আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫ ০৩:১৭ এএম
ট্রাম্পের পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন : পাত্তাই দিচ্ছে না রাশিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাকবিতণ্ডা থেকে ছড়িয়ে পড়া পারমাণবিক উত্তেজনার আশঙ্কার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার সীমান্তের আরও কাছে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী দুইটি সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে রাশিয়া এ ঘোষণা মোটেও গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে না বলে দেশটির প্রতিক্রিয়ায় ইঙ্গিত মিলেছে।
রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। মেদভেদেভ ট্রাম্পের ইউক্রেন ইস্যুতে চাপ প্রয়োগের ভাষা এবং আল্টিমেটামকে 'যুদ্ধের পথে একধাপ অগ্রগতি' হিসেবে উল্লেখ করেন। এর জবাবে ট্রাম্প মেদভেদেভকে ‘ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট’ আখ্যা দিয়ে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাবমেরিন মোতায়েনের কথা জানান।
তবে ট্রাম্পের ঘোষণায় রাশিয়া সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। রুশ সরকার, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়—কোনও পক্ষই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এক সামরিক ভাষ্যকার মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস-কে বলেন, "ট্রাম্প তার ক্ষোভের ঝাঁজ মেটাচ্ছেন মাত্র।"
সাবেক এক লেফটেন্যান্ট জেনারেল কোমারস্যান্ট-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, "ট্রাম্পের সাবমেরিন সংক্রান্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ অর্থহীন বাগাড়ম্বর।"
আরেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, "আমার বিশ্বাস, ট্রাম্প প্রকৃতপক্ষে কোনও সাবমেরিন মোতায়েন করেননি।"
২০১৭ সালেও উত্তর কোরিয়ার প্রতি শক্ত বার্তা দিতে গিয়ে এমন সাবমেরিন মোতায়েন করেছিলেন ট্রাম্প, তবে কিছুদিন পরেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আলোচনার আগে শক্ত বার্তা দেওয়ার কৌশল হতে পারে। অনেকের চোখে এটি একটি রাজনৈতিক চাল হিসেবেই বিবেচিত, যার উদ্দেশ্য রাশিয়াকে মনস্তাত্ত্বিক চাপে রাখা।
বিবিসির রাশিয়া সম্পাদক স্টিভ রোসেনবার্গ লিখেছেন, “রুশ কর্তৃপক্ষ এখনও সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানায়নি। হয় তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে, নয়তো এটিকে গুরুত্ব দেওয়ার মতো মনে করছে না।” তিনি আরও বলেন, “মেদভেদেভের পোস্ট ট্রাম্পকে এতটাই বিচলিত করেছে যে তিনি তার জবাবে পরমাণু সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন।”
সম্প্রতি ট্রাম্প ও মেদভেদেভের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাকবিতণ্ডা চরমে পৌঁছায়। ট্রাম্প রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে মাত্র দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিলে, মেদভেদেভ পাল্টা হুঁশিয়ারি দেন—এ ধরনের আল্টিমেটাম যুদ্ধকে উসকে দিতে পারে।
এরপর মেদভেদেভ পোস্টে সোভিয়েত আমলের 'ডেড হ্যান্ড' পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন, যা মূলত স্বয়ংক্রিয়ভাবে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া চালাতে সক্ষম। ট্রাম্প তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “যখন কেউ ‘পারমাণবিক’ শব্দ ব্যবহার করে, তখন আমার চোখ জ্বলে ওঠে। এটা চূড়ান্ত হুমকি।”
মেদভেদেভের আগ্রাসী পোস্ট নতুন কিছু নয়। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তবে এবার তার বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ট্রাম্প সরাসরি সামরিক হুমকিতে গেছেন, যা অনেকের কাছে বিস্ময়কর।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের আচরণ সবসময়ই অপ্রত্যাশিত। তিনি ব্যবসা বা রাজনীতি, সবক্ষেত্রেই বিপরীতপথে হাঁটার জন্য পরিচিত। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে এই পদক্ষেপও তার একটি কৌশল হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি, কোমারস্যান্ট, মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস, নিউজম্যাক্স
ভোরের আকাশ//হ.র