রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫ ০৯:৪৯ এএম
সংগৃহীত ছবি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক বর্তমানে আগের মতো উষ্ণ নয়। পুতিনের যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি না পালন এবং ইউক্রেন যুদ্ধে তার অব্যাহত অভিযান ট্রাম্পকে গভীর হতাশ করেছে। ট্রাম্প বারবার পুতিনকে যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দিয়েছেন এবং নিজের দূত স্টিভ উইটকফকে মস্কোয় পাঠিয়ে আলোচনার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পুতিন একটুও নমনীয়তা দেখাচ্ছেন না এবং যুদ্ধবিরতির কোনো ইচ্ছাও প্রকাশ করেননি।
তাদের মধ্যকার উত্তেজনা এতটা বেড়ে গেছে যে রাশিয়ার একটি ট্যাবলয়েড মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস বলেছে, দুই দেশের নেতারা একে অপরের পথে কোনও রকম সরে আসছে না, ফলে সংঘর্ষ অনিবার্য হতে পারে।
রাশিয়া ইউক্রেনের দিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে নতুন গ্রাম দখল করার খবর দিয়েছে এবং ইউক্রেন অভিযোগ করেছে রাশিয়ান শাহেদ ড্রোনে ভারতীয় উপাদান পাওয়া গেছে। ইউক্রেন এই বিষয়টি নয়াদিল্লি ও ইইউ’র কাছে উত্থাপন করেছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প ভারতের ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে, যা ক্রেমলিন কঠোরভাবে নিন্দা করেছে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, দেশগুলোর তাদের নিজস্ব বাণিজ্যিক অংশীদার বেছে নেয়ার অধিকার রয়েছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেলের পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জাম কিনে মস্কোকে ইউক্রেন যুদ্ধে সহযোগিতা করছে।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ জানিয়েছেন, ন্যাটোর রাশিয়াবিরোধী নীতির জবাবে মস্কো স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের নিষেধাজ্ঞা আর মানবে না এবং আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এই বিষয়টি যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল ও সিরিয়াস করে তুলেছে।
ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম দিকে পুতিনের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তার দূত স্টিভ উইটকফ অনেকবার মস্কো গেছেন এবং পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘসময় বৈঠক করেছেন। একবার পুতিন তিন উইটকফকে ট্রাম্পের একটি ছবি উপহার দেন, যা হোয়াইট হাউসে দেওয়ার জন্য নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কিন্তু ট্রাম্প শুধু একটি ছবি চেয়েছিলেন না, বরং চেয়েছিলেন পুতিন একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করুক। কিন্তু পুতিন যুদ্ধ জোরদারের পথেই এগোচ্ছে এবং সে কারণে ট্রাম্প ক্রমাগত হতাশ হয়ে পড়ছেন।
সম্প্রতি ট্রাম্প পুতিনকে যুদ্ধ বন্ধের জন্য ৫০ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন, পরে তা কমিয়ে ১০-১২ দিনে নামিয়েছেন। এই সময়সীমা আগামী সপ্তাহে শেষ হওয়ার কথা। তবে পুতিন থেকে কোনো নমনীয় ইঙ্গিত নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিন বিষয়টিকে মোটেই হালকাভাবে নিচ্ছেন না এবং যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন যতক্ষণ না ইউক্রেন নির্জনের পন্থায় তাদের শর্তগুলো মেনে নেয়।
শান্তির কোনো দরজা এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ট্রাম্পের দূত আবার মস্কো যাচ্ছেন এবং সম্ভাবনা রয়েছে এবার তারা যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিছু সহযোগিতামূলক প্রস্তাব দিতে পারেন।
মস্কোর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমন কোনো লাভজনক প্রস্তাব হতে পারে যা রাশিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তবে এতদিন ধরে পুতিন চিকিৎসার অটল অবস্থান বজায় রেখেছেন, তাই পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন।
একদিকে, ইউরোপের দেশগুলো যেমন নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্ক মিলে ইউক্রেনকে ৪৩০ মিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তা দিয়েছে, অন্যদিকে নেদারল্যান্ডস প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরো মার্কিন অস্ত্রদানে নিবেদিত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও রাশিয়ার ওপর বেশি চাপ দিতে মার্কিন প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই অর্থায়নকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন, যা ইউক্রেনীয় জনগণের জীবন রক্ষায় সহায়তা করবে।
সার্বিকভাবে, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে সম্পর্ক যুদ্ধ ও আঞ্চলিক রাজনীতির কারণে উত্তেজনাপূর্ণ, তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। পুতিনের দৃঢ় অচল অবস্থান এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি যুদ্ধ সংঘাতের সম্ভাবনা জোরদার করেছে, কিন্তু কূটনৈতিক সংলাপও চলছে।
ভোরের আকাশ/তাকা