন করে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের এই হুমকির জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট ভাষায় জানায়, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কোনো অপরাধ নয়; বরং এটি ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
ট্রাম্প সম্প্রতি সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বলেন, ভারত শুধু বিপুল পরিমাণে রাশিয়ান তেল আমদানিই করছে না, বরং সেই তেলের একটি বড় অংশ আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমূল্যে পুনরায় বিক্রি করছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রে যে বিপুল প্রাণহানি ঘটছে, তা নিয়ে ভারত কোনো ভ্রুক্ষেপ করছে না। এ কারণেই তিনি ভারতীয় পণ্যের ওপর 'উল্লেখযোগ্যভাবে' শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেন।
এর পাল্টা জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোও রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে পণ্য ও জ্বালানি আমদানি করছে। তাই শুধু ভারতকে এককভাবে দায়ী করা পক্ষপাতদুষ্ট এবং অযৌক্তিক।
সরকারি পরিসংখ্যান তুলে ধরে মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ২০২৪ সালে ইইউ-র সঙ্গে রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় পণ্যবাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৭.৫ বিলিয়ন ইউরো এবং সেবাখাতে আরও ১৭.২ বিলিয়ন ইউরো। একই বছরে ইউরোপ ১৬.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে, যা পূর্ববর্তী বছরের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতের প্রচলিত জ্বালানি সরবরাহকারীরা ইউরোপমুখী হওয়ায় ভারত বাধ্য হয়ে রাশিয়ার তুলনামূলক সস্তা তেলের ওপর নির্ভর করেছে। এমনকি সেই সময় আমেরিকার পক্ষ থেকেও ভারতকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল, যেন বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম স্থিতিশীল থাকে।
ভারত যুক্তরাষ্ট্রকেও স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমেরিকা এখনো রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড, প্যালাডিয়াম, সারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ আমদানি করছে। এ পরিস্থিতিতে শুধু ভারতকে শুল্কের হুমকি দিয়ে টার্গেট করাকে যুক্তিহীন ও প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিহিত করেছে দিল্লি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ভারত একটি দায়িত্বশীল অর্থনীতি হিসেবে জাতীয় স্বার্থ এবং বৈশ্বিক বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সামনে রেখে ভারতের ওপর দোষ চাপানো গ্রহণযোগ্য নয়।”
এদিকে ভারত সরকারের ঘনিষ্ঠ দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ট্রাম্পের হুমকির পরেও ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করতে পারেন।
ভোরের আকাশ//হ.র