ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১২:১২ পিএম
পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে সামরিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে ভারত
ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক এক প্রাণঘাতী হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত এমন দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানবিরোধী অবস্থানকে শক্তিশালী করতে সক্রিয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং সামরিক অভিযান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
কূটনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় মোদি সরকার: নিউইয়র্ক টাইমস তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সংযুক্ত চারজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২২ এপ্রিলের পর থেকে বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, মোদির এই প্রচেষ্টা শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা নয়, বরং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ। ভারতের এই কূটনৈতিক উদ্যোগ মূলত বৈশ্বিক জনমত নিজের অনুকূলে আনা এবং অভিযানের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে বলে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এদিকে দিল্লিতে সরকারি ব্রিফিংয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেননি, তবে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর নাম ঘুরেফিরে আলোচনায় এসেছে। পাশাপাশি তারা বারবার আক্রমণের ন্যায়সঙ্গত প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরছেন।
মোদির ‘সন্ত্রাসের আস্তানা ধ্বংস’-এর হুঁশিয়ারি: গত বৃহস্পতিবার একটি প্রকাশ্য সমাবেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, সন্ত্রাসের আস্তানা ধ্বংস করতে আমরা সংকল্পবদ্ধ। যদিও তিনি তার বক্তব্যে সরাসরি পাকিস্তানের নাম নেননি, তবুও পর্যবেক্ষকদের মতে, মোদির এই মন্তব্য স্পষ্টতই পাকিস্তানকেই ইঙ্গিত করে। ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে মোদি সরকার জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে। সামরিক প্রতিক্রিয়া সেই কৌশলেরই একটি অংশ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উত্তপ্ত কাশ্মীর: তল্লাশি ও ধরপাকড়: প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, হামলার পর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীর অঞ্চলে তল্লাশি অভিযান ব্যাপকভাবে জোরদার করেছে। শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, কাশ্মীরের পরিস্থিতি এখনো থমথমে। নিরাপত্তা বাহিনীর টহল বেড়েছে এবং প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চালানো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
পাকিস্তানের পাল্টা হুঁশিয়ারি: এদিকে ভারতের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও কঠোর বার্তা দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়, আমাদের থামাতে কেউ পারবে না। যদি মোদি উত্তেজনা বাড়ানোর পথ বেছে নেন, তবে আমরা তাকে তার বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করব। আসিফ অভিযোগ করেন, নরেন্দ্র মোদি অতীতে পুলওয়ামা হামলার সময়ও একই ধরনের মিথ্যা প্রচারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং এখন আবারও একই কৌশল অনুসরণ করছেন। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান যথেষ্ট সামরিক সক্ষমতা রাখে এবং প্রয়োজন হলে উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও আশঙ্কা: বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবে গভীর উদ্বেগের বিষয়। অতীতে দেখা গেছে, কাশ্মীরে সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বারবার বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলওয়ামা হামলার (২০১৯) পর বালাকোটে ভারতীয় বিমান হামলা এবং পরবর্তী পাল্টা পাকিস্তানি হামলার ঘটনা এখনো বিশ্ববাসীর স্মৃতিতে টাটকা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে কারণ উভয় দেশই ঘরোয়া রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে এবং নিজেদের শক্ত অবস্থান দেখানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো, দক্ষিণ এশিয়ায় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ আবারও ঊর্ধ্বমুখী। সামনে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন সময়ের অপেক্ষা। বিশ্ব সম্প্রদায় পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য দুই দেশের ওপর সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে, কিন্তু মাটির নিচে যেন যুদ্ধের আগুন জ্বলছে এখন শুধু অপেক্ষা কার প্রথমে আগুন ছুড়ে দেয়!
ভোরের আকাশ/এসআই
ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২১ ঘন্টা আগে
আপডেট : ২১ ঘন্টা আগে
পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে সামরিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে ভারত
ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক এক প্রাণঘাতী হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত এমন দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানবিরোধী অবস্থানকে শক্তিশালী করতে সক্রিয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং সামরিক অভিযান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
কূটনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় মোদি সরকার: নিউইয়র্ক টাইমস তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সংযুক্ত চারজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২২ এপ্রিলের পর থেকে বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, মোদির এই প্রচেষ্টা শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা নয়, বরং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ। ভারতের এই কূটনৈতিক উদ্যোগ মূলত বৈশ্বিক জনমত নিজের অনুকূলে আনা এবং অভিযানের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে বলে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এদিকে দিল্লিতে সরকারি ব্রিফিংয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেননি, তবে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর নাম ঘুরেফিরে আলোচনায় এসেছে। পাশাপাশি তারা বারবার আক্রমণের ন্যায়সঙ্গত প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরছেন।
মোদির ‘সন্ত্রাসের আস্তানা ধ্বংস’-এর হুঁশিয়ারি: গত বৃহস্পতিবার একটি প্রকাশ্য সমাবেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, সন্ত্রাসের আস্তানা ধ্বংস করতে আমরা সংকল্পবদ্ধ। যদিও তিনি তার বক্তব্যে সরাসরি পাকিস্তানের নাম নেননি, তবুও পর্যবেক্ষকদের মতে, মোদির এই মন্তব্য স্পষ্টতই পাকিস্তানকেই ইঙ্গিত করে। ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে মোদি সরকার জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে। সামরিক প্রতিক্রিয়া সেই কৌশলেরই একটি অংশ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উত্তপ্ত কাশ্মীর: তল্লাশি ও ধরপাকড়: প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, হামলার পর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীর অঞ্চলে তল্লাশি অভিযান ব্যাপকভাবে জোরদার করেছে। শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, কাশ্মীরের পরিস্থিতি এখনো থমথমে। নিরাপত্তা বাহিনীর টহল বেড়েছে এবং প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চালানো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
পাকিস্তানের পাল্টা হুঁশিয়ারি: এদিকে ভারতের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও কঠোর বার্তা দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়, আমাদের থামাতে কেউ পারবে না। যদি মোদি উত্তেজনা বাড়ানোর পথ বেছে নেন, তবে আমরা তাকে তার বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করব। আসিফ অভিযোগ করেন, নরেন্দ্র মোদি অতীতে পুলওয়ামা হামলার সময়ও একই ধরনের মিথ্যা প্রচারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং এখন আবারও একই কৌশল অনুসরণ করছেন। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান যথেষ্ট সামরিক সক্ষমতা রাখে এবং প্রয়োজন হলে উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও আশঙ্কা: বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবে গভীর উদ্বেগের বিষয়। অতীতে দেখা গেছে, কাশ্মীরে সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বারবার বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলওয়ামা হামলার (২০১৯) পর বালাকোটে ভারতীয় বিমান হামলা এবং পরবর্তী পাল্টা পাকিস্তানি হামলার ঘটনা এখনো বিশ্ববাসীর স্মৃতিতে টাটকা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে কারণ উভয় দেশই ঘরোয়া রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে এবং নিজেদের শক্ত অবস্থান দেখানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো, দক্ষিণ এশিয়ায় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ আবারও ঊর্ধ্বমুখী। সামনে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন সময়ের অপেক্ষা। বিশ্ব সম্প্রদায় পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য দুই দেশের ওপর সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে, কিন্তু মাটির নিচে যেন যুদ্ধের আগুন জ্বলছে এখন শুধু অপেক্ষা কার প্রথমে আগুন ছুড়ে দেয়!
ভোরের আকাশ/এসআই