ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে: ট্রাম্প
ইরান ও ইসরায়েল উভয় দেশই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানান, এই দুই দেশের সাম্প্রতিক আচরণে তিনি সন্তুষ্ট নন, বিশেষ করে ইসরায়েলের ভূমিকায় তিনি বেশ অখুশি।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) স্কাই নিউজ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ন্যাটো সামিটে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। আমি ইসরায়েলের আচরণে অত্যন্ত অখুশি।”
ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ‘শেষ হয়ে গেছে’। তার ভাষায়, “তেহরান আর কখনো পারমাণবিক প্রকল্প গড়ে তুলতে পারবে না।”
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে তিনি ইরানকে সতর্ক করে বলেন, “ইরান যদি আবারও ইসরায়েলে বোমা হামলা চালায়, তাহলে তা হবে যুদ্ধবিরতির বড় ধরনের লঙ্ঘন।” একইসঙ্গে তিনি ইসরায়েলকে নিজ দেশের পাইলটদের ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান।
এর আগে সোমবার (২৩ জুন) ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া আরেক পোস্টে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ইরান ও ইসরায়েল ১২ ঘণ্টার জন্য একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্পের ভাষায়, “প্রথমে ইরান যুদ্ধবিরতি শুরু করবে, এরপর ১২ ঘণ্টা পরে ইসরায়েলও এতে যোগ দেবে। এর ২৪ ঘণ্টা পর এই ‘১২ দিনের যুদ্ধ’-এর আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যুদ্ধবিরতির সময় উভয় পক্ষ শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ বজায় রাখবে। তিনি ইরান ও ইসরায়েল উভয় দেশকে সাহস, ধৈর্য ও কৌশলগত বুদ্ধিমত্তার জন্য ধন্যবাদ জানান।
ট্রাম্প আরও বলেন, “এই যুদ্ধ যদি দীর্ঘায়িত হতো, তাহলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংসের মুখে পড়ত। এটি বছরজুড়ে চলার মতো পরিস্থিতি তৈরি করত, কিন্তু সেটা হয়নি—এবং ভবিষ্যতেও হবে না।”
ভোরের আকাশ//হ.র
সংশ্লিষ্ট
ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হামদান প্রদেশ থেকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গুপ্তচর সন্দেহে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। মঙ্গলবার (২৪ জুন) ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা মিডল ইস্ট আই এ এই তথ্য জানায়।ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর এক কর্মকর্তা আলী আকবর করিমপুর জানিয়েছেন, হামদান, রাজান ও নাহাভান্দ শহরে সন্দেহজনক কার্যক্রমের বিষয়ে তারা তথ্য পেয়েছে, যা বিশ্বাসঘাতকতার চিহ্ন বহন করে। ওই অঞ্চলে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা অনলাইনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং ইরানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগে অভিযুক্ত।ইরান সরকার দীর্ঘদিন ধরেই গুপ্তচর ও শত্রুপক্ষের সন্দেহে বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটক করে আসছে। চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কড়াকড়ি করেছে তেহরান। এর আগে ডজনখানেক গুপ্তচর সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।বর্তমানে চলমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ইরান তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিশেষভাবে জোরদার করেছে। বিশেষ করে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারির মুখে দেশটির ভাবমূর্তি রক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।তেহরান সরকারের এই পদক্ষেপ যুদ্ধকালীন সময়ে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কড়া বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ইরানের এই ধরণের গ্রেপ্তার অভিযানকে দেশটির ভেতরে বিরোধীদের প্রতি কঠোর অবস্থানের প্রমাণ হিসেবেও দেখছেন।ভোরের আকাশ//হ.র
ইসরায়েলকে এবার সরাসরি কঠোর বার্তা দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ইরানে যেন আর কোনো বোমা হামলা না চালানো হয়। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে ট্রাম্প এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।মঙ্গলবার (২৩ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে সরাসরি সম্প্রচারে এই বার্তা দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “ইসরায়েল, বোমাগুলো ফেলো না। যদি এটা করো, তাহলে তা হবে যুদ্ধবিরতির বড় লঙ্ঘন। এখনই তোমার পাইলটদের দেশে ফিরিয়ে আনো।”এর আগে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইরানের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণের পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। এর পরপরই ট্রাম্প এই বার্তা দিয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেন।ট্রাম্পের এই বার্তা আসে এমন এক সময়, যখন মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা চরমে। সোমবার (২২ জুন) ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি আল-উদেইদ-এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। তেহরান জানায়, এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ‘প্রতিশোধ’।মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যক্সিওস জানায়, ইসরায়েলি এক কর্মকর্তার বরাতে তারা নিশ্চিত হয়েছে—কাতারে অবস্থিত ওই মার্কিন ঘাঁটিতে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি অ্যারাবিক-ও অ্যক্সিওস সূত্রে একই তথ্য নিশ্চিত করেছে।এদিকে ইরানের আধাসরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, হামলার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। বাহিনীটি জানায়, “দোহায় অবস্থিত আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে সরাসরি প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে।”ঘটনার কিছুক্ষণ আগে এক পশ্চিমা কূটনীতিক সতর্ক করে জানান, কাতারে অবস্থিত ওই ঘাঁটির ওপর ইরানের হামলার হুমকি পাওয়া যাচ্ছিল দুপুর থেকেই। পরে নিরাপত্তার কারণে সাময়িকভাবে কাতারের আকাশসীমাও বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার।ভোরের আকাশ//হ.র
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তেহরানের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসতে চায় জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (IAEA)। এ লক্ষ্যে সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি-কে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছেন।মঙ্গলবার (২৪ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করা এক বার্তায় বিষয়টি নিজেই নিশ্চিত করেন গ্রসি। তিনি লিখেছেন, “ইরান যদি আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা ফের শুরু করে, তাহলে তাদের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্ক কূটনৈতিকভাবে সমাধান করা সম্ভব হবে।”চিঠিটি পাঠানোর খবরটি আসে এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে।তবে এখনো ইরানের পক্ষ থেকে এই চিঠির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। যদিও তেহরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালে ইরান জাতিসংঘের এনপিটি (NPT) বা পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। তখন ইরানে শাসন করছিলেন শাহ রেজা পাহলভী। সেই চুক্তির আওতায় ইরান আইএইএ’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং জানায়, দেশটি কখনোই পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ বেছে নেবে না।তবে, গত ৬ জুন আইএইএ এক বিবৃতিতে জানায়, ইরান যে মাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করছে, তা দিয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব। এরপর ১৩ জুন ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওই হামলার কারণ হিসেবে আইএইএ’র প্রতিবেদনকেই উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা থেকে বিরত রাখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ১৬ জুন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, “ইরানে ইসরায়েলি হামলার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে আইএইএ। তাদের প্রতিবেদনই হামলার অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।”সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল ভোরের আকাশ//হ.র
দোহায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে কাতার। মঙ্গলবার (২৪ জুন) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।চিঠিতে কাতার এই হামলাকে “চরম বিপজ্জনক উসকানি” এবং দেশটির সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে।এতে আরও বলা হয়, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) কর্তৃক চালানো এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গভীর হুমকি। পাশাপাশি কাতার আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের আলোকে প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার সংরক্ষণ করে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।এই ঘটনার পর কাতারে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে দোহা। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে ছোড়া সব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে এবং এই হামলার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।মঙ্গলবার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের মধ্যে একটি টেলিফোন সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে আল-উদেইদ ঘাঁটিতে হামলার প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়।এ বিষয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম জানান, কাতারের আমির ইরানের প্রেসিডেন্টকে বলেন, তার দেশ সর্বদা ভালো প্রতিবেশী ও সুসম্পর্কের নীতি অনুসরণ করে। তবে তিনি ইরানের কাছ থেকে এমন “শত্রুতাপূর্ণ আচরণ” প্রত্যাশা করেননি।তিনি আরও জানান, কাতারের পক্ষ থেকে আলোচনায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়, এই ঘটনার কূটনৈতিক ও আইনি প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে এনে অতীত হিসেবে পেছনে ফেলতে দুই দেশকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।সূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসিভোরের আকাশ//হ.র