আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫ ০৫:৩৭ এএম
চীনা অ্যাটাক হেলিকপ্টার জেট-১০ যুক্ত হলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বহরে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হলো চীনের তৈরি সর্বাধুনিক মাল্টিরোল অ্যাটাক হেলিকপ্টার জেট-১০। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সংযোজন পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধ সক্ষমতায় বড় ধরনের অগ্রগতি এনে দেবে। পাশাপাশি, দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যেও নতুন মাত্রা যোগ করবে।
গত সপ্তাহজুড়ে পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, জেট-১০ হেলিকপ্টারগুলো মাঠপর্যায়ে ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (২ আগস্ট) মুলতান গ্যারিসনে হেলিকপ্টারগুলোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির।
এর আগে পাকিস্তানের এক সেনাসদস্য একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে দেখা যায়, একটি জেট-১০ হেলিকপ্টার সামরিক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করছে। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল: “আকাশ থেকে মাটিতে আঘাত হানতে সক্ষম পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্রসহ পাকিস্তানের জেট-১০ হেলিকপ্টার।”
এক দিন আগে ভাইরাল হওয়া এক ছবিতে দেখা যায়, হেলিকপ্টারটির গায়ে লেখা রয়েছে "Pakistan Army" এবং সিরিয়াল নম্বর ‘৭৮৬-৩০১’। এতে নিশ্চিত হয়, হেলিকপ্টারটি এখন পাকিস্তানের সক্রিয় বহরের অন্তর্ভুক্ত।
সামরিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পাকিস্তানের জেট-১০ হেলিকপ্টারগুলো চীনা সেনাবাহিনীর সংস্করণ থেকেও উন্নত। বিশেষ করে এর ইঞ্জিন, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন এই হেলিকপ্টার অস্ত্র ও জ্বালানিবোঝাই অবস্থায় টানা ৮০০ থেকে ১,১২০ কিমি পর্যন্ত উড়তে পারে। এতে রয়েছে টাইটানিয়াম ও সিরামিক কম্পোজিট আর্মার, যা প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেয়।
হেলিকপ্টারটিতে আরও রয়েছে—
AESA রাডার
মিসাইল অ্যাপ্রোচ ওয়ার্নিং সিস্টেম
ডাইরেকশনাল ইনফ্রারেড কাউন্টার মেজার
লেজার ও ইনফ্রারেড সতর্কতা প্রযুক্তি
ইনফ্রারেড সাপ্রেসর ও এক্সহস্ট মডিফায়ার
এটির ছয়টি আর্মস স্টেশন থেকে নিক্ষেপ করা যাবে ২৫ কিমি পাল্লার CM-502KG মিসাইল এবং ব্যবহৃত হচ্ছে ২৩ মিমি কামান। এসব প্রযুক্তি এটিকে মার্কিন এএইচ-১ এফ কোবরা বা তুর্কি টি-১২৯ এর চেয়েও আধুনিক করে তুলেছে।
কৌশলগত প্রতিযোগিতা আরও তীব্র
জেট-১০ সংযোজনের মাধ্যমে পাকিস্তান এক যুগান্তকারী প্রযুক্তিগত রূপান্তরের পথে এগোলো। এতদিন দেশটি মার্কিন এএইচ-১ এফ কোবরা এবং রুশ এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার ব্যবহার করত, যেগুলো আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে আর যথেষ্ট নয়।
এদিকে ভারতের প্রতিক্রিয়া থেকেও স্পষ্ট কৌশলগত উত্তেজনা বাড়ছে। গত ২২ জুলাই ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথম চালানে তিনটি এএইচ-৬৪ই অ্যাপাচি গার্ডিয়ান হেলিকপ্টার গ্রহণ করেছে, যা পশ্চিম সীমান্তে মোতায়েন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি চীনা যুদ্ধবিমান জে-১০সি নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়, যখন গত ৭ মে পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনার মধ্যে এটি একটি রাফাল ভূপাতিত করে বলে পাকিস্তান দাবি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চীন ও পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে ঘন ঘন বৈঠক শুরু হয়।
চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ঝাং ইউওক্সিয়া ২৫ জুলাই বেইজিংয়ে পাকিস্তানি সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠকে জানান, “দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের ভিত্তি হচ্ছে সামরিক সহযোগিতা। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একসঙ্গে কাজ করবে চীন ও পাকিস্তান।”
সেনাবাহিনীতে জেট-১০-এর সংযোজন পাকিস্তানকে শুধু আধুনিক প্রযুক্তিতে এক ধাপ এগিয়ে দিল না, বরং দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত রাজনীতিকেও আরও জটিল করে তুলল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভোরের আকাশ//হ.র