তাহলে কি বাণিজ্যচুক্তি শিগগিরই হচ্ছে না
ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৫ ১১:৩২ এএম
সংগৃহীত ছবি
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত বাণিজ্য আলোচনা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। মূল কারণ, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক। ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে, ২৫ শতাংশ জরিমানা শুল্ক প্রত্যাহার না হলে বাণিজ্য আলোচনা কোনোভাবেই শুরু হবে না।
ভারতীয় সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গতকাল শুক্রবার জানায়, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা এখন স্থগিত থাকলেও যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়নি। তবে আলোচনায় বসার আগে রাশিয়া থেকে তেল কেনার অজুহাতে আরোপিত অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কের সমাধান চাইছে ভারত।
ভারতের যুক্তি, এ শুল্ক বহাল থাকলে বাণিজ্যচুক্তির আলোচনার কোনো বাস্তবিক মূল্য নেই। ২৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নতুন শুল্ক চাপানোর ফলে সফর বাতিল হয়ে যায়। পরিস্থিতি আরও জটিল হয় ২৭ আগস্ট থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের মাধ্যমে। এত উচ্চ শুল্কহার এখন কেবল ভারত ও ব্রাজিলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হচ্ছে।ভারতের অবস্থান পরিষ্কার রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কোনো অপরাধ নয়; বরং এটি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখায় সহায়ক হয়েছে।
দিল্লি জানিয়েছে, জ্বালানি নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের প্রশ্নে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারত আরও মনে করিয়ে দিয়েছে, যুদ্ধ চলাকালীন সময়েও যুক্তরাষ্ট্র নিজেও রাশিয়া থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করেছে।
সুতরাং ভারত মনে করছে, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ একেবারেই ‘দুর্ভাগ্যজনক’। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও অনড়। ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো একাধিকবার ভারতের সমালোচনা করেছেন।
তার দাবি, ভারতীয় রিফাইনারিগুলো সস্তায় রুশ তেল কিনে পরিশোধিত পণ্য কালোবাজারে বিক্রি করছে, যার মাধ্যমে রাশিয়া অর্থ পাচ্ছে এবং তা ব্যবহার করছে ইউক্রেন যুদ্ধ চালাতে। নাভারো সরাসরি ভারতকে অভিযুক্ত করেছেন ইউক্রেনের মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করার জন্য।
তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, প্রতিদিন ভারতীয় কোম্পানিগুলো প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল পরিশোধিত জ্বালানি রপ্তানি করছে, যা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে কার্যত এক বিশাল রিফাইনারিতে পরিণত করেছে।
শুধু নাভারোই নন, ট্রাম্পের আরেক উপদেষ্টা কেভিন হাসেটও একই সুরে কথা বলেছেন। তার মতে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ না করলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ক কমানোর কোনো উদ্যোগ নেবেন না।
তিনি মন্তব্য করেছেন, বাজার উন্মুক্তকরণে ভারত একগুঁয়েমি করছে এবং দিল্লি তার অবস্থান না পাল্টালে ওয়াশিংটনও কোনো ছাড় দেবে না। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
ভারত বলছে, আলোচনায় বসার আগে শুল্ক সমস্যার সমাধান চাই। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিচ্ছে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার জন্য।
দুই পক্ষের অবস্থান এতটাই ভিন্ন যে, নিকট ভবিষ্যতে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো কঠিন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এমন উত্তেজনার মাঝেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদেশ সফরে রয়েছেন।
বর্তমানে তিনি জাপানে অবস্থান করছেন এবং এরপর যাবেন চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে। সেখানেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হবে। ফলে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নজর সেই বৈঠকের দিকেই, যা হয়তো নতুন কোনো কূটনৈতিক বার্তা বহন করতে পারে।
ভোরের আকাশ/তা.কা