আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৫ ০৪:০২ এএম
ইসরায়েলের দিকে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান: রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন
চলমান সংঘাতের মধ্যেই ইসরায়েলের দিকে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। বুধবার (১৮ জুন) ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে এএফপি ও বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ইরান দাবি করেছে, ‘ফাত্তাহ’ নামের নিজস্ব হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে সফলভাবে আঘাত হেনেছে। যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখন পর্যন্ত এ হামলার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
গত ১৩ জুন ইরানে আকস্মিক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল, যার পাল্টা জবাবে ইরানও ইসরায়েলের দিকে শত শত ড্রোন ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানা ছয়দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে এবং জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তেহরান ও কারাজে হামলা, ধ্বংস সেন্ট্রিফিউজ কেন্দ্র
অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড জানিয়েছে, তেহরানের উত্তরাঞ্চল ও পূর্ব শহরতলিতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং বিস্ফোরণের পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে। তেহরানের লাভিজান এলাকা, পূর্ব ও পশ্চিম অংশ এবং পাশের শহর কারাজের বিভিন্ন এলাকাও হামলার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘তাবনাক’।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের দুটি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র—টিইএসএ কারাজ এবং তেহরান রিসার্চ সেন্টার—আক্রান্ত হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কাজে ব্যবহৃত উন্নতমানের সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদনে ব্যবহৃত হতো, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে প্রয়োজন হয়।
IAEA-এর মতে, তেহরান রিসার্চ সেন্টারে একটি ভবন এবং কারাজে দুটি ভবন ধ্বংস হয়েছে, যেখানে সেন্ট্রিফিউজ রটরস ও অন্যান্য উপাদান উৎপাদন হতো। এই স্থাপনাগুলো আগে পরমাণু চুক্তির আওতায় IAEA’র পর্যবেক্ষণে ছিল।
ইসরায়েলি হামলায় তেহরানের পূর্বাঞ্চলের ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়েও হামলা হয়েছে, যা ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড কোরের (IRGC) সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিবেচিত।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টস জানিয়েছে, সংঘাতে ইরানজুড়ে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৮৫ জন নিহত ও ১,৩২৬ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৩৯ জন বেসামরিক এবং ১২৬ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
ইরান সরকারের সর্বশেষ হিসাবে, সোমবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল ২২৪ এবং আহত ১,২৭৭ জন। তবে এরপর থেকে সরকার হতাহতের বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
ভোরের আকাশ//হ.র