ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫ ০১:১৪ পিএম
সংগৃহীত ছবি
ভারতের সঙ্গে গত মে মাসে সংঘাতের সময় দেশটির কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছিল পাকিস্তান।
এখন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন রাজা নাকভি দাবি করেছেন, তাদের হাতে ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও স্থানীয় ১ জন ঘোড়াচালক নিহত হন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন চরমে পৌঁছায়।
সে সময়ে নয়াদিল্লি অভিযোগ করে, পেহেলগাম হামলার সঙ্গে ইসলামাবাদের যোগসূত্র রয়েছে। ইসলামাবাদ দৃঢ়ভাবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল। পেহেলগাম হামলার পর গত মে মাসের শুরুতে দুই প্রতিবেশী দেশ আকাশযুদ্ধে জড়ায়, চার দিন ধরে ওই যুদ্ধ চলে।
পাকিস্তান সে সময় বলেছিল, যুদ্ধে তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমানও রয়েছে।
ভারতের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার জেনারেলও স্বীকার করেছেন, তাঁদের বাহিনী আকাশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে তাদের ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।
গত রোববার লাহোরে এক সেমিনারে নাকভি বলেন, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ ঘিরে কয়েকটি ঘটনায় তিনি যুক্ত ছিলেন এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তিনি জানতে পেরেছেন।
নাকভি আরও বলেন, দেড় মাস ধরে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী এবং সরকার, সবাই স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পর্দার আড়ালে থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গেছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, আমাদের সংস্থাগুলোর কাছে ভারতের পরিকল্পনা সম্পর্কে আগেই যথেষ্ট তথ্য ছিল।
আমরা জানতাম, তারা কী পরিকল্পনা করেছে এবং কোন উড়োজাহাজ ব্যবহার করতে চলেছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু তারা সামনে আসে না। আমাদের তাদের স্বীকৃতি দিতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও দাবি করেন, যখন ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়, তখনই কোনো প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নাকভি দাবি করেন, আমাদের কাছে রাডারের তথ্য আছে, কিন্তু আমাদের ময়দান থেকে পাওয়া প্রমাণের দরকার ছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে, আমরা গুলি করে ভূপাতিত করা ছয়টি যুদ্ধবিমানের ভিডিও ফুটেজ পেয়ে যাই। আমাদের কাছে ওই ভিডিও ফুটেজ আছে।
নাকভি এরপর দুটি ঘটনার বর্ণনা দেন, যেখানে পাকিস্তানের একটি ঘাঁটিতে সাতটি ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে।
তিনি আরও বলেন, একবার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোড়ার পর স্পষ্ট হয়ে যায় যে সেগুলো সীমানার ওপারে চলে যাচ্ছে। তবে নাকভি এখানে কোনো ঘাঁটির নাম অথবা জায়গার নাম উল্লেখ করেননি।
তিনি বলেন, লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, আমাদের এই ঘাঁটিতে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে। একটি ক্ষেপণাস্ত্রও ঘাঁটিতে আঘাত হানেনি। কয়েকটিকে (আকাশেই) ধ্বংস করা হয়েছে, কয়েকটি ঘাঁটির বাইরে আঘাত হানে। পাকিস্তান পাল্টা জবাব দিয়েছে।
এ বিষয়ে নাকভি বলেন, যখন আমরা আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিলাম, আমাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল জনবহুল এলাকায় থাকা সামরিক স্থাপনা, তবে আমরা সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলাম।
পাকিস্তান ভারতের একটি অন্যতম বড় তেলের ডিপো ধ্বংস করে বলেও জানান নাকভি, তবে সেখানে কোনো বেসামরিক মানুষ হতাহত হননি।
তিনি বলেন, তখনই আমরা বুঝতে পারি ঈশ্বর আমাদের সহায়তা করছেন। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির কাছের নূর খান বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ভারত। তবে হামলায় সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
নাকভি বলেন, আমাদের একটি ঘাঁটিতে ক্ষতি হয়েছিল, যেখানে বিমানবাহিনীর একজন সদস্য শহীদ হয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতি এতটুকুই ছিল। গত ৬ মে দিবাগত রাতে (৭ মে ভোররাতে) পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের চারটি স্থানে ‘জঙ্গিঘাঁটি’তে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দেয়। চার দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত ও পাকিস্তান।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধে পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে। হোয়াইট হাউসে কয়েকজন রিপাবলিকান মার্কিন আইনপ্রণেতার সঙ্গে এক ভোজের সময় ট্রাম্প এ কথা বলেছিলেন।
তবে ট্রাম্প স্পষ্ট করেননি, তিনি কোন পক্ষের যুদ্ধবিমান বোঝাচ্ছেন।
ভোরের আকাশ/তা.কা