যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সামরিক উত্তেজনা
ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫ ১০:৫২ এএম
সংগৃহীত ছবি
বিশ্ব রাজনীতিতে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভের পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কিত মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মেদভেদেভের ওই মন্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ এবং ‘অনিচ্ছাকৃত বিপর্যয়ের পথ খুলে দিতে পারে’ বলে জানান ট্রাম্প। এই মন্তব্যের জবাবে ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রয়োজনীয় অঞ্চলে’ দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছ। এ ঘটনা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়।
মেদভেদেভ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সতর্ক করে জানান, ট্রাম্পকে রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধকালীন পারমাণবিক অস্ত্রব্যবস্থার ‘ডেড হ্যান্ড’ সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।
ডেড হ্যান্ড’ হলো একটি স্বয়ংক্রিয় প্রতিশোধমূলক পারমাণবিক অস্ত্রব্যবস্থা, যা মূলত ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় গড়ে উঠেছিল। এই ব্যবস্থা এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল, যাতে যদি কোনো প্রতিপক্ষ প্রথম আঘাতে সোভিয়েত কমান্ড সেন্টার ধ্বংস করে দেয়, তখনও রাশিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে পারমাণবিক প্রতিশোধ নিতে পারবে। মেদভেদেভের মন্তব্য মূলত এই প্রাচীন কিন্তু শক্তিশালী স্নায়ুযুদ্ধকালীন অস্ত্রব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত ছিল, যা বিশ্বকে নতুন করে সতর্ক করে।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র। তিনি লিখেছেন, ‘মেদভেদেভের ‘খুবই উসকানিমূলক মন্তব্যের’ কারণে আমি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন যথাযথ স্থানে মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছি। বোকামি এবং উত্তেজনাপূর্ণ কথা কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি করে যা অনিচ্ছাকৃত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। আমি আশা করছি, এবার এমন কিছু ঘটতে হবে না।”
তবে ট্রাম্প বলেননি, দুটি সাবমেরিন কোন অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি বিভ্রান্তি রয়েছে যে, ট্রাম্প কি পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিনের কথা বলছেন নাকি কেবল মাত্র পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের বিষয়টি উল্লেখ করছেন—তাহা স্পষ্ট করেননি।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সঠিক ব্যাখ্যা হয়নি। তাই দেশের নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভিন্ন ধরনের সজাগ পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। মেদভেদেভ ও ট্রাম্পের মধ্যে চলমান ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বৈরিতার প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্যগুলো নতুন করে পারমাণবিক সঙ্কটের আশংকা উস্কে দিয়েছে। এটি বিশ্ব শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সামরিক উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়েছে।
ফলে, সাংবাদিকরা ও কূটনীতিবিদরা উদ্বিগ্ন, যেন পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত সংকট কোনো বড় সামরিক সংঘাতে রূপ না নেয়। রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধকালীন অস্ত্রব্যবস্থার অন্যতম প্রধান অংশ ‘ডেড হ্যান্ড’ বা ‘মতশ চক্র’’ একটি ভয়ংকর স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম, যা প্রথম আঘাতের পর রুশ নেতৃত্বের ধ্বংস হলেও প্রতিশোধ নিশ্চিত করতে পারে।
এই অস্ত্র ব্যবস্থা এর আগে অনেকবার আলোচনায় এসেছে, বিশেষভাবে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশের মধ্যে উত্তেজনার সময়ে। মেদভেদেভের সতর্কবার্তা রাশিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতার এই অতীতকে পুনরুজ্জীবিত করে সারা বিশ্বে আতঙ্ক বাড়িয়েছে।
ট্রাম্পের সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণা এবং মেদভেদেভের সতর্কবার্তা এখনো ক্রেমলিন অফিস থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এই পারমাণবিক উত্তেজনাপ্রবণ পরিস্থিতি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে।
পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার ও এর প্রদর্শন শুধু সামরিক বাহিনী বা রাষ্ট্রীয় কূটনীতিতে সীমাবদ্ধ না থেকে গোটা মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই ধরনের ঘটনাসমূহ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে দ্রুত ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যাশা রয়েছে, যাতে বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়।
ভোরের আকাশ/তা.কা