আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫ ০২:০৭ এএম
টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব থাকার দাবি দুদকের
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য ও লেবার পার্টির নেতা টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে বলে দাবি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ। তবে দীর্ঘদিন ধরে টিউলিপ দাবি করে আসছেন, তাঁর বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই।
বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি প্লট নেওয়ার অভিযোগে চলতি সপ্তাহে ঢাকায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলার শুনানি চলাকালে সুলতান মাহমুদ জানান, টিউলিপ প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছেন এবং ভোটার তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। “তাঁর ঠিকানা, একাধিক পাসপোর্ট ও ভোটার তালিকার তথ্য পাওয়া গেছে, যা যথাসময়ে আদালতে উপস্থাপন করা হবে,” বলেন তিনি।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, বাংলাদেশের একাধিক দপ্তর থেকে এসব নথির অনুলিপি পাওয়া গেছে। তবে টিউলিপের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্টিফেনসন হারউড এসব নথির অস্তিত্ব অস্বীকার করে সেগুলোকে জাল বলে উল্লেখ করেছে। মুখপাত্র দাবি করেছেন, টিউলিপের কখনো জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি ছিল না এবং শৈশব থেকে কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্টও নেননি।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাগরিকত্বের প্রশ্নটি তাঁর বিচারপ্রক্রিয়াকে আইনগতভাবে প্রভাবিত নাও করতে পারে। তবে বিচার শুরুর আগে তাঁর সততা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বেআইনিভাবে সরকারি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। মামলায় তাঁর খালা শেখ হাসিনা, মা ও ভাইবোনের নামও রয়েছে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে কর্তৃত্ববাদ, নির্বাচনে কারসাজি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের আগস্টে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতির ব্যাপক তদন্ত শুরু করে।
ব্রিটিশ এমপি টিউলিপের অনুপস্থিতিতে ঢাকার আদালতে বিচার চলছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, মামলার বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি এবং প্রমাণও উপস্থাপন করেনি। এক্স-এ (সাবেক টুইটার) তিনি লেখেন, “এটি সঠিক আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং হয়রানি ও প্রহসন।”
দুদক বলছে, তাঁর ভোটার আইডি কার্ডে থাকা ঠিকানায় সমন পাঠানো হয়েছে এবং তদন্ত দলগুলো সেসব স্থানে গিয়েও নোটিশ দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনও নিশ্চিত করেছে, টিউলিপের একটি জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে, যদিও এটি সরাসরি নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না।
টিউলিপ সিদ্দিক ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের সম্পদ থেকে তিনি সুবিধা নিয়েছেন—এমন খবর প্রকাশের পর রাজনৈতিক চাপের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন।
তিনি সব ধরনের অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ‘বিরোধীদের দমন’ করছে এবং তিনি তার শিকার।
সূত্র:ফিন্যান্সিয়াল টাইমস
ভোরের আকাশ//হ.র