আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৫ ০৬:৩৭ এএম
প্রকাশ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের ভারতের প্রতি অসন্তুষ্টির কারণ
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক সময়ের মধুর কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন আগের মতো নেই—এটি দিন দিন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছে। এবার সেই সম্পর্ক অবনতির কারণগুলো প্রকাশ্যে আনলেন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক।
মঙ্গলবার (৩ জুন) ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অংশীদারিত্ব ফোরামের অষ্টম সভায় ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কেন নেতিবাচক হয়ে উঠেছে, সে বিষয়ে খোলামেলা মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় ভারতের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তুলেন লাটনিক।
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর ও মজবুত হোক। কিন্তু ভারত দিন দিন যেভাবে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, বিশেষ করে সামরিক খাতে, তাতে অসন্তুষ্ট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ভারত নিয়মিত রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছে, যা আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের পরিপন্থী।”
লাটনিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত তার কাছ থেকেই প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনুক। রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনাকে তিনি ‘যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী আচরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এছাড়া, রাশিয়া ও চীনের নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিয়েও ট্রাম্প প্রশাসনের আপত্তি রয়েছে। ব্রিকস ডলারের প্রভাব হ্রাস করতে চায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
“ব্রিকস বলছে, ডলারের আধিপত্য ভেঙে দাও। এভাবে যদি কোনো দেশ কাজ করে, তাহলে সে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব আশা করতে পারে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন,” বলেন লাটনিক।
তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝি নিরসনে খোলামেলা আলোচনার বিকল্প নেই। এমনকি ভবিষ্যতে নতুন বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক জোরদারের সম্ভাবনার কথাও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ভারত সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনার সময় রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে। এই সাফল্যের ভিত্তিতে আরও এস-৪০০ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র আধুনিকায়নেও মস্কোর কারিগরি সহায়তা চায় দিল্লি।
সব মিলিয়ে সামরিক ও অর্থনৈতিক নানা বিষয়ে রাশিয়ার প্রতি ভারতের ঘনিষ্ঠতা যে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছে, সেটি এবার প্রকাশ্যেই স্বীকার করলো ট্রাম্প প্রশাসন। এখন দেখার বিষয়—এই টানাপড়েন ভবিষ্যতে দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ক কোন দিকে নিয়ে যায়।
ভোরের আকাশ//হ.ন