ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৫ ০৯:৫১ এএম
সংগৃহীত ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চাপ ও শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েনে থাকা সিনো-ভারত সম্পর্ক নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশের লক্ষ্যে ভারত পৌঁছেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
তিন বছরের বেশি সময় ধরে ভারতের কোনো রাষ্ট্রনায়ককে স্বাগত না জানানো পাবলিক কূটনীতির পিঠে সোমবার নয়াদিল্লিতে পা রাখার এই ঘটনা যুগান্তকারী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ওয়াং ইয়ের সাক্ষাৎ ও বৈঠক ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তিন দিনের কর্মসূচির মূল অংশ।
এছাড়াও, অনুমান করা হচ্ছে, এই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও তিনি বৈঠকে বসবেন, যা সিনো-ভারত সম্পর্কের পরবর্তী ধাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পটভূমি ও সফরের গুরুত্ব: ভারতের প্রধানমন্ত্রীর চলতি মাসে চীন সফরের ঘোষণা এই সফরের গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে।
এই তথ্য এনডিটিভির রিপোর্টে এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে দুই দেশের বিশেষ প্রতিনিধি দলের মধ্যে নিকট দিনে দিল্লিতে আলোচনা হবে।
এই বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, সীমান্ত বিরোধ, বাণিজ্য সহ নানা দিক থেকে ইতিবাচক অগ্রগতি নেওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যাবহুল দুটি দেশ ভারত ও চীন দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে দু’দেশের সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলশ্রুতিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ব্যাপক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সেই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল ও সমঝোতার পথে যেতে পারে বলেই আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও বাণিজ্য রাজনৈতিক চাপের কারণে বেইজিং ও নয়াদিল্লির মধ্যে নতুনভাবে সম্পর্ক মেরামতের প্রয়াস শুরু হয়েছে।
হিমালয় সীমান্তবর্তী বাণিজ্য পুনরায় শুরু হতে পারে: ওয়াং ইয়ের সফরের অন্যতম গুরুত্ব হলো, সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য পুনরায় চালু করার ব্যাপারটি আলোচনায় আনা।
বাণিজ্যের এই পুনরুজ্জীবন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করবে না, এটি দুটি দেশের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সীমান্ত এলাকার রাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সচল রাখা দুই দেশের জন্য মৈত্রী ও স্থিতিশীলতার প্রমাণ হতে পারে।
সীমান্ত বিরোধের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব: চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওয়াং ই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে ২৪তম বিশেষ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।
সীমান্তে সেনা কমানোর বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দীর্ঘদিনের উত্তেজনা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্লুমবার্গের একটি সূত্র অনুযায়ী, এই আলোচনায় বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা থেকে সীমা বলিরেখা বরাবর দুই দেশের সৈন্য সংখ্যা কমানোর দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
যদি বাস্তবে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়, তা হবে দুই দেশের মধ্যে আস্থা পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সীমান্তে শান্তি নিশ্চিত করতে পারলে বৃহত্তর অঞ্চলের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এই সফর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট বিকল্প ভেঙে চীন ও ভারতের মধ্যে নিজেদের স্বার্থ ও প্রভাব বিস্তারের কঠিন প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। তবুও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে দ্বন্দ্ব থেকে সহযোগিতায় রূপান্তরিত করার জন্য বেইজিং ও নয়াদিল্লির রাজনীতি ও কূটনীতি গতি পেয়েছে। ওয়াং ইয়ের এই সফরের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দুই দেশের বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যুতে কথোপকথন ও সমঝোতার নতুন সুযোগ আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের বিদেশমন্ত্রক ইতোমধ্যে এই বৈঠকের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নবপ্রাণ সঞ্চার ও স্থিতিশীলতা ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা প্রকাশ করেছে।
দুই দেশের কূটনৈতিক মহলের মতে, আসন্ন আলোচনাগুলো সফল হলে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও উন্নয়নে বড় ধরনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।
তীব্র চাপের মধ্যে ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের তিন দিনের দিল্লি সফর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত ও শক্ত করার প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সীমান্তে সেনা প্রত্যাহার, বাণিজ্য পুনরুজ্জীবন এবং রাজনৈতিক আস্থা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে দুই পরাশক্তির মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরে আসার আশা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশিত চীন সফরও এই প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে। এই সফর আগামী সময়ের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করতে পারে।
ভোরের আকাশ/তা.কা